সিলেটের অভিষেক টেস্টে সফরকারী জিম্বাবুয়ের কাছে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ। এমন হারের জন্য ব্যাটসম্যানরা যে দায়ী এতে কোন সন্দেহ নেই। দুই ইনিংসেই ২শ’ রানের কোটা পেরোতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা।
এমন ব্যর্থতা কেন? ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মাহমুুদউল্লাহর কাছে এমন প্রশ্নের কোন জবাব নেই। ম্যাচ শেষে সিরিজের প্রথম টেস্ট নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আরও অনেক কথা বলেছেন মাহমুদউল্লাহ।
প্রশ্ন : এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা কি?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : এমন ব্যাটিংয়ের ব্যাখ্যা দেয়া আসলে খুবই কঠিন। একটা জিনিস বলতে পারি, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে যে ধরনের ডিসিপ্লিন থাকা উচিত, আমার মনে হয় না আমরা সেই ডিসিপ্লিন দেখাতে পেরেছি। কারণ উইকেট বেশ ভালো ছিল, এমনকি আজকেও উইকেট ভালো ছিল। হয়তো আজকেও দুই একটি বল টার্ন করেছে।
এ ছাড়া আমার কাছে ভালোই মনে হয়েছে। আমার মনে হয় ডিসিপ্লিনের ইস্যুটা আমাদের আরেকটু ভালো করে দেখতে হবে। নিজেদের ওপর বিশ্বাসটা আরেকটু বাড়াতে হবে। এই ইস্যুগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। কারণ বেশ কয়েকটি টেস্টে আমাদের ব্যাটিং খুব বাজে হচ্ছে। আমাদের এসব নিয়ে ভাবতে হবে, একটা উপায় বের করতে হবে।
প্রশ্ন : চতুর্থ দিনের পরিকল্পনা কি ছিল?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : পরিকল্পনা তো সফল হয়নি। কারণ গতকাল (সোমবার) আমাদের টার্গেট যখন সেট হয়, তখন আমরা মাঠে আলোচনা করেছিলাম আমরা পজেটিভ থাকব। ম্যাচ জেতার জন্যই খেলব। কারণ উইকেট ভালোই ছিল। কোন রকম অজুহাত দেয়া উচিত হবে না এবং দেয়া ঠিকও না। আমরাই বাজে ব্যাটিং করেছি। আমরা মোটেও ডিসিপ্লিনড ছিলাম না।
এ কারণেই আমাদের ব্যাটিং ব্যর্থতা। তবে আমরা বিশ্বাস করি আমরা নিজেরা যদি চিন্তা করি, অ্যাজ অ্যা গ্রুপ, আমরা অবশ্যই ভালোভাবে ফিরতে পারব। এই বিশ্বাসটা আমাদের সবার মধ্যেই আছে।
প্রশ্ন : নিজের আউট নিয়ে কি বলবেন?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : আমরা অনেকগুলো বলে খুব লেইম আউট হয়েছি, খুব বাজে আউট হয়েছি। আউটগুলো হয়তো দৃষ্টিকটু। এভাবে আউট ভালো না, বিশেষ করে টেস্ট ক্রিকেটে। এখানে ডিসিপ্লিন, কনসান্ট্রেশনের ইস্যু আছে। আমাদের প্রতিটা ইন্ডিভিজুয়ালের সাথে কথা বলতে হবে, তারা কি চিন্তা করছিল এসব ভাবতে হবে। যদি পারসনালি বলি, আমি আজ বেশ পজেটিভ ছিলাম। ভেবেছিলাম আমি হয়তোবা ভালো খেলে বড় জুটি গড়লে তাদের টার্গেটের কাছাকাছি যেতে পারব, আমরা ওই বড় পার্টনারশীপই করতে পারিনি। আপনি বড় জুটি না গড়তে পারলে ম্যাচ জিতবেন না।
