বিশ্বকাপ ক্রিকেট নিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ধরনের কুইজের আয়োজন করলেও কুইজের আদলে ‘জুয়া’ খেলা শেখাচ্ছে চীনা স্মার্টফোন ও ট্যাবলেট প্রস্তুতকারক কোম্পানি অপ্পো। নিজেদের ফেরিফায়েড ফেসবুক পেইজেই মাধ্যমে বিভিন্ন কাল্পনিক (যা এখনো ঘটেনি) প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে টাইগার ভক্তদের আকৃষ্ট করছে তারা।
বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচকে নামনে রেখে অপ্পোর বাংলাদেশ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ‘কুইজ-৫’ নামে একটি কুইজ পোস্ট করা হয়েছে। যেখানে বলা হয়, ‘Today’s BAN vs AUS match, what will be the total number of Fours for Bangladesh team?’ অর্থাৎ, ‘বাংলাদেশ অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে বাংলাদেশ দল মোট কতটা চার মারবে?’।
কুইজ সাধারণ হয় সাধারণ জ্ঞানের মতো। অর্থাৎ- বিশ্বে ঘটেছে এমন ঘটনা জানতে প্রশ্ন করা। কিন্তু অপ্পো এ কুইজ দিয়ে জানতে চাচ্ছে কাল্পনিক বিষয়! যা এখনো ঘটেনি। আদো কতটা চার মারতে পারবে বাংলাদেশ তা কেউ জানে না। যেমনটি পাড়ার আনাচে-কানাচে ধরা বাজি বা ক্রিকেট নিয়ে বড় বড় ‘ম্যাচ ফিক্সিং’ এর মতো। অপ্পো ঠিক তেমনটাই শেখাচ্ছে নয় কি?
বাংলোদেশ-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ শুরু হওয়ার প্রায় চার ঘণ্টা আগে (বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ১১টা) অপ্পোর বাংলাদেশ ফেসবুক পেইজে পোস্ট করা ‘কুইজ-৫’-এ বলে, তাদের কাল্পনিক (বাংলাদেশ কতটি চার মারবে) উত্তর তাদের পোস্ট করা ‘কুইজ’র কমেন্টেস বক্সে লিখতে। বাংলোদেশ-অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচের প্রথম ইনিংসের আগেই এ কাল্পনিক প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। সেখান থেকে একজন সঠিক উত্তরদাতাকে পুরস্কৃত করা হবে।
অপ্পোর সেই কুইজের আদলে ‘জুয়া’ খেলা শেখানোর মতো প্রশ্নে ইতোমধ্যে (দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত) ৯৮৬ জন কমেন্টস করে তাদের কাল্পরিক উত্তর দিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে স্পোর্টসমেইল২৪ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বলেছে। জানতে চাওয়া হয়েছে এ ধরনের কুইজ সমাজে আসলে কতটা প্রভাব ফেলে। মিরপুরের বাসিন্দা একজন বেসরকারি চাকরিজীবী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে ক্রিকেট নিয়ে বড় বড় বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্রচারের জন্য এসব কাজ করে থাকে। কিন্তু তারা কি কখনো ভাবে যে, তাদের এসব কাজ থেকে ছেলে-মেয়েরা জুয়া শিখছে? মহল্লার প্রতিটি জায়গায় খেলা নিয়ে জুয়া চলে। এসব তো তারাই শেখায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘এদের আসলে আরও সাবধান হওয়া উচিত। ক্রিকেট নিয়ে জুয়া খেলায় যেখানে খুন পর্যন্ত হচ্ছে সেখানে তাদের পণ্য প্রচার বা ভক্তদের কাছে থাকতে আরও সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। তাদেরকে বুঝতে হবে, আমরা যা করছি এতে সমাজে কী ধরনের প্রভাব পড়ছে। একটি দায়িত্বশীল জায়গা থেকে এমন কাজ ঠিক নয়।’
সাংবাদিক, কবি ও কথাশিল্পী সালাহ উদ্দিন মাহমুদ এ বিষয়ে বলেন, ‘জুয়া তো বটেই। ভবিষ্যৎ বলে দেওয়া কার পক্ষে সম্ভব? তবে প্রেডিকশন বা প্রত্যাশা থাকতে পারে। খেলা শুরু হওয়ার পরে অনুমান করে অনেক কিছু বলা যায়। এটা আসলে কোম্পানির প্রচারণার ভিন্ন কৌশল।’
একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে আরও বলেন, ‘ক্রিকেট নিয়ে বিভিন্ন রকম জুয়ার প্রচলন আছে। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কি তাহলে সে পথেই হাঁটছে?’
ইয়াসিন আহমেদ নামের একজন বলেন, ‘আমার দু’জন সন্তান আছে। তারা দু’জনেই স্মার্টফোন ব্যবহার করে। কে জানে এ ধরনের কোম্পানির প্রচারের মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে আবার কবে বাজি ধরে বসে! জানেন, সত্যিই ভয় হয়! ছেলে-মেয়েদের কতই আর সতর্ক করেবেন। এসব কোম্পানির বিষয়ে সরকারের আরও কঠোর হওয়া দরকার।’
এদিকে এবার দ্বাদশ ক্রিকেট বিশ্বকাপকে দুর্নীতি মুক্ত রাখতে ভিন্ন পথ অবলম্বন করছে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।টুর্নামেন্টকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দশ দলের সাথে একজন করে দুর্নীতি বিরোধী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে।
তবে প্রশ্ন হলো- আইসিসি ক্রিকেটার ফিক্সিং বা দুর্নীতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিলেও অপ্পোর মতো হাজারও ব্যবসায়ীদের প্রচারের কারণে দেশের আনাচে-কানাচে চলা জুয়া খেলা রোধ করবে কে? বা এসব জুয়া খেলার উৎসাহদাতাদের বিরুদ্ধেই বা ব্যবস্থা নেবে কে?