বাংলাদেশের ক্রিকেটের যে কয়েকজন ওপেনার ব্যাটসম্যানের আবির্ভাব হয়েছে তামিম ইকবাল তাদের মাঝে সেরা। তামিম ইকবালকে বলা হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান। তামিমের ব্যাটের দিকে তাকিয়ে থাকে ১৬ কোটি মানুষ। তামিম ইকবাল বাংলাদেশের ক্রিকেটের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি লাল-সবুজের ক্রিকেটের অটোমেটিক চয়েস।
বাবা প্রয়াত ইকবাল খান ও মা নুসরাত ইকবালের কোলকে আলোকিত করে চট্টগ্রামের কাজীর দেউরির খান পরিবারে ১৯৮৯ সালের ২০ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন তামিম ইকবাল খান। আজ তার ৩১তম জন্মদিন। চাচা বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক আকরাম খান। বড় ভাই নাফিস ইকবালও ক্রিকেটার। মানে রক্তেই মিশে আছে ক্রিকেট। ছোট থেকেই স্বপ্ন ছিল ছেলেকে ক্রিকেটার বানাবে তাই তো বড় ছেলে নাফিজ ইকবালের মতো ছোট ছেলেকেও ক্রিকেটের সাথে সম্পৃক্ত করেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ২০০৭ সালে অভিষেক হয়েছিল তরুণ তামিমের। আরও নির্দিষ্ট করে বললে ওয়ানডেতে। এসেই তাক লাগিয়ে দিলেন গোটা ক্রিকেট দুনিয়ায়। ওই বছর বিশ্বকাপে পোর্ট অব স্পেনে ফেয়ারলেস কিশোর তামিমের ৫৩ বলে ৫১ রানের ইনিংসে শচীন, গাঙ্গুলি, রাহুল ও শেবাগদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গিয়েছিল। এ যেন বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য এক অন্যরকম আগমনী বার্তা।
স্মৃতির দরজায় আজও কড়া নাড়ে ২০১০ সালে লর্ডসে খেলা তার সেই ১০৩ রানের গৌরবাজ্জ্বল ইনিংসটি। ইংরেজদের মাঠে ক্রিকেটের তীর্থভূমিতে তাদের ওপরে স্টিম রোলার চালিয়ে ৯৪ বলে তুলে নিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। ক্রিকেটের মক্কায় তৃতীয় দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি। সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে হাত উঁচিয়ে বলেছিলেন ওই ওনার্স বোর্ডে আমার নামটি লিখে রাখো।
ব্যাট হাতে নানা অর্জনে দেশকে যেমন উচ্ছাসে ভাসিয়েছেন তেমনি হতাশও করেছেন। সমালোচিত হয়েছেন খেলার ধরনে। এমনকি তাকে বাদ দিয়েও টাইগার স্কোয়াড সাজানোর পরিকল্পনার কথাও শোনা গেছে। তাতে অবশ্য একবিন্দু পিছু হটেননি। এগিয়ে গেছেন সত্যিকারের বীরের মত। ২০০৭ বিশ্বকাপে জহির খানকে যেভাবে ডাউন দ্য উইকেটে এসে ছয় মেরেছেন ঠিক সেভাবেই নিন্দুকের সমালোচনার জবাব দিয়েছেন ব্যাটে।
এরপরের বছরই (২০১১) উইজডেন ক্রিকেটার্স অ্যালমেনাক ম্যাগাজিন কর্তৃক বছরের সেরা পাঁচ ক্রিকেটারের একজন হিসেবে নির্বাচিত হন তামিম। এই খেতাব জিততে পেছনে ফেলতে হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার গ্রায়েম সোয়ান ও ভারতের বীরেন্দ্র শেবাগকে।
আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার:
২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি হারারে তে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় তামিম ইকবালের। ২০০৭ সাল থেকে এখন অবদি প্রায় ১৪ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ২০৭ ওয়ানডে। ২০৭ ওয়ানডেতে ২০৫ ইনিংস ব্যাট করে ৩৬.৭৪ গড়ে করেছেন ৭২০২ রান। ১৩ শতকের পাশাপাশি রয়েছে ৪৭ অর্ধ-শতক। যেখানে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ১৫৮ রানের একটি ইনিংস খেলেন।
২০০৮ সালের ৪ জানুয়ারি ডানেডিনে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে অভিষেক হয় তামিম ইকবালের। ২০০৮ সাল থেকে এখন অবদি প্রায় ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ৬০ টেস্ট। ৬০ টেস্টের ১১৫ ইনিংস ব্যাট করে ৩৮.৬৪ গড়ে করেছেন ৪৪০৫ রান। ৯ শতকের পাশাপাশি রয়েছে ২৭ অর্ধ-শতক। যেখানে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ২০৬ রানের একটি ইনিংস খেলেন পাকিস্তানের বিপক্ষে।
এছাড়া ৭৮ টি-টোয়েন্টি খেলে ২৪.০৮ গড়ে করেছেন ১৭৫৮ রান। যেখানে বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে রয়েছে টি-টোয়েন্টি শতক।
তামিম ইকবালের ৩১তম জন্মদিনে স্পোর্টসমেইল২৪ পরিবারের পক্ষ থেকে রইলো শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।