বিশ্বকাপে শোচনীয় ব্যর্থতা। ব্যাটে-বলে হতশ্রী পারফরম্যান্স। অংশগ্রহণকারী দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরাজয়। ভেতরে-বাইরে তুমুল সমালোচনা। তবে সব ঝেড়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঘরের মাঠে সিরিজ দিয়ে নতুন স্বপ্ন, নতুন আশায় পথচলা শুরু করবে বাংলাদেশ -এমনটাই আশা। কিন্তু কী হলো এটা! পাকিস্তানের বিপক্ষে এ কেমন টি-টোয়েন্টি দল পেলাম আমরা?
পাকিস্তনের বিপক্ষে টাইগারদের স্কোয়াড জেনে গেছে সবাই, তারপরও এখানে উল্লেখ করছি। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের নেতৃত্বে দলে আছেন- সাইফ হাসান, মোহাম্মদ নাঈম শেখ, নাজমুল হোসেন শান্ত, আফিফ হোসেন, নুরুল হাসান সোহান, শেখ মেহেদি হাসান, আমিনুল ইসলাম বিপ্লব, শামীম হোসেন পাটোয়ারি, মোস্তাফিজুর রহমান, ইয়াসির আলী চৌধুরী, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, তাসকিন আহমেদ, শহিদুল ইসলাম এবং আকবর আলি।
বাংলাদেশের দলে প্রথমবারের মতো সুযোগ হয়েছে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক আকবর আলির। টেস্টে অভিষিক্ত সাইফ হাসান এই প্রথম সীমিত সংস্করণে ডাক পেলেন। ইয়াসির, শহিদুলের আন্তর্জাতিক অভিষেক এখনও বাকি।
চোটের কারণে বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়েছেন সাকিব আল হাসান ও মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন। তামিম ইকবালও চোটগ্রস্ত; যদিও তিনি বিশ্বকাপের দলে ছিলেন না। আর নির্বাচকরা বলছেন, মুশফিকুর রহিমকে ‘বিশ্রাম’ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্বকাপের দল থেকে বাদ পড়েছেন লিটন কুমার দাস, সৌম্য সরকার ও রুবেল হোসেন।
এবার দল নিয়ে একটু আলোচনা করা যাক। রুবেল হোসেনকে বিশ্বকাপের আগে শেষ মুহূর্তে দলে ব্যাকআপ হিসেবে রাখা হয়। পরে সাইফউদ্দিনের ইনজুরিতে মূল দলে ঢুকেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপে মোস্তাফিজের খারাপ করে যাওয়ার মধ্যেও একাদশে সুযোগ হয়নি এ পেসারের।
বিশ্বকাপে না খেললেও একাদশে থাকা রুবেল এবার ঘরের মাঠে সিরিজেই নেই! কিসের ভিত্তিতে তাকে বিশ্বকাপের দলে নেওয়া হলো আবার কেনই বা এখন বাদ দেওয়া হলো? রুবেলের দোষটা কোথায়? উত্তর নেই!
আরও পড়ুন> পাকিস্তান সিরিজে বাংলাদেশ স্কোয়াডে ছয় পরিবর্তন
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে ব্যর্থদের তালিকায় শীর্ষে ছিলেন আফিফ হোসেন এবং নুরুল হাসান সোহান। ৮ ম্যাচে আফিফের রান মাত্র ৫৪! যেখানে গড় ৭.৭১, স্ট্রাইক রেট ১০৮!
নুরুল হাসান সোহানের অবস্থাও ছিল তথৈবচ। ৫ ম্যাচে করেছেন ২১ রান! গড় আর স্ট্রাইক রেট নিয়ে কথা না বলাই ভালো!
এমন পারফরম্যান্সের পর দুনিয়ার আর কোনো দলে কেউ সুযোগ পায় কি-না জানা নেই। চরম ব্যর্থ আফিফ আর সোহান যদি সুযোগ পেতে পারেন, তাহলে তাদের চেয়ে ভালো করা লিটন কুমার দাস কেন বাদ পড়লেন? লিটন ৮ ম্যাচে ১৩৩ রান করেছেন ১৬.৬২ গড়ে। তার স্ট্রাইক রেটও সোহানের চেয়ে ভালো ছিল। সৌম্য সরকার ৪ ম্যাচে করেছেন ২৭ রান। অর্থাৎ, সোহানের চেয়ে ‘ভালো’ করেছেন! তাহলে লিটন আর সৌম্য শুধু বাদ কেন?
লিটন আর সৌম্য যে পারফরম্যান্স করেছেন, তা অপ্রত্যাশিত। এমনিতে তাদের বাদ পড়া নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু তাদের চেয়েও ব্যর্থ হওয়ার পরও কিংবা তাদের মতোই পারফরম্যান্স করার পরও কেন আফিফ ও সোহান দলে টিকে গেলেন?
