ভারত হারলে বাংলাদেশের মানুষ এতো খুশি কেন?

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ১০:১৫ পিএম, ১১ জুলাই ২০১৯
ভারত হারলে বাংলাদেশের মানুষ এতো খুশি কেন?

বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে ভারতের হারের পর বাংলাদেশের সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক উল্লাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে বাংলাদেশের সমর্থকদের। বাংলাদেশ আগেই টুর্নামেন্ট থেকে বাদ পড়লেও, ভারতের হার অনেক মানুষকেই আনন্দিত করেছে, যা প্রকাশ পেয়েছে তাদের সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট, কমেন্ট ও শেয়ারে।

বিবিসি বাংলা'র ওয়েবসাইটে ভারতের সেমিফাইনালে হারের খবরের নিচে রুনেট বড়ুয়া নামে একজন লিখেছেন, অহংকার পতনের মূল। প্রতিপক্ষকে সম্মান করাও খেলার অংশ, যা ভারত কখনো দেয়নি।তার কমেন্টের শেষাংশে প্রতিপক্ষকে খোঁচা দিয়ে বানানো বিজ্ঞাপণের সমালোচনাও উঠে আসে।

আজিজা আইরিন নামে অপর এক ব্যবহারকারী লিখেছেন, আমি খুব খুশী। নিউজিল্যান্ডকে অভিনন্দন।

আইশা রহমান মন্তব্য করেছেন, ভারতের দর্প ভেঙে চুরমার।

আবু সালেহ লিখেছেন, ভারতের প্রতি এদেশের মানুষের কতটা ঘৃণা সেটা তারা ক্রিকেট খেলায় পরাজিত হলে রাস্তাঘাট আর ফেসবুক দেখলে বোঝা যায়।

এভাবেই ভারতীয় ক্রিকেট টিম এবং ক্রিকেটারদের মুন্ডুপাত করে স্ট্যাটাস, কমেন্টের মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।

কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই ভারতবিদ্বেষ কি শুধুই ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে?

বিবিসি বাংলা তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক সম্পর্ক অনেকটা অপরিবর্তিত থাকলেও বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে এই ভারতবিদ্বেষের ভিত্তি ক্রিকেটের পাশাপাশি আঞ্চলিক রাজনীতিও কিছুটা ভূমিকা রেখেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ বিভাগের শিক্ষক রাজীব নন্দী মনে করেন, ক্রিকেটের হার জিতে আনন্দ ও ক্ষোভ প্রকাশের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ যেভাবে অতিরিক্ত আবেগতাড়িত হয়ে ওঠে, তা স্বাভাবিক।

তিনি বলেন, আমার মনে হয় ২২ গজের খেলার মধ্যে রাজনীতি, জাতীয়তাবাদ ও অসমাপ্ত প্রসঙ্গগুলো চলে আসা খুবই স্বাভাবিক।

উদাহরণ হিসেবে মি. নন্দী বলেন, ভারত হারলে ভারতের কাশ্মীরের স্বাধীনতাপন্থী মানুষের মধ্যে এক ধরনের আনন্দ কাজ করে, আবার বাংলাদেশ যখন ইংল্যান্ডকে চট্টগ্রাম টেস্টে হারায় তখন চট্টগ্রামের স্থানীয় পত্রিকায় বড় করে হেডলাইন হয় যে 'ব্রিটিশ বধ।' আবার অনেকে বলেন, পাকিস্তানকে বাংলাদেশ ক্রিকেটে হারালে একাত্তরের বিজয়ের আনন্দ পায়।

এই বিষয়গুলোকে সাধারণ মানুষের 'ছদ্ম বাস্তবতা' তৈরির প্রবণতা থেকে আসে বলে মনে করেন নন্দী, যেখানে বাস্তব সমস্যা সমাধান না করে জাতীয়তাবাদী বা দেশাত্মোধক চিন্তাধারা থেকে জন্ম নেয়া অপ্রয়োজনীয় আবেগকে প্রাধান্য দেয় মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোবায়েদা নাসরিনের মতে, উপমহাদেশে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি এবং ব্যবসার ক্ষেত্রে ভারতের আগ্রাসন ও আধিপত্য স্থাপনের চেষ্টার কারণেও মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধী মনোভাব তৈরি হয়েছে।

তার মতে, বিশ্বকাপে আইসিসি চায় ভারত ফাইনাল খেলুক। স্বাভাবিকভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, ভারত ফাইনাল খেললে তাদের দর্শক, বড় বড় বিজ্ঞাপন সংস্থা, সম্প্রচার স্বত্বের হিসেবে ব্যবসায়িকভাবেই লাভবান হবে আইসিসি।

রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক হিসেব ছাড়াও মনস্তাত্বিক জায়গা থেকেও বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ভারত বিরোধিতা তৈরি হওয়া স্বাভাবিক বলে মনে করেন সমাজবিজ্ঞানীরা।

নাসরিন বলেন, ঐতিহাসিকভাবে দেখতে গেলে, দ্বিজাতিতত্বের ভিত্তিতে ভারত ভাগ হওয়ার কারণে এখনও উপমহাদেশের দেশগুলোতে ধর্ম খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।তাই ধর্মকে ব্যবহার করে রাজনীতি করা বিজেপি যখন ভারতে নির্বাচনে জয়লাভ করে এবং সেখানে সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর নির্যাতন হয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতাও প্রভাবিত হয়।

সীমান্তে সংঘাত, আঞ্চলিক রাজনীতি ও ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে ভারতের আধিপত্য ও ভারতে উগ্র হিন্দুত্ববাদের ক্রমাগত উত্থানের ফলে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে অবচেতনভাবে ভারতের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জমা হয়েছে যা খেলার ফলাফলের পর প্রকাশ পায় বলে মনে করেন. নন্দী।

সামাজিক মাধ্যমে সক্রিয় থাকার কারণে মানুষের এই জাতীয়তাবাদী চেতনার বহি:প্রকাশটা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক তীব্র হয় বলে মনে করেন মি. নন্দী।

তিনি বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া হলো আগুনে ঘি ঢালার মতো। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময় গ্যাসের দাম বৃদ্ধি, শিশু নির্যাতনসহ বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে যেগুলো নিয়ে তরুণ সমাজ সামাজিক মাধ্যমে খুব একটা আলোচনা করেনি, যতটা বিশ্বকাপ সেমিফাইনালে ভারতের হার নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করেছে।



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

আর্চারের বাউন্সারে রক্ত ঝরলো ক্যারির

আর্চারের বাউন্সারে রক্ত ঝরলো ক্যারির

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ইংল্যান্ড

অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালে ইংল্যান্ড

নিষিদ্ধ হলেন আফগান ফাস্ট বোলার আফতাব আলম

নিষিদ্ধ হলেন আফগান ফাস্ট বোলার আফতাব আলম

ধোনির আউটের শোক সইতে না পেরে সমর্থকের মৃত্যু

ধোনির আউটের শোক সইতে না পেরে সমর্থকের মৃত্যু