সবাই স্বপ্ন দেখেন, কিন্তু স্বপ্নকে সত্য করতে খুব কম মানুষই পরিশ্রম করেন। আর যারা সঠিক সময়ে সঠিক পথে পরিশ্রম করেন তারাই দেখা পান সোনার হরিণের। তবে আহাদের পরিশ্রমে পথটা বেশ কঠিন। তবুও তিনি থেমে যেতে চান না। এগিয়ে যেতে চান এক পায়ের শক্তি দিয়েই, এগিয়েও চলেছেন অনেকটা পথ।
একজন শক্ত-সামর্থ্যবান মানুষ যেখানে নিজের স্বপ্নের পূরণে ব্যর্থ আর সেখানে আহাদ তার এক পা নিয়েই বহন করে চলছে তার স্বপ্ন। বলছি মো. আহাদুল ইসলাম আহাদের কথা। যার বাড়ি চট্টগ্রামের আনোয়ারার বরুনছড়া গ্রামে। ২২ বছর বয়সী এ তরুণ পরিশ্রম করে চলছে নিজের জন্য।
মহসিন কলেজে অর্থনীতি ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী আহাদ পড়াশোনার পাশাপাশি এক পায়ে ভর করেই করছেন খেলাধুলা। এবং খেলাধুলায় ভালোও করছেন তিনি। ছোটবেলা থেকে খেলাধুলার প্রতি আগ্রহ থাকলেও ২ বছর বয়সে দুর্ঘটনায় এক পা হারানো আহাদ কখনো তেমনভাবে সবার সাথে মিশতে পারতেন না। তবে থেমে ছিলেন না, নিজে ব্যাট-বল কিনে ক্রিকেট খেলতেন।
তাকে যখন প্রশ্ন করি, গ্রামের মানুষে আপনাকে কিভাবে দেখেন? উত্তরে তিনি বলেন, ‘আগে সবাই এক রকম বৈষম্যের চোখে দেখতো, তবে এখন যখন দেখে আমি এক পা নিয়ে সাধারণ সকলের মতই সব করি বা করার চেষ্টা করি, এখন আসলে অনেকে মূল্যায়ন করেন।’
পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলা ছাড়াও রক্তদাতা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও যুক্ত রয়েছেন আহাদ। দেশের জন্য খেলাধুলায় কী করতে চান? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য, দেশের মানুষের আনন্দের জন্য কিছু করার সুযোগ থাকলে অবশ্যই করব, বিসিবি যদি আমাদের হুইলচেয়ার ক্রিকেট টিম নিয়ে কিছু করে তাহলে আমার চেষ্টা থাকবে নিজের সর্বোচ্চ দেওয়ার।পরিবারের বড় ছেলে হওয়ায় পরিবারের জন্যও আমার কিছু করার থাকে, সেখান থেকেই ভালো একটা চাকরির আশা করি।’
এছাড়া তার ইচ্ছে, যদি কখনো বাইরের দেশ থেকে নিজের পায়ের চিকিৎসা করাতে পারেন বা কৃত্রিম পা লাগাতে পারেন তাহলে নিজের জীবনকে সুন্দরভাবে গড়ে তুলতে পারবেন।
বর্তমান প্রজন্মের তরুণদের জন্যও বার্তা দেন তিনি। এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে হাসি দিয়ে বলেন, ‘আসলে এখনকার তরুণদের মধ্যে জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকার প্রবণতা খুব কম, যার কারণ হলো তারা জীবন নিয়ে সচেতন না। আমাকে দেখেন, আমাকে তো পরিবারের চাপের পাশাপাশি সমাজে ল্যাংড়া বলেও ডাকা হত। মানুষের নানাবিধ কথা শোনা লাগতো, কিন্তু আমি কখন কারও কথাতে দমে যাইনি এবং সংগ্রাম করে গেছি। আমি সবাইকে এটাই বলতে চাই জীবনে কখনো দমে যাওয়া যাবে না।’
এভাবেই চলছে আহাদদের গল্প, এভাবেই আহাদের মত তরুণদের নিয়ে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশে এগিয়ে যাচ্ছে, আরও এগিয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।