দুই ম্যাচে পরাজয়ে মনোবলে ভাঙন ধরেছিল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটা জয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর দরকার ছিল খুব। কিন্তু সেই ম্যাচ মাঠেই গড়ালো না এবারের বিশ্বকাপে ভিলেন হয়ে দেখা দেওয়া বৃষ্টির কারণে।
পরিত্যাক্ত ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট নিয়েই শান্ত থাকতে হলো। তবে হতাশা কাটছিল না বাংলাদেশ দলের। ম্যাচ না খেলতে পারার হতাশা সরাসরিই প্রকাশ করেছিলেন টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মর্তুজা।
এরপর সবাই তাকিয়ে ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১৭ জুনের (সোমবার) ম্যাচটির দিকে। বিশ্বকাপে বলা চলে বাংলাদেশের টিকে থাকার ম্যাচ ছিল এটি। কিন্তু পেসার নির্ভর বোলিং আক্রমণ আর গেইল-রাসেলদের মতো দানবীয় ব্যাটসম্যানের দলটির সঙ্গে জয়ের স্বপ্নটাও অনেকটা ফ্যাকাশে ছিল। শেষ পর্যন্ত সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ও লিটন দাসের যোগ্য সমর্থনে ৭ উইকেটের জয় ছিনিয়ে আনলো বাংলাদেশ৷
ইংল্যান্ড-ওয়েলসের নীল আসমানে এখন চলছে লাল সবুজের উৎসব। স্বয়ং আইসিসি থেকে শুরু করে সবাই মেতেছেন বল হাতে সাকিব আল হাসানের দুই উইকেট ও ব্যাট হাতে ১২৪ রানের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স নিয়ে। আলোচনায় আসছে লিটনের ৯৪ রানের ঝড়ো ইনিংসও।
তবে আজ অসাধারণ বোলিং ও কৌশলী নেতৃত্ব দিয়ে আবারও প্রশংসায় ভাসছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। অথচ এ ম্যাচ চলাকালীন সময়েও তাকে নিয়ে সমালোচনার অন্ত ছিল না। এবারের বিশ্বকাপের শুরু থেকেই তার পারফরম্যান্স খানিকটা অনুজ্জ্বল। সে নিয়েই উত্তেজনা তার ‘হেটার’দের মধ্যে। মাশরাফি ক্যাপ্টেন কোটায় খেলেন, এমপি কোটায় খেলেন দাবি করে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ার প্রশ্ন তুলেছে অনেকেই। এসব অবান্তর সমালোচনার জবাবে মুখ খুলেছেন দেশের সেরা ওপেনার তামিম ইকবাল।
তবে মাঠেই সব সমালোচনার জবাব দিলেন মাশরাফি নিজেই। তাই সাকিব আর লিটন বন্দনার এ দিনে খানিকটা ক্যাপ্টেনের কথা বলা যায়! ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টসে জিতে ফিল্ডিং নেওয়ার পরই তাকে নিয়ে ট্রল আর বিরক্তি প্রকাশের শুরু। অতি উৎসাহী কিছু অনলাইন পোর্টাল নিউজও করে ফেলেছে মাশরাফির ভুল সিদ্ধান্ত দাবি করে।
এসব স্বঘোষিত ‘গবেষক’রা হয়তো জানেও না যে ব্যাটিং বা ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত একা ক্যাপ্টেন নেন না। এটা টিম ওয়ার্ক! তবু আজ (সোমবার) যদি ম্যাচ হারতো সব দায় গিয়ে পড়তো ‘ল্যাংড়া’ কিংবা ‘এমপি কোটা’ অথবা ‘ক্যাপ্টেন কোটা’র মাশরাফির ওপর।
অথচ সময়ের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান ক্রিস গেইলের বিরুদ্ধে প্রথম ওভার করতে গিয়ে মেডেন নিয়ে দারুণ একটা সূচনা দিয়েছেন মাশরাফি। ৮ ওভার বল করে দিয়েছেন ৩৭ রান। যেটা ৭ ওভারে ২২ ছিল। পুরো ম্যাচেই বিচক্ষণতার সাথে বোলার বদলেছেন মারমুখী ক্যারিবিয়ানদের সামনে।
আর দলীয় পেসারদের মধ্যে চার ম্যাচে অন্য দুই পেসার সাইফুদ্দিন ওয়াইড দিয়েছেন ১৩টি, মোস্তাফিজ দিয়েছেন ১২টি। সেখানে মাশরাফির নেই ১টিও। আছে কেবলমাত্র একটা নো বল ডেলিভারি।
তারপরও যারা মাশরাফিকে বাদ দিয়ে আবেগের ঠ্যালায় বাংলাদেশের একাদশ সাজাতে চান তাদের লজ্জা পাওয়া উচিত। তামিম-সাকিব বা অন্য সেরা তারকা খেলোয়ারটি না থাকলেও ম্যাচ জিতে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু সর্বশেষ মাশরাফিকে ছাড়া কবে জয় পেয়েছে টাইগাররা সেটা খুঁজতে গেলে হয়তো গোয়েন্দা নিয়োগ দিতে হবে।
একজন মানুষ, যিনি দিনের পর দিন জয়ের জন্য লড়াই করে যান হাঁটুতে একাধিক অস্ত্রোপচার নিয়ে, তাকে তো বীর বলা উচিত। ক্রিকেট বিশ্বের নামী দামি সব মানুষেরা মাশরাফিকে তাই বলে। বিশ্বকাপ শুরুর আগ মুহূর্তেই তো ভারতীয় কয়েকজন গ্রেট ক্রিকেটার মাশরাফিকে বর্তমানে এশিয়ার সেরা অধিনায়ক হিসেবে দাবি করলেন। তার নেতৃত্ব আর লড়াকু খেলোয়ারি স্বভাবে মুগ্ধ আইসিসি, বিরাট কোহলিরা।
মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে গর্ববোধ করেন তামিম, সাকিব, মুশফিক, মোস্তাফিজেরা। অথচ এ দেশের কিছু মানুষ রাজনৈতিক ভাবনায় তার পেছনে লেগে থাকছেন, তার ভুল পেলেও সমালোচনা করছেন, না পেলেও তাকে ট্রল আর অপমান করে চলেছেন। আমাদের সবার বোধোদয় হোক। ক্রিকেটের মাশরাফি বাংলাদেশের আশির্বাদ ও গর্ব।
লেখক : লিমন আহমেদ, সাংবাদিক
জাতীয় কিংবা আন্তর্জাতিক যে কোন খেলাধুলার বিষয়ে আপনিও লিখতে পারেন। আপনার মতামত আমরা গুরুত্বসহকারে প্রকাশ করবো। মতামতের সঙ্গে লেখকের পূর্ণাঙ্গ পরিচয় বাধ্যতামূলক। লেখা পাঠানোর ঠিকানা- sportsmailinfo@gmail.com