করোনাভাইরাসের কারণে স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছে গোটা বিশ্ব। প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের কারণে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক ক্রীড়া ইভেন্ট। বাংলাদেশও সকল খেলাধুলা স্থগিত করা হয়েছে।
খেলাধুলা বন্ধ হলেও বসে নেই তারকা ক্রীড়াবিদরা। নিজের ফিটনেস ধরে রাখতে অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। তেমনি নিজের ফিটনেস ঠিক রাখতে বুধবার (১৮ মার্চ) মিরপুরের একাডেমিতে এসেছিলেন টাইগার পেসার মোস্তাফিজুর রহমান। সেখানেই জিমে ঢোকার মুহূর্তে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। জানান, বিসিবির লাল বলের চুক্তি থেকে বাদ পড়লেও সব ফরম্যাটে নিজেকে আবারও উপযুক্ত করে গড়ে তুলতে চান।
প্রশ্ন : খেলা বন্ধ, কীভাবে কী করছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান : রানিং টানিংগুলো করতে হবে। অন্য কিছু করতে হলে তো অন্তত ৪-৫ জন লাগে। বোলিং ব্যাটিং, ব্যাটিং তো আসলে করি না, বোলিং করতে হলেও তো কাউকে লাগবে। চেষ্টা করব রানিং, কিছু ব্যায়াম আছে ওসব করে ফিটনেসের কাজটা করব।
প্রশ্ন : বাড়ি যাবেন কি না, যদি সত্যি অনেক দিন খেলা বন্ধ থাকে?
মোস্তাফিজুর রহমান : এখনো বলতে পারছি না। বাবা-মা আছে তো, সব যদি ঠিক থাকে যাব।
প্রশ্ন : বাড়ি গিয়ে ফিটনেস নিয়ে কাজ করা যাবে?
মোস্তাফিজুর রহমান : যাবে না কেন? মাঠ নাই? আছে তো।
প্রশ্ন : ভেতরে বল ঢুকানো নিয়ে কাজ করেছেন শুনলাম, কী অবস্থা মনে হচ্ছে?
মোস্তাফিজুর রহমান : আমার কাছে ভালোই মনে হচ্ছে। জিম্বাবুয়ে সিরিজে দুটো ওয়ানডে খেলছি, দুটো টি-টোয়েন্টি খেলছি। বিশেষ করে ওয়ানডে দুটিতে সময় পাওয়া গেছে। প্রথম থেকেই চেষ্টা করছি বল ভেতরের ঢোকানোর। পুরোপুরি না হলেও অল্প দুই একটা বল ভালো হয়েছে। একদিনেই তো সব ঠিক হয়ে যায় না, দু’সপ্তাহ এ নিয়ে কাজ করেছি। আশা করি আস্তে আস্তে যত সময় যাবে তত ভালো হবে, ইনশা আল্লাহ।
প্রশ্ন : কার সাথে কাজ করেছেন? খুব সহজ কোন কৌশল দেখয়েছে না কি কঠিন?
মোস্তাফিজুর রহমান : ওটিস গিবসনের (পেস বোলিং কোচ) সাথে। বেশি ও রকম কিছু না। শুধু একটা গ্রিপ দেখিয়ে দিছে, হাতের কিছু কাজ। কব্জিটা ঠিক রাখার জন্য, কঠিন কিছু না।
প্রশ্ন : লাল বলে ফিরতে পারেন কবে?
মোস্তাফিজুর রহমান : হাত ভালো ঘুরলে।
প্রশ্ন : কী এমন পরিবর্তন যে আগের মোস্তাফিজ হারিয়ে গেল?
মোস্তাফিজুর রহমান : নতুন একটা জিনিস এক রকম। আর এখন আমার সম্পর্কে জানা, সবাই জানে। প্রথম প্রথম ওতো ওভাবে আমার সম্পর্কে জানতো না, এখন আগে যে রকম সহজে উইকেট পেতাম সেটা আমার জন্য কঠিন হয়েছে।
প্রশ্ন : আপনি কি শুধু সাদা বলে খেলতে চান?
মোস্তাফিজুর রহমান : আমি সব বলে খেলতে চাই।
প্রশ্ন : কাটার কাজ করছে না, কোথায় সমস্যা হচ্ছে?
মোস্তাফিজুর রহমান : পরিবর্তন হয়নি। এখনো পর্যন্ত দেশে খেলা হলে আমার বলের গ্রিপ ভালোই হয়। বাইরে তো এমন আহামরি হয় না। দুই-তিনটা জিনিস আমি চেষ্টা করতেছি। যেমন- ইয়র্কারটা আমি আগের মত আত্মবিশ্বাস পাই না। চেষ্টা করতেছি যে, কী করলে আমার ভালো জায়গায় হবে। কাটারটা তো আছে, আর ভেতরে ঢুকানো।
প্রশ্ন : দেশের বাইরে না কি দেশে আপনার জন্য ভালো?
মোস্তাফিজুর রহমান : কিছু কিছু উইকেট আছে যে, আপনি দেখলে বুঝবেন ৩৫০ রান হবে। এখন আরেকটা মনে করেন ২৫০ রান হবে। আমার জন্য ২৫০ রানেরটা ভালো হবে। কিছু কিছু সময় ভালো খারাপ থাকতেই পারে, আমার পছন্দের উইকেট থাকতেই পারে। উত্থান পতন থাকবেই ক্রিকেটে। এটাই মেনে নিতে হবে। যদি মেনে নিতে না পারে তাহলে সে বড় খেলোয়াড় হতে পারবে না।
আমার মনে হয় কিছু জায়গায় সমস্যা হচ্ছিল। এখন আবার কিছুটা ভালো হচ্ছে । আসলে আত্মবিশ্বাস পাচ্ছি না। আরও অনুশীলন করতে হবে। আমার মনে হয় সার্জারির পর হাতটা একটু পরিবর্তন হয়েছে, আহামরি কোন পরিবর্তন নয়। ওটা ঠিক হয়ে যাবে।
প্রশ্ন : ডেল স্টেইন, মিচেল স্টার্করা ফ্রি সময়ে নিজেদের ভিডিও দেখে গবেষণা করেন, আপনি করেন?
