“তাসকিন এর বিয়ে এবং তার বৌয়ের ব্যাপারে যারা নেতিবাচক সমালোচনা করছেন লেখাটা তাদের জন্য।”
তাসকিন গতকাল তার ৭ বছরের সম্পর্ককে বিয়েতে রুপ দেয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বেশ নেতিবাচক সমালোচনা দেখছি। সাধারনত যে কোন ব্যাপারে আমি প্রতিক্রিয়া কম দেখাই তবে এবার আর কিছু না বলে থাকতে পারছি না।
সাকিব, তামিম, মুশফিক, আমি, বা তাসকিন বিয়ে করার করার পর প্রতিবারেই আমাদের শুনতে হয় অমুক ক্রিকেটারের বৌ বুড়া, তমুক ক্রিকেটারের বৌ মোটা, অমুক ক্রিকেটারের বৌ নাক ভোচা, ইত্যাদি ইত্যাদি। তাসকিন ও রেহাই পেলোনা। তাসকিন কেন অল্প বয়সেই বিয়ে করল, তার বৌ কেন সুন্দরী না, দাত বের করে কেন হাসে এসব কমেন্ট আর স্ট্যাটাসে ফেসবুক ভরে গেছে। সাথে তাসকিন কে নিয়ে ১৮ + বাজে ট্রল ও দেখেছি অনেক।
আচ্ছা সংসারটা তাসকিন তার পছন্দ করা বৌয়ের সাথে করবে। সেখানে তার বৌ সুন্দরী না দাত বের করে হাসে এটা বলার আপনি কে? সংসার তাসকিন করবে, আপনি নন। তাসকিন যদি তার বৌয়ের সাথে সুখী থাকে তাহলে সেখানে নাক গলানোর আপনি কে? এই অধিকার কোথায় পেয়েছেন? মানছি আমরা পাবলিক ফিগার, কিন্তু তাই বলে আমরা আপনাদের আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে হস্তক্ষেপ করার অধিকার দিয়ে দেইনি।
আমাদের পেশা ক্রিকেট খেলা। দর্শক হিসেবে আমাদের খেলা নিয়ে আপনি গঠনমূলক সমালোচনা করতেই পারেন, কিন্তু আমি কি খাব, কোন ড্রেস পড়ব, কাকে বিয়ে করব এসব নিশ্চয়েই আপনি ঠিক করে দিতে পারেননা। কার বৌ মোটা, কার বৌ বুড়ি, কার বৌয়ের দাত উচু এসব নিচু মানের কমেন্ট আর স্ট্যাটাস দেয়ার আগে নিজেকে আয়নায় দেখেছেন তো?
তাসকিন কেন ২২ বছর বয়সে বিয়ে করল এটা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই অনেকের। সেকি কোন খারাপ কাজ করেছে? না করেনি, বরং ৭ বছরের প্রেম কে বিয়েতে স্বীকৃতি দিয়েছে। তারকা হওয়ার আগে থেকেই কিন্তু নাঈমার সাথে তাসকিনের রিলেশন। তারকা হওয়ার পর ও যে সে মেয়েটিকে ভুলে অন্য কেউ কে বিয়ে করেনি এজন্য তাসকিন বরং বাহবা পেতে পারে।
বলবেন বিয়েটা তাড়াতাড়ি করা হয়ে গেছে?
তাসকিন এর বাবা মায়ের চেয়ে নিশ্চয়েই আপনারা আপন নন। তাদের সম্মতিতেই বিয়েটা হয়েছে এবং তারা মনে করেছে এটাই ছেলের বিয়ের উপযুক্ত সময় তাহলে সমস্যা কি? এটা নিয়ে যদি নেতিবাচক সমালোচনা করেন তাহলে বলতেই হচ্ছে মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি।
একজন সাধারন মানুষের সাথে আমাদের মিডিয়ার মানুষের অনেক পার্থক্য। কোথাও যাওয়ার আগে, কিছু বলার আগে আমাদের দশবার ভাবতে হয়। স্টারডামের কারনেই সব কথা খোলাখুলি বলা যায়না।এসব কারনে সবকিছু মেইনটেইন করতে গিয়ে কখন যে আমরা একা হয়ে যাই নিজেরাই টের পাইনা। এই সময় পাশে কেউকে দরকার হয়, যে কিনা সব সময় আগলে রাখবে।
তারকাখ্যাতির কারনে প্রতিদিন আমাদের মেয়ে ভক্তদের থেকে অসংখ্য প্রেম আর বিয়ের প্রস্তাব পেতে হয়। সবসময় নিজেদের সামলে রাখা কিন্তু কষ্টের, কারন দিনশেষে আমাদের পরিচয় তারকা নয়, বরং রক্ত মাংসের মানুষ। সেখানে তাসকিন ছেলেটা সব উপেক্ষা করে তার সম্পর্কটা কিন্তু ৭ বছরে টেনে নিয়ে গেছে। নিজের বান্ধবীকে ভুলে আপনাদের কথা অনুযায়ী কিন্তু নাঈমার চেয়ে সুন্দরী মেয়েকে বিয়ে করেনি। যদি করত আপনারাই বলতেন তাসকিন প্রতারক।
সমস্যা কি জানেন আমরা সুন্দরের ব্যাখ্যাটাই জানিনা। সুন্দর মানে এখনো আমাদের কাছে শারীরিক সৌন্দর্য। সুন্দর মানে গায়ের রং ফর্সা হতে হবে, সুন্দর চোখ, নাক, গাল, ঠোট, হাসি হতে হবে। অথচ মনের সৌন্দর্য যে আসল সৌন্দর্য তা তলিয়ে দেখছি না।
৭ টা বছর তারা প্রেম করেছে, এরপর তাদের মনে হয়েছে এখন এক ছাদের নিচে থাকা যায় আর আপনারা খুজে বেড়াচ্ছেন মেয়েটি দাত ভালোনা, হাসি সুন্দর না ইত্যাদি নিয়ে। বাহ কি মানসিকতা। অন্যে সুন্দর কিনা সেটা খুজে বেড়াচ্ছেন ? স্যরি টু সে...এসব যারা বলে বেড়াচ্ছেন আপনারাই বরং সুন্দর নন। কেন জানেন? আপনারা নিচু মানসিকতার মানুষ। আর কেউ যদি নিচু মানসিকতার মানুষ হয়, তিনি যতোই শারীরিক ভাবে সুন্দর হোন না কেন তাকে আমার অসুন্দরই মনে হবে।
পাবলিক ফিগার হিসেবে এই ধরনের কড়া কথা কখনেই বলিনি, আজ বিরক্ত হয়ে বলতে বাধ্য হলাম। আর এভাবে বলার জন্য একটুও অনুতপ্ত নই। কারন যা বলেছি মন থেকে বলেছি, বিশ্বাস থেকে বলেছি।
লেখাটি মোহাম্মদ আশরাফুলের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া