২০০৯ সাল থেকে ক্রীড়া জগতে রাশিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করে আসছেন আলেকজান্ডার লেসুন। দেশটির হয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে জিতেছেন ১৪টি মেডেল, যার মধ্যে রয়েছে চারটি স্বর্ণ। অথচ রাশিয়ান এ অ্যাথলেট এখন যুদ্ধাক্রান্ত ইউক্রেনের সমর্থক। রাশিয়া সর্বদা হৃদয়ে প্রিয় হলেও ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে দেশটির হয়ে আর প্রতিনিধিত্ব না করার ঘোষণা দিয়েছেন। জানিয়েছেন, রাশিয়ার হামলা তাকে মর্মাহত করেছে।
ইউক্রেনে হামলা শুরু হওয়ার দু’দিনের মাথায় রাশিয়ার হয়ে আর প্রতিনিধিত্ব না করার ঘোষণা দেন আলেকজান্ডার লেসুন। গণমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমি কেমন বোধ করছি -এ সাক্ষাৎকারে আমি সত্য শব্দ ব্যবহার করতে পারি? আমি যে খুবই হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমি বুঝতে পেরেছি যে, এ বিশ্ব আর কখনো একই থাকবে না।”
১৯৮৮ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নে জন্মগ্রহণ করা আলেকজান্ডার লেসুনের জন্মস্থান সম্পর্কে তেমন কিছুই মনে নেই। তার বয়স যখন মাত্র এক বছর তখনই ভেঙে যায় পুরো সোভিয়েত ইউনিয়ন। না হলে হয়তো, বিংশ শতাব্দীতে বেলারুশে বেড়ে ওঠা ছেলেটির সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রীড়ায় অতীত সাফল্য দেখে অনুপ্রাণিত হতো।
লেসুনের সামনে সবচেয়ে বড় সুযোগ আসে ২০০৯ সালে। সামনে আসা বড় সুযোগটাও তিনি লুফে নেন দু’হাতে। রাশিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পেয়ে চলে যান। তার দাদিও সেখানেই বসবাস করেন। এছাড়া রাশিয়াকে প্রতিনিধিত্ব করতেও গর্ববোধ করতেন তিনি। তবে এখন থেকে তিনি আর রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করবেন না।
৩৩ বছর বয়সী এ অ্যাথলেট বলেন, “আমি রাশিয়ান পতাকার নিচে প্রতিনিধিত্ব করতে গর্ববোধ করতাম। আমার দাদিও একজন রাশিয়ান। আমার অনেক আত্মীয় রয়েছে রাশিয়ায়। রাশিয়া সর্বদাই আমার হৃদয়ের প্রিয়, খুবই শক্তিশালী অনুভূতি। আমি রাশিয়ার রাজিনীতি বা আর্মি নিয়ে কথা বলছি না, আমি কথা বলছি রাশিয়ার সাধারণ মানুষদের নিয়ে। আমি কথা বলছি রাশিয়ার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে। আমি সর্বদাই এটার সাথে যুক্ত।”
রাশিয়ার হয়ে ১৪টি বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ মেডেল জিতেছেন আলেকজান্ডার লেসুন, যার মধ্যে চারটিই স্বর্ণ। অথচ সেই লেসুন চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে জানিয়ে দিয়েছেন, আর কখনোই রাশিয়ার হয়ে প্রতিযোগিতায় অংশ নিবেন না। বরং খেলাধুলার সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত নয়, এমন অন্য কোনো চাকরিতে যোগ দিবেন।
রাশিয়ান অন্য অ্যাথলেট বা ক্রীড়া তারকাদের মধ্যে অনেকেই ইউক্রেনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। যুদ্ধ চান না বলে বিবৃতি বা মন্তব্য করলেও রাশিয়ার হয়ে আর কখনো খেলবেন না -এমন কথা কেউ বলেননি। তবে এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম উদাহরণ সৃষ্টি করলেন লেসুন। সরাসরি ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে রাশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করা থেকেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
ছোটবেলা থেকে অলিম্পিকে স্বর্ণ জয়ের স্বপ্ন দেখা লেসুনের কলিজা কত বড়, সেটার প্রমাণও দিলেন তিনি। মারিয়া শারাপোভা-সহ বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ টেনিস তারকারা শুধুমাত্র বিবৃতি দিলেও ইউক্রেনের জনগণের প্রতি সহমর্মিতা জানিয়ে লেসুন বিসর্জন দিয়েছেন নিজের ক্যারিয়ার।
রাশিয়ার হয়ে আর প্রতিনিধিত্ব না করা মানে লুসেনের অবসরই নেওয়া। যদিও চলতি বছরের জুলাইয়ে ৩৪ বছরে পা দেওয়া লুসেনের অবসরের সময়ও আসন্ন। এছাড়া বর্তমান সময়ে অন্য কোথা থেকে তার হাতে কোন অফারও নেই। তবে বিষয়টি নিয়ে চিন্তিত নন লুসেন। বরং তিনি আশা করছেন, অন্যরা তার কাজকে (ইউক্রেনকে সমর্থন) অনুসরণ করবে।
লুসেন মনে করেন, ক্রীড়াবিদরা প্রচারের দুর্দান্ত হাতিয়ার। তবে তারা (ক্রীড়াবিদরা) বুঝতে চান না যে, তাদের নেওয়া সিদ্ধান্ত কী প্রভাব ফেলবে। একই সাথে লেসুন দুঃখ প্রকাশ করেন যে, রাশিয়ান ক্রীড়াবিদরা পরিস্থিতিকে খুব বেশি প্রভাবিত করতে পারেন না।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস