আসসালামু আলাইকুম।
আমি আজ আবারও ময়মনসিংহ সার্কিট হাউস মাঠ নিয়ে আপনাদের সামনে কিছু বলতে চাই। প্রথমেই আমি সাধুবাদ জানাতে চাই সেই সকল ক্রীড়ানুরাগী কর্মকর্তাদের, যারা ময়মনসিংহের এই ঐতিহ্যবাহী মাঠের সংস্কারের চিন্তা মাথায় এনেছেন। তবে তাদের মাঠ সংস্কারের এই প্রক্রিয়া বা পরিকল্পনাকে ভিন্নভাবে করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
যেহেতু এই মাঠের প্রাধান্য খেলাধুলা, তাই সেই বিষয়টিকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় নিয়ে এই মাঠের উন্নয়নে কী কী সংস্কার প্রয়োজন তা অবশ্যই আলোচনার দাবি রাখে। মাঠ সংস্কারের পাশাপাশি একই সাথে এই ঐতিহ্যবাহী মাঠের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য (Natural Beauty)-কে সমুন্নত রাখাও একটি প্রধান বিষয় বলে আমি মনে করি। ময়মনসিংহের ক্রিকেটের একটা গৌরবময় ঐতিহ্য আছে।
আশির দশকের স্বনামধন্য ক্রিকেটার রামচাঁদ গোয়ালা’দা থেকে শুরু করে গত শতকের শেষ দুই দশক এবং চলমান শতাব্দীর প্রথম দুই দশকে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসের অনেক জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক তারকা ক্রিকেটার এই জেলা থেকে ওঠে এসেছেন। দেশের ক্রিকেটের পালাবদলের সময়ের ক্রিকেটাররা ছাড়াও আমিসহ আরও কয়েকজন ক্রিকেটার টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে।
বর্তমানের ক্রিকেট সুপারস্টার ও জাতীয় টি-টোয়েণ্টি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ্ রিয়াদ এবং ময়মনসিংহ থেকে জাতীয় দলের সর্বশেষ সদস্য মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত এই জেলার গৌরবময় ক্রিকেটের উত্তরাধিকার। এই জেলার কৃতি ক্রিকেটারদের সার্বিক উত্থানের পেছনে ময়মনসিংহবাসীর ক্রিকেট প্রেম এবং এই সার্কিট হাউস মাঠের ভূমিকা অগ্রগণ্য বলেই সবাই মেনে নেবেন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য হিসেবে আমিসহ অন্যদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। আমার নিজেরও ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, সাউথ আফ্রিকাসহ সকল টেস্ট প্লেয়িং দেশের নামকরা ক্রিকেট মাঠ দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আমরা কেউ কোনদিন দেখিনি এসব দেশের খেলার মাঠের পাশ দিয়ে পায়ে হাঁটার পথ (Public Walkway) বা কোন ধরনের দেয়াল বেস্টনী, যা বাস্তবে একইসঙ্গে নিরাপত্তা বিঘ্নকারী এবং বিপদজনকও বটে।
সার্কিট হাউজ মাঠ সংস্কারের ধারাবাহিকতায় এ ধরনের কোন হাঁটার পথ তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। আমাদের এই মাঠকে ক্রিকেট খেলার সর্বোচ্চ মানের উপযোগী করে তোলার জন্য আমরা যারা এই মাঠে খেলে ক্রিকেট ভালোবেসেছি, কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিগত লক্ষ্যে পৌঁছেছি, তাদের পক্ষ থেকে আমার বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি কিছু বিষয়ে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষন ও যৌক্তিক প্রস্তাবনা রাখতে চাই।
মাঠ ও খেলাধুলার উন্নয়নে প্রথমেই দরকার মাঠের যুগোপযোগী সংস্কার। মাঠের সংস্কারের প্রথমেই থাকতে হবে মাঠের আধুনিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা (Water drainage system)। যাতে অল্প বৃষ্টিতেই মাঠের খেলা বন্ধ না হয়ে যায়। ক্রিকেটের জন্য মাঠে উন্নতমানের কমপক্ষে ৩/৪টি উইকেট তৈরি করতে হবে। থাকতে হবে আধুনিক রোলার ও পিচ কভারের ব্যবস্থা। একই সাথে মাঠের বাইরে ছেলে ও মেয়ে উভয়েরই জন্য অনুশীলনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসহ উইকেট রাখা।
আমাদের এই মাঠের পাশে একটি ইনডোর রয়েছে, যেটি প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে খেলোয়ারদের সারাবছর অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দেওয়া। বর্তমান সময়ে খেলোয়াড়দের শারীরিক সক্ষমতার উন্নতিতে জিম এর বিকল্প নেই। তাই একটি অত্যাধুনিক জিম সুবিধার ব্যবস্থা রাখা সময়ের চলমান দাবি বলেই মনে করি। আর যে বিষয়টিকে অবশ্যই আমলে আনতে হবে তা হলো- সকল আধুনিক মাঠে খেলোয়াড় ও ম্যাচ অফিসিয়ালদের ড্রেসিং রুম প্রয়োজন। তাই এই মাঠেও সে রকম সুবিধা তৈরি করার কোনো বিকল্প আছে বলে আমার মনে হয় না।
সার্কিট হাউস মাঠের সংস্কারে এসব ব্যবস্থাগ্রহণ এবং মাঠের নানাবিধ উন্নয়নের পাশাপাশি ময়মনসিংহের ক্রীড়া ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য অতি অবশ্যই প্রথম ও দ্বিতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগসহ বিভিন্ন টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে এসব টুর্নামেন্ট চলতে থাকলে আমরা মাহমুদউল্লাহ্ বা মোসাদ্দেকের মতো জাতীয় তারকা আবার তৈরি করতে পারবো।
প্রয়োজনে আমরা আমাদের পরামর্শের মাধ্যমে সর্বদাই আপনাদের পাশে থাকবো। একটি সর্বাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন মাঠ খেলাধুলার প্রতি জেলার শিশু কিশোরদের আগ্রহ যে বাড়িয়ে দেবে তা বলাই বাহুল্য। আর তাহলেই ময়মনসিংহবাসী তথা দেশবাসী আপনাদের এই সংস্কার পরিকল্পনাকে সম্মানের সাথে স্মরণ রাখবে।
সানোয়ার হোসেন
সাবেক ক্রিকেটার, বাংলাদেশ জাতীয় দল
১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন দলের গর্বিত সদস্য।
[স্পোর্টমেইল২৪.কমে সকল মতামত লেখকের নিজস্ব। এর জন্য কর্তৃপক্ষ কোন দায় বহন করবে না। চাইলে আপনিও খেলাধুলার যেকোন বিষয় নিয়ে আপনার চিন্তা, যুক্তি বা মতামত লিখতে পারেন। আমরা আপনার মতামত তুলে ধরবো আমাদের পোর্টালে। লেখা পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়- sportsmailinfo@gmail.com]