বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোন দলকে তিন সংস্করণেই ধবলধোলাই করলো। এর আগে পাকিস্তান সফরে গিয়ে বাংলাদেশ খালি হাতেই ফিরেছিল। ভারত সফরে মাত্র একটি টি-টোয়েন্টি জিততে পেরেছিল। বিশ্বকাপ শেষে শ্রীলঙ্কা সফরেও হেরেছিল সব ম্যাচ। মূলত বিশ্বকাপের পর থেকেই বাংলাদেশ খুব বাজে সময় পার করছিল। কিন্তু জিম্বাবয়ের বিপক্ষে এ সিরিজে এক অন্য বাংলাদেশই দেখা গেল!
জিম্বাবুয়েকে বাংলাদেশ হোয়াইটওয়াশ করেছে। এটাও যেমন একটা প্রাপ্তি, তেমনি এ সিরিজ থেকে রয়েছে আরও একগাধা রেকর্ড। জিম্বাবুয়ের এ দলের ব্যাটিং, বোলিং অনেক দুর্বল- এটা ঠিক। কিন্তু এ দুর্বল দলের বিপক্ষেও এভাবে জয়লাভ অবশ্যই বিশেষ কিছু। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সবগুলো জয়ের ব্যবধান দেখলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।
একমাত্র টেস্ট : ইনিংস ও ১০৬ রানে বাংলাদেশের জয়
প্রথম ওয়ানডে : ১৬৯ রানে জয়
দ্বিতীয় ওয়ানডে : ৪ রানে জয়
তৃতীয় ওয়ানডে : ১২৩ রানে জয়।
প্রথম টি-টোয়েন্টি : ৪৮ রানে জয়
দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি : ৯ উইকেটে জয়।
দ্বিতীয় ওয়ানডে ম্যাচটিতেও বিশাল রানে জয়ের সম্ভাবনা ছিল। জিম্বাবুয়ের ৩২৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ২২৫ রানেই ৭ উইকেট হারিয়ে বসে। তবে সেখান থেকে বোলার তিরিপানো ২৮ বলে ৫৫ রান করে খেলা নিয়ে যান শেষ বল পর্যন্ত। অথচ এর আগে তিরিপানোর সর্বোচ্চ রান ছিল ২১।
ওয়ানডেতে সিরিজের সবগুলো ম্যাচেই কিন্তু বাংলাদেশ ৩শ’ রান পার করেছে। তৃতীয় ওয়ানডেতে ৭ ওভার কম খেলেও ৩২২ রান করেছিল বাংলাদেশ। এ সিরিজের আগে বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ৩শ’র অধিক রান করেছে মাত্র ২ বার। যেখানে জিম্বাবুয়ে করেছে ৬ বার।
২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে একটি ইনিংসেও বাংলাদেশ তিন শতাধিক রান করতে পারেনি। একই বছর ত্রিদেশীয় সিরিজে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুটি ম্যাচে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ স্কোর ছিল ২১৬/৯।
জিম্বাবুয়ের সাথে এভাবে দাপটের সঙ্গেই সবগুলো ম্যাচ জয় অবশ্যই বড় কিছু। এ জয়ে আত্মবিশ্বাসের স্তর অনেকটাই ওপরে চলে যাবে বাংলাদেশের। আর সেই আত্মবিশ্বাসকেই কাজে লাগিয়ে যদি পাকিস্তান সফরে জয় পাওয়া যায় তবেই জয়গুলো সার্থক। অবশ্য এমনিতেও জয়গুলো সার্থকতা রয়েছে, জয় তো জয়ই!
আরে ভাই, জিম্বাবুয়ের সঙ্গে জিতে কী হবে? বড় কোন দলের সঙ্গে তো আর জিতে নাই! জিম্বাবুয়ে বড় দল না, এ সফরে জিম্বাবুয়ে ভালো ক্রিকেটও খেলেনি। তবে এ জিম্বাবুয়ের সঙ্গেই বাংলাদেশ হেরেছিল ২০১৮ সালে সিলেট টেস্টে, ১৫১ রানে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে যেকোন দলের ভালো দিনে সে দল জিততে পারে। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে? জিম্বাবুয়ে ভালো খেলেছিল বলেই বাংলাদেশকে হারাতে পেরেছে। এ টেস্ট সিরিজের আগে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজ জিততে পারেনি, এর আগেরটাতেও পারেনি। দুটি সিরিজই ড্র হয়েছিল। সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতেছিল ২০১৪ সালে, ৩-০ ব্যবধানে। আর ২০১৩ সালে ৩৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ।
জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্টে এখন পর্যন্ত চারবার হোয়াইটওয়াশের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ, সবগুলোই ২০১২ সালের আগে। ২০১১ ও ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের কাছে ওয়ানডে সিরিজেও হারে বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে এ সিরিজের পূর্বে মাত্র একবারই জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ, তিনবার করেছিল ড্র।
তখনকার জিম্বাবুয়ে আর বর্তমান জিম্বাবুয়ের মাঝে অনেক পার্থক্য। আর তখনকার বাংলাদেশের সঙ্গেও এখনকার বাংলাদেশেরও তো অনেক পার্থক্য। বাংলাদেশ কিছুটা হলেও উন্নতি করেছে, আর জিম্বাবুয়ের তো অবনতি হচ্ছেই।
ভিন্ন লিটন
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এ সিরিজের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মনে হয় লিটন দাসের ফর্মে ফেরা। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে লিটন দাসের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৩ ম্যাচে রান ছিল ৭৬৮। আর এ সিরিজে ৩ ম্যাচেই করেছেন ৩১১ রান।
টেস্টে মুশফিকের ডাবল সেঞ্চুরি, ওয়ানডেতে তামিম ইকবালের টানা দুই সেঞ্চুরি, টেস্টে নাঈম হাসানের ৫ উইকেটের মাইলফলক। এছাড়া প্রাপ্তির ঝুড়িতে জমা পড়েছে আরও অনেক রেকর্ড।
এ সিরিজে যত রেকর্ড
> তামিম-লিটনের ওপেনিংয়ে সর্বোচ্চ রানের জুটির রেকর্ড
> যেকোন উইকেটে তামিম-লিটনের সর্বোচ্চ রানের জুটি
> বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিকের তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরি
> ওয়ানডে ক্রিকেটে লিটন দাসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রান (১৭৬)
> জিম্বাবুয়ের সাথে টানা ১৬ ওয়ানডেতে অপরাজিত
> বিশ্বের দ্বিতীয় দল হিসেবে ৩ ম্যাচের সিরিজের সব ম্যাচেই ৩২০+ রান করেছে বাংলাদেশ, এর আগে করেছিল ইংল্যান্ড
> প্রথমবারের মতো ৩ ম্যাচের কোন সিরিজে দুই ব্যাটসম্যান ৩০০+ রান করেছেন (লিটন-৩১২, তামিম-৩১১)।
লেখক : রিফাত বিন জামাল, শিক্ষার্থী
মেইল : rifatbj36@gmail.com
[স্পোর্টমেইল২৪.কমে সকল মতামত লেখকের নিজস্ব। এর জন্য কর্তৃপক্ষ কোন দায় বহন করবে না। চাইলে আপনিও খেলাধুলার যেকোন বিষয় নিয়ে আপনার চিন্তা, যুক্তি বা মতামত লিখতে পারেন। আমরা আপনার মতামত তুলে ধরবো আমাদের পোর্টালে। লেখা পাঠাতে পারেন এই ঠিকানায়- sportsmailinfo@gmail.com]