মোস্তাফিজুর রহমান টানা খেলার মধ্যে আছেন। আইপিএল শেষ করেই বিশ্বকাপ খেলেছেন। ক্লান্ত কি-না কে জানে? কারণ, দলের প্রত্যাশা মেটাতে পারেননি এ বাঁহাতি পেসার। ৭ ম্যাচে ২৪ ওভার বল করে উইকেট পেয়েছেন ৮টি। তাও তুলনামূলক দুর্বল ওমানের বিপক্ষে ৪ উইকেট পেয়েছেন বলে।
এছাড়া স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে নিয়েছিলেন ২ উইকেট। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২ উইকেট নিতে খরচ করেন ৪৩ রান! সেদিন শেষ ওভারে উদারহস্তে ফিজ রান না দিলে ম্যাচটি জিততেও পারতো বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে ওভারপ্রতি ৯.২৫ রান করে গুনেছেন তিনি!
আরও পড়ুন> প্রথমবারের মতো জাতীয় দলে আকবর আলি
এমন ক্লান্ত, হতশ্রী মোস্তাফিজকে এই সিরিজে বিশ্রাম দেওয়াই যেত। সামনে অনেক ম্যাচ, সিরিজ আছে। উজ্জীবিত মোস্তাফিজকে তো দলের জন্যই জরুরি। নির্বাচকরা চাইলেই মোস্তাফিজকে বিশ্রামে রেখে রুবেল হোসেনকে খেলাতে পারতেন। কিন্তু কোন অদ্ভুত যুক্তিতে তারা তা করলেন না, কে জানে!
সাইফ হাসানকে বয়সভিত্তিক ক্রিকেট থেকেই বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচের উপযোগি বলে ভাবা হয়েছে। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে পাঁচটি টেস্টও খেলেছেন। যদিও হয়েছেন ব্যর্থ। ১৪.১১ গড়ে করেছেন ১২৭ রান। কোন ফিফটিও নেই তার।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে আহামরি কোনো পারফরম্যান্স নেই সাইফের। বিভিন্ন সময়ে ঘরোয়া যেসব টি-টোয়েন্টি খেলেছেন, সেখানে ২৮ ম্যাচে ২৮.৪১ গড়ে ও ১১৫.৫৯ স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৬৮২ রান। এই পারফরম্যান্স নিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন লড়াইয়ে কী করবেন সাইফ? ঘরোয়া বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ভালো করা আর আন্তর্জাতিক ময়দানের তফাৎ তো ইতোমধ্যেই টের পেয়েছেন এই তরুণ।
অথচ সাইফের বদলে পারভেজ হোসেন ইমন হতে পারতেন বেটার চয়েস। আগ্রাসী মনোভাব, শট খেলার সাহস, স্ট্রোক মেকিংয়ে সাইফের চেয়ে ইমন যথেষ্ট ভালো বলেই তো জানতাম! সাইফ যে একেবারেই খারাপ চয়েস তা নয়; বরঞ্চ এই তরুণ সুযোগ পেয়েছেন, কাজে লাগাতেও পারেন। কিন্তু তুলনামূলকভাবে ইমনকে একটা সুযোগ দেওয়া যেত।
আরও পড়ুন> টেস্ট বিবেচনাতেই টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে নেই মুশফিক
দলের সবচেয়ে বড় ভরাস সাকিব আল হাসান নেই। যার ব্যাট-বলের দিকে উন্মুখ হয়ে চেয়ে থাকে বাংলাদেশ। নেই আরেক অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনও। এ দুই অলরাউন্ডারের শূন্যতা পূরণ কী হলো ঘোষিত দলে? দেখি না তো! শেখ মেহেদি হাসান আছেন। কিন্তু তার ওপর কী প্রত্যাশাটা বেশি হয়ে যাচ্ছে না? চাইলেই একজন জেনুইন অলরাউন্ডারকে দলে ডাকতে পারতেন নির্বাচকরা।
আকবর আলিকে দলে ডাকা হয়েছে। দলে উইকেটকিপার সোহানের বিকল্প ভেবেই তাকে রাখা। নির্বাচকরাও সে কথাই বলেছেন। তাকে নাকি ‘ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করার জন্য’ দলে রাখা হয়েছে। এবং মূল কিপার ইনজুরিতে পড়লে তবেই সুযোগ হবে আকবরের! বিষয়টা দ্বিচারিতা মনে হচ্ছে না? একদিকে বলছেন, ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করা হবে। আরেকদিকে বলে দিচ্ছেন, মূল কিপার ইনজুরিতে পড়লে আকবরের সুযোগ নেই! ম্যাচ না খেলেই ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবেন আকবর আলি?
বিশ্বকাপের বড় ব্যর্থতার পর দলে ইতিবাচক প্রত্যাশার পারদ ক্রমেই বাড়ছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশা যে আপাতত পূরণ হয়নি ক্রিকেটপ্রেমীদের, তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় দেখেই স্পষ্ট। তবে সবকিছুর উর্ধ্বে আমাদের প্রত্যাশা দল ভালো করুন।
লেখক : ক্রীড়ালেখক ও সাংবাদিক
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস
[আমরা এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ইনস্ট্রল করুন আমাদের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল অ্যাপস ]