মোস্তাফিজুর রহমান : আমি দেখি আমার পুরাতন ভিডিওগুলো। কী করলে কী হয়। আরও অনেকের কথা শুনি। মাঝে অনুর্ধ্ব-১৯ এর একজনের কথা শুনলাম নেটে বল করার সময়। ও বলল যে, সাইড থেকে স্লোয়ার করার সময় ভাই আপনার ওপর থেকে হলে ভালো হয়। সুতরাং আমারও ভালো লাগছে যে, ও একটা ভালো কথা বলছে।
প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন আপনাকে বিশ্রাম দিয়ে খেলানো উচিত?
মোস্তাফিজুর রহমান : টানা তো সবার জন্যই কষ্ট, শুধু আমি বোলার জন্য না, ব্যাটসম্যানের জন্যও কষ্ট। এখন আমাদের লোকাল খেলা বাড়ানো দরকার, তাহলে স্কিল বাড়বে।
প্রশ্ন : ভিডিও দেখা নিয়ে আলাদা কিছু?
মোস্তাফিজুর রহমান : এটাতো এমন নয় যে, আপনি একদিন কাজ করলেন একদিন ফ্রি। আমার তো ম্যাচও খেলতে হচ্ছে, পাশাপাশি অনুশীলন। আলাদা ভিডিও করা লাগতেছে না। ম্যাচের ভিডিওটা আমার কাছে প্রতিদিন আসছে।
প্রশ্ন : একসময় আপনাকে ছাড়া বাংলাদেশ দল ভাবা যেত না, এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। কী শিক্ষা পেলেন?
মোস্তাফিজুর রহমান : আমার জন্য ভালো, আমার আরও উন্নতির জায়গা আছে এটা বুঝতেছি। এটা আমার শিক্ষা যে, আমি এখন যোগ্য না। সুতরাং আমাকে আরও কাজ করতে হবে, প্রমাণ করতে হবে।
প্রশ্ন : শুরুর সময়টায় দারুণ ছন্দে ছিল, যশ খ্যাতি, আইপিএলে সাফল্য। এখন এসব কিছুটা কমেছে। খারাপ লাগে?
মোস্তাফিজুর রহমান : কষ্ট দেয় আর কি। চলতেছে চলুক। না ও রকম আহামরি না। কিছু না কিছু তো দেশের জন্য করছি। এখন অনেকে অনেকভাবে নেয়। মাঝে মাঝে অনেক সাংবাদিকরাও বাজে বাজে কথা বলে। সমস্যা নাই। আমি চেষ্টা করছি যে, কী করলে আরও ভালো জায়গায় যেতে পারব। শুধু আমার জন্য না। আমি একটু ভালো করলে দেশের জন্যই ভালো, উপকার হবে।
প্রশ্ন : মোস্তাফিজ এখন কার?
মোস্তাফিজুর রহমান : এখন তো দেশের, মানুষের, সবার।
প্রশ্ন : অনূর্ধ্ব-১৯ দলের শরিফুলরা ভালো খেলছে। আপনার জন্য চাপ কি না?
মোস্তাফিজুর রহমান : আমরা তো আজীবন খেলব না। আমি ২১ বছর বয়সে ঢুকছি। এখন শরিফুলের বয়স ১৯। আরও দুই বছর যদি খেলি সাত বছর হয়ে যাবে আমার জাতীয় দলের ক্যারিয়ার। মানে পেছনে তো আসা লাগবে কারও। আমাদের জন্য তো ভালো। এখন আমার কথা হলো, ওপরে একটা গোল আছে যে কে থাকবে। যে ভালো করবে সে থাকবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাটা সবাইকে দিয়ে যদি ভালো হয়, সবার জন্যই ভালো। আমিও চাইব ভালো করতে, অন্যরাও চাইবে ভালো করতে।
প্রশ্ন : বিশ্বের অনেক ক্রিকেটারই কম পড়াশোনা নিয়ে জাতীয় দলে আসেন, সময়ের সাথে বদলে যায়। শুরুতে ইংরেজি না পারলেও পরে বেশ ভালোভাবে রপ্ত করেন। আপনি মোস্তাফিজ সেভাবে পারছেন না?
মোস্তাফিজুর রহমান : আমি বাংলায় বলি। আমি যেভাবে আছি এভাবে থাকতে ভালোবাসি। অন্য কারা কী করে আমি জানি না। আমার ভালো লাগে। আমি বাংলায় কথা বলতে পারি, এটা আমার মা শিখিয়েছে।
প্রশ্ন : বোলার অধিনায়ক ছিল, এখন তো ব্যাটসম্যান অধিনায়ক। বোলার অধিনায়ক থাকলে কতটা সুবিধা হয়?
মোস্তাফিজুর রহমান : আমাকে দিয়ে ভাই (মাশরাফি) ভরসা পাইতো।
প্রশ্ন : তামিম কি বুঝবেন আপনার ভালো-মন্দ?
মোস্তাফিজুর রহমান : আমি যে সময় থেকে আছি, তামিম ভাইও আছেন, দেখতেছেন তো। বুঝবেন না কেন? বোঝার কথা। ওইটা একটা দুইটা ম্যাচ গেলে আমার মনে হয় সমস্যা হবে না। ভাইও (তামিম) তো দেখেছেন আমি কোন সময় বোলিং করেছি বা কী করেছি।