যতদিন পারবো খেলে যেতে চাই

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ০৫:৩০ এএম, ০১ নভেম্বর ২০১৭
যতদিন পারবো খেলে যেতে চাই

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তবে এখনও ওয়ানডে ক্রিকেটে আরও অনেক দেয়ার আছে এ নড়াইল এক্সপ্রেসের। তিনি নিজেও দীর্ঘসময় ওয়ানডে খেলে যেতে চান। অন্তত যতদিন পারেন, ততদিন।

টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার পর ক্রিকেটের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট ‘ক্রিকইনফো’-কে এক সাক্ষাৎকার দিয়েছেলেন মাশরাফি। স্পোর্টমেইল২৪ পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো।

টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে, এখনও ওয়ানডে ক্রিকেটে সামনের মাসগুলোতে আপনার বড় একটি ভূমিকা থাকবে...

আমি সত্যিই ওয়ানডে ক্রিকেট উপভোগ করছি। একইসঙ্গে বলবো, ওয়ানডের তুলনায় টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিতে আমরা একটু মন্থর গতিতেই এগুচ্ছি। যেখানে ওয়ানডেতে আমরা ১