সাকিব আল হাসান, বিশ্বে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় পোস্টার বা বিজ্ঞাপন। বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডারের মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) ছিল জন্মদিন। জীবনের ৩২টি বসন্ত অতিক্রম করে পা রেখেছেন ৩৩ বছরে। তবে এমন জন্মদিন সাকিব আল হাসান আর হয়তো কোনদিন চাইবেন না।
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের থাবা পড়েছে ক্রীড়াঙ্গনেও। একে একে বন্ধ হয়ে গেছে ক্রিকেট ফুটবল টেনিসসহ সকল ক্রীড়া ইভেন্ট। সর্বশেষ সাকিবের জন্মদিনেই জাপানের প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন টোকিও অলিম্পিকও এক বছর পর অনুষ্ঠিত হবে।
ক্রীড়াঙ্গনে এমন পরিস্থিতি অতীত ইতিহাসে আর হয়তো দেখেনি কেউ। হঠাৎ এ পরিস্থিতিতে অঘোষিত ছুটি কাটাচ্ছেন ক্রীড়া তারকারা। ঘরের মাঝে বা বাড়িতে নির্দিষ্ট জায়গায় অনুশীলনের মাঝে নিজেদের ফিট রাখছেন। এ ক্ষেত্রে সাকিব অবশ্য ভিন্ন। কারণ, তিনি ২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর থেকেই ক্রিকেটের বাহিরে রয়েছে।
ভারতীয় এক জুয়াড়ির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলেও তথ্য গোপন করার অপরাধে আইসিসি তাকে দুই বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যদিও নিষেধাজ্ঞার এক বছর স্থগিত রাখা হয়েছে। সেই হিসেবে সাজার সব শর্ত মেনে চললে চলতি বছরে অর্থাৎ ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর থেকে মাঠে ফিরতে পারবেন সাকিব।
নিষেধাজ্ঞার মধ্যে থাকায় ব্যাট-বল থেকে দূরে থাকলেও বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যস্ত রয়েছেন সাকিব। এছাড়া নিজেকে সময় দেওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্য নিয়েও ঘুরে বেড়াচ্ছেন দেশ-বিদেশে। তেমনি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে থাকা স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ের কাছে ছুটে গেছেন সাকিব। তবে সেখানে গিয়ে পড়েছেন ভিন্ন বিপাকে। স্ত্রী-মেয়ের সাথে দেখা তো দূরের কথা, বন্দী রয়েছে হোটেল কক্ষে।
বন্দী থাকার কারণ সাকিব আল হাসান নিজেই জানিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পরায় সেচ্ছায় কোয়ারেন্টিন পালন করছেন সাকিব। কারণ, দীর্ঘ বিমান জার্নিতে কে জানে, হয়তো করোনাভাইরাসের সংস্পর্শেও আসতে পারেন বিশ্বসেরা এ অলরাউন্ডার। আর সে জন্যই পরিবারের সদস্যদের কোন প্রকার ঝুঁকিতে না ফেলতে ১৪ দিন হোটেল কক্ষেই পালন করছেন কোয়ারেন্টিন।
সাকিব আল হাসান কোয়ারেন্টিন পালন করে একদিকে যেমন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তেমনি দেশে ফেরত আসা প্রবাসীদের বার্তাও দিয়েছেন। যেন তারাও দেশে ফিরে বাধ্যতামূলকভাবে এ নিয়ম মেনে চলেন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে হোটেল কক্ষে সাকিবের কোয়ারেন্টিন পালন করার মধ্যেই চলে গেলে তার ৩৩তম জন্মদিন। ঘরবন্দি সাকিব আল হাসানের জন্মদিনে হয়তো কেকও কাটা হয়নি (সোশ্যাল মিডিয়া বা কোথাও কেকের ছবি প্রকাশ হয়নি)। একদিকে ক্রিকেট থেকে দূরে অন্যদিকে ঘরবন্দি সাকিব আল হাসান। জীবনে হয়তো কখনো এমন জন্মদিন আর পালন করেননি সাকিব। আর হয়তো এমনটা কখনো প্রত্যাশাও করেন না তিনি।
যে সাকিব আল হাসান ক্রিকেটে থাকলে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও (বিসিবি) হয়তো কেক কাটতেন। যদিও করোনার দাপটে বন্দ রয়েছে বিসিবির অফিসিয়াল কর্মযজ্ঞ। যে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে এমন দিনে পরিবারের সবাই মেতে থাকতেন। তবে এমন দিনে বিশেষ করে একমাত্র মেয়ে আলাইনাও তার কাছে নেই।
তবে সাকিবের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সবাই। মাশরাফি-তামিম-মুশফিক থেকে শুরু করে টাইগার সতীর্থরা সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় সাকিব আল হাসানকে জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তবুও এমন জন্মদিন কারো প্রত্যাশা নয়।
সাকিবও নিশ্চিয় চাইবেন না এমন দিন আরও আসুক। ভক্তকূলও নিশ্চয় চাইবে না এমন দিন আর দেখতে। তারা চাইবেন আবারও খেলায় মেতে উঠুন সাকিব আল হাসান, জয়ের হাসি হাসুক বাংলাদেশ। আর ২০২১ সালে ঠিক এই দিনটিতে (২৪ মার্চ) মিরপুরের মাঠেই কেক কেটে পালন করা হোক সাকিব আল হাসানের জন্মদিন।