দীর্ঘ ২৭ বছর পর দেশে ফিরেছেন বাংলাদেশ ফুটবলের কিংবদন্তী এনায়েতুর রহমান। দেশের সর্বকালের অন্যতম সেরা এ ফুটবলারকে ঘিরে ‘বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন-বিএসজেএ’ আয়োজন করেছিল ‘কিংবদন্তির সঙ্গে’ শিরোনামে এক আলোচনা অনুষ্ঠান।
শনিবার (১১ ডিসেম্বর) বিএসজেএ’র কার্যালয়ে ক্রীড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে আড্ডায় ছিলেন স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা। জাকারিয়া পিন্টু, সারোয়ার টিপু, প্রতাপ শঙ্কর হাজরা, আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, খুরশিদ বাবুল, আব্দুল গাফফার- শেখ আসলামদের আলোচনায় জীবন্ত হয়ে ফুটে ওঠে পুরোনো দিনের সোনালী ফুটবলের সময়।
কিংবদন্তী সব ফুটবলাররা একে অন্যের প্রসংশায় ছিলেন বিনয়ী। এনায়েতুর রহমানের মতো গুণী ফুটবলের কাজে লাগানোর তাগিদ ওঠে আসে। যাকে ঘিরে আয়োজন সেই এনায়েতুরই ছিলেন সবচেয়ে বিনয়ী। তার সময়ের সেরা খেলোয়াড়দের প্রসংশা করেই নিজেকে আড়াল রাখার চেষ্টা করেন।
টিপু-সান্টুদের সামনে নিজেকে সামান্য ফুটবলার হিসেবে বার বার নিজেকে দাবি করে গেছেন। এনায়েতুর রহমান বলেন, ‘আমি খুবই সাধারণ একজন খেলোয়াড়। আপনাদের এ ভালোবাসায় আমি মুগ্ধ। বিএসজেএ’র শুরু থেকেই আমি ছিলাম। এখানে যারা আছে তারা সবাই অনেক বড় মাপের ফুটবলার। বিশেষ করে আসলাম। অনেকের অনেক গোল আছে কিন্তু আসলামের গোলগুলো বিশেষ। কারণ তার গোলে দল জিতেছে অধিকাংশ সময়।’
তিনি আরও বলেন, ‘খুরশিদ বাবুল অত্যন্ত পরিশ্রমী ফুটবলার। চুন্নুও দারুণ কুশলী ফুটবলার। অনেকে আমাকে ভালো খেলোয়াড় বলে কিন্তু আমার চেয়ে অনেক ভালো খেলোয়াড় সান্টু, মঞ্জু। তারা দেশে থাকতে পারলো না। দেশে সম্মান ও মূল্যায়ন না পেয়ে বিদেশে..। ফলে অনেক বাবা-মাই তার সন্তানকে ফুটবলের দিকে দিতে চায় না।’
সাবেক ফুটবলার গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘এখনকার ফুটবলারদের রানিং, পাসিং অনেক কিন্তু তারা মেধাশূন্য্য। আর মেধা ও সাহসী খেলোয়াড় ছিলেন এনায়েত।’
আব্দুল গাফ্ফার বলেন, ‘এনায়েত ভাই বিদেশে যাওয়ার পর আমি অনেকভাবে এনায়েত ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। দেশের জন্য তার প্রয়োজনীয়তা অনেক। অনেক অনুরোধ করে তাকে দেশে আনা হয়েছে। বিদেশে যাওয়ার পর তাকে আমি অনেক বলেছি, দেশে আসতে হবে, মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম উঠাতে হবে। উনি বার বার বলেছেন, এগুলো করে কী হবে। দীর্ঘদিন ধরে তাকে অনেক উদ্ভুদ্ধ করে দেশে এনেছি। তাকে দেশের ফুটবলে অনেক প্রয়োজন।’
আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, ‘একজন কিংবদন্তি খেলোয়াড় যিনি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন! আপনারা স্বাধীন বাংলার ফুটবলাররা যা করেছেন সেটা সারা বিশ্বে কেউই করেননি। আমরা যদি এ দেশে ফুটবলে কিছু না দিয়ে যেতে পারি তাহলে খুবই অন্যয় কিছু হবে।’
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি বলেন, ‘দেশের ফুটবলের জন্য আপনারা এখনও দিক নির্দেশনা দেন। এখনও আমরা অপানাদের সঙ্গে আছি।’
সিনিয়র ক্রীড়া সংবাদিক মোহাম্মদ কামুরুজ্জামান বলেন, ‘সর্বকালের সেরা খেলোয়াড়দের একজন এনায়েত। এনায়েতের মতো বল প্লে-মেকার আমি আর দেখিনি। ২-৩ জনকে কাটিয়ে গোল দিত। দুই পায়েই রকেটের মতো চলতো। ঢাকার ফুটবল দেখছি ১৯৫০ সাল থেকে। এনায়েত দেশের ফুটবলের বড় অলংকার ছিলেন।’
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মাঝে সাবেক ফুটবলার শেখ আশরাফ আলী, হাসানউজ্জামান খান বাবলু, ওয়াসিম ইকবাল, ইমতিয়াতজ সুলতান জনি, আব্দুস সালাম, খন্দকার রকিবুল ইসলাম, মো. হাসান, মো. মালা, সংগঠক সৈয়দ সুজাউদ্দিন আহমেদ, ফজলুর রহমান বাবুল, রফিকুল ইসলাম টিপু, ইউসুফ আলী, মঞ্জুরুল হক, সৈয়দ সাইদুর রহমান শামীম, উৎপল শুভ্র, মো. আল আমিন উপস্থিত ছিলেন।
পুরো অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন বিএসজেএ’র সভাপতি এটিএম সাঈদুজ্জামান। এছাড়া অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনের দায়িত্বে ছিলেন সিনিয়র ক্রীড়া সংবাদিক দিলু খন্দকার। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিকে ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্টল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]