প্রশ্ন : বিশ্বকাপ ভাবনায় টেস্ট ক্রিকেট কী মূল্য হারাচ্ছে?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : উই ডু কেয়ার অ্যাবাউট টেস্ট ক্রিকেট। আমরা হয়তো পাঁচ-ছয়টা ইনিংসে রান করতে পারিনি। বোলাররা যথেষ্ট ভালো বোলিং করেছে। প্রতিপক্ষকে অল্প রানে আটকে ফেলছে। ব্যাটসম্যানরা ভালো করছে না। ওয়ানডে ফরম্যাটে ভালো ছন্দে আছে। কিন্তু ওই ডিসিপ্লিনটা হয়তো আমরা টেস্ট ক্রিকেটে নিতে পারছি না। অবশ্যই এটা চিন্তার বিষয়।
আমাদের এটা খুব ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে। কারণ এভাবে ব্যাট করতে থাকলে মনে হয় না আমরা টেস্ট ক্রিকেটে কোন অবস্থানে থাকব। এটা আমাদের ইমেজের ইস্যু। আমাদের অবশ্যই শক্তভাবে ফাইট ব্যাক করতে হবে। অ্যাদারওয়াইজ নো পয়েন্ট প্লেইং টেস্ট ক্রিকেট লাইক দিস।
প্রশ্ন : আজ ইনিংসে কোন জিনিসটা সবচেয়ে বেশি হতাশার?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : আমার মনে হয় আমাদের স্ট্রোক মেকিংটা হয়েছে টু মাচ। এই জিনিসটা আমরা হয়তো ইমশনালি করছি। এই জিনিসটা আমাদের রেস্ট্রিক করতে হবে। আরেকটু চুজি হতে হবে। আমরা কোন বোলারকে কখন কিভাবে খেলতে পারি এটা দেখতে হবে। সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়, আমরা যেই ছোট ছোট পার্টনারশীপও ক্রিয়েট করতে পারছি না। আমরা টপ টু বটম সবাই ফেইল করছি। এই জিনিসটা আমরা ঠিক করতে পারলে ঢাকা টেস্টে ভিন্ন বাংলাদেশ দেখতে পাবেন।
প্রশ্ন : উইকেট বুঝতে না পারার পাশাপাশি আরও অনেক ভুল!
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : আমি শুধু ব্যাটিংটা নিয়ে বলতে পারি। আপনি উইকেটের দোষ দিতে পারবেন না। বোলারদের বিপক্ষে কমপ্লেইন করতে পারবেন না। কারণ তারা ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করছে। তাইজুলের কথা বলি, সে অনেক ভালো বল করেছে। মিরাজ, রাহি ভালো বল করেছে। আল্টিমেটলি এটা আমাদের ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব আমরা কেমন রান করেছি। ব্যাটসম্যানরা যদি ভালো রান না দিতে পারে, তাহলে লাভ নেই কোন।
এই ইস্যুগুলো এক সাথে কথা বলে আমাদের ফাইন্ড আউট করতেই হবে, বের করতে হবে কি উপায় আছে। কারণ এভাবে ব্যাটিং ব্যর্থতার দায়ভার আমরাও নিতে চাই না। আমাদের সবার ইন্ডিভিজুয়াল ইমেজ আছে একই সাথে এটা বাংলাদেশ দলের ব্যাপার। আমরা বাংলাদেশ দলের জন্য খেলছি, অবশ্যই আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেটকে কিছু ফেরত দিতে হবে।
প্রশ্ন : নেতিবাচক মানসিকতা, একাদশ ও টেস্টে ইমেজ নিয়ে কি বলবেন?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : প্রথমত সেরা একাদশ নিয়ে যেটা বলি, এটা একবারে ঠিক ছিল। কারণ পিচ শুষ্ক ছিল। এর কারণে এখানে তিনটা স্পিনার খেলানো আমার কাছে এবং টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে মনে হয়েছে যথোপযুক্ত সিদ্ধান্ত।
আর ইমেজের কথা যেটা বললেন এভাবে যদি পারফর্ম করতে থাকি তাহলে তো অবশ্যই এটা একটা বড় ইস্যু হবেই। প্লেয়ারদের পক্ষ থেকে এটুকুই বলতে পারি আমরা কোন কিছু সহজে নেব না, আমরা এখান থেকে শক্তভাবে ফিরে আসতে পারি। আমার মনে হয় একটা ইনিংসই যথেষ্ট। পরের টেস্টে ভিন্ন বাংলাদেশকে দেখবেন ইনশাল্লাহ।
প্রশ্ন : এমন পারফরমেন্স মেনে নেয়ার মতো কিনা?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : অধিনায়ক হিসেবে এবং খেলোয়াড় হিসেবেও এটা মানা কষ্টকর। দর্শকরা এসেছেন আমাদের ভালো খেলা দেখতে। আমরা পারফর্ম করতে পারিনি। এটার জন্য আমরা দুঃখিত। সব সময় প্রত্যাশা করি দর্শকরা যেভাবে সব সময় সমর্থন করেন সেভাবে করবেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের আগেও এমন সময় এসেছে তখনও আমরা ঘুরে দাঁড়িয়েছি। আশা করি সবাই মিলে আবার ঘুরে দাঁড়াব।
প্রশ্ন : শট সিলেকশন নিয়ে কি বলবেন?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : শট না খেললে তো রান করতে পারবেন না। রান না করলে কীভাবে ম্যাচ জিতবেন। আমাদের লক্ষ্য ছিল ম্যাচ জেতার। আমাদের দলের মধ্যেও যা কথা হয়েছে আমাদের বিশ্বাস ছিল। আমি বিশ্বাস করি টেস্ট ক্রিকেট এমন একটা খেলা যেখানে ইতিহাস তৈরি করা যায়। তার মানে এই না যে আমরা দমে যাব। আমরা অবশ্যই ফিরে আসব। আর শট যদি প্রয়োগ করতে না পারেন এটা আপনার পারসোনাল এক্সিকিউশনের বিষয় যে, কেন আমি পারিনি।
প্রশ্ন : অধিনায়কত্ব ব্যাটিংয়ে প্রভাব ফেলছে কি?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : না, ওইরকম কোন ইস্যু না।
প্রশ্ন : সাকিব-তামিমকে মিস করেছেন?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : সাকিব, তামিম যদি বলেন- দলেরর সেরা দু’জন পারফর্মার। কে না চাইবে তাদের খেলা। কিন্তু ইনজুরিতে তো কারো হাতে নেই। তারপরও যে দলটা আছে জিম্বাবুয়েকে হারানোর সামর্থ্য ছিল। আমাদের জিম্বাবুয়েকেও কৃতিত্ব দিতে হবে, তারা ভালো ক্রিকেট খেলেছে।
প্রশ্ন : ব্যাটিং অর্ডারে বদল নিয়ে কি বলবেন?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : অবশ্যই ভালো একটা পয়েন্ট বলেছেন। এটা টিম ম্যানেজমেন্ট এবং মুশফিকের সঙ্গেও কথা বলতে হবে যে, ও ব্যক্তিগতভাবে কি চাচ্ছে। কারণ এটা টিম ম্যানেজমেন্টের কল যে কে কোথায় ব্যাট করবে। কাকে কখন কোন জায়গায় খেলাবে। মুশফিককে ছয়ে খেলানোর কারণ ওই ব্যাটিং ডেপথ যেন থাকে। আর মুশফিকের পাঁচ, ছয় নম্বরে বড় ইনিংস আছে।
আজকের কথা যদি বলেন, আমি চেয়েছি চারে আসতে। এটা আমার হুট করে নেয়া সিদ্ধান্ত। কারণ ওই সময় যদি দুইটা লেফটি ব্যাটিং করে। কারণ সিকান্দার রাজা বল করছিল।
প্রশ্ন : আফগানিস্তান, আয়ারল্যান্ড কি হুমকি?
মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ : আমি শুধু এটুকুই বলতে পারি। আমি কেবল পারফরম্যান্স নিয়েই চিন্তা করছি। টেস্ট ম্যাচ কমবে না বাড়বে এসব নিয়ে আমার কোনরকম মাথাব্যাথা নেই। যদি আমি ভালো করি টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা বাড়বে। যদি খারাপ করতে থাকি, এরকম বাজে পারফর্ম করতে থাকি তাহলে টেস্ট ম্যাচ সংখ্যা অবশ্যই কমে যাবে। এটা আইসিসি, ক্রিকেট বোর্ডের বিষয়।