রাজধানীর রায়েরবাজার ৩৪নং ওয়ার্ডের ৩ লক্ষ জনগোষ্ঠীর জন্য বৈশাখী খেলার মাঠ ছাড়া আর কোন খেলার মাঠ নেই। ওয়ার্ডের প্রায় ৩৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১২/১৪ হাজার শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশের ক্ষেত্রে এ মাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সার্বজনীন ব্যবস্থা না থাকায় ৯ থেকে ১৮ বছরের কোন কন্যা শিশু মাঠ ব্যবহার করতে পারে না।
রায়েরবাজারের এ মাঠে নারী, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি বিশেষ করে ৫ বছরের নিচের বয়সের শিশুদের মাঠ ব্যবহারের কোন সুযোগ নেই। পার্ক ও খেলার মাঠসমূহ নগরবাসীর সামাজিকীকরণ, বিনোদন, খেলাধুলা, মানসিক প্রশান্তি এবং শরীরচর্চার ক্ষেত্র। খেলার মাঠ বা পার্ক যারা ব্যবহার করে তাদের বিশেষ করে শিশুদের চাহিদাগুলো মাঠের উন্নয়নে প্রতিফলিত হওয়া প্রয়োজন।
এ প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে মাঠটিকে সকলের ব্যবহার উপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে সোমবার (১৫ অক্টোবর) ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অনুমোদন সাপেক্ষে ইউএনহ্যাবিট্যাট-এর আর্থিক সহযোগিতায় ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট কর্তৃক রায়েরবাজার বৈশাখী খেলার মাঠে শিশু অঞ্চল তৈরির কার্যক্রমের উদ্বোধন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার স্পোর্টসমেইলক২৪-কে এক সংবিাদ বিজ্ঞপ্তির মা্যেমে জানানো হয়, খেলার মাঠের বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে ছোট আকারে একটি শিশু অঞ্চল রাখা হয়েছে। শিশু অঞ্চল তৈরির নকশা প্রণয়ণে স্থানীয় এলাকার বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাথে মতবিনিময় করা হয়। এলাকাবাসীর চাহিদা অনুযায়ী শিশু অঞ্চলে দোলনা, স্লিপার, ঢেকিসহ অন্যান্য খেলার উপকরণ স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি শিশু অঞ্চলটিতে বেঞ্চ, গাছ এবং পাশের দেয়াল চিত্রকর্মের মাধ্যমে আকর্ষণীয় করা হবে। এতে করে এলাকার নারী বা বয়স্ক ব্যক্তি তাদের বাসার ছোট শিশুটিকে নিয়ে মাঠে আসতে উৎসাহিত হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. তারিক বিন ইউসুফ। তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন খেলার মাঠ এবং পার্ক সকলের উপযোগী করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যে ২২টি পার্ক ও ৪টি খেলার মাঠের ডিজাইনসহ উন্নয়নের কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে রায়েরবাজার বৈশাখী খেলার মাঠ অন্যতম।
তিনি আরও বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে মাঠে শিশু অঞ্চলের কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অতিদ্রুত আমরা মাঠের বাকি কাজ সম্পূর্ণ করে সবার উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলব।
ইউএনহ্যাবিট্যাট-এর কো-অডিনেটর মো. সোহেল রানা বলেন, ইউএনহ্যাবিট্যাট গ্লোবাল পাবলিক প্লেস প্রোগ্রামের আওতায় আমরা গণপরিসর সবার উপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে সহযোগীতা করে থাকি। এলাকাবাসী তাদের খেলার মাঠ এবং পার্ক কিভাবে দেখতে চায় তাদের চাওয়াটা মাইনক্রাফ্ট খেলার মাধ্যমে আমরা নকশা প্রণয়ন করি এবং পরিবর্তীতে সেই অনুযায়ী আমরা উন্নয়ন কাজক্রম পরিচালনা করে থাকি।
ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট-এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, আমাদের শহরের খেলার মাঠ ও পার্কগুলো শিশুবান্ধব করা প্রয়োজন। যেখানে শিশুরা বাধাহীনভাবে খেলতে পারবে। এ ক্ষেত্রে রায়েরবাজার বৈশাখী খেলার মাঠের শিশু অঞ্চলটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে এবং অন্যান্য খেলার মাঠ ও পার্ক উন্নয়নে এ নকশাটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ৩৪নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. রবিউল আলম বলেন, বর্তমানে আমাদের ছেলে-মেয়েরা খেলাধুলার মাধ্যমে বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশকে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এ জন্য খেলার মাঠের গুরুত্ব অপরিসীম। আজ থেকে রায়েরবাজার এ মাঠটি সকলের উপযোগী হিসেবে গড়ে তোলার কাজ শুরু হলো। মাঠে শিশু অঞ্চলের কার্যক্রম সমাপ্ত হলে এলাকার ছোট ছোট শিশুরা ব্যবহার করতে পারবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক নূরুল হক মন্ডল, রায়েরবাজার এলাকার ৫টি বিদ্যালয়ের (আলী হোসেন বালিকা বিদ্যালয়, রায়েরবাজার হাই স্কুল, ধানমন্ডি কচিকণ্ঠ হাই স্কুল, ঢাকা আইডিয়াল ক্যাডেট স্কুল এবং আলিফ আইডিয়াল পাবলিক স্কুল) শিক্ষক- শিক্ষার্থী এবং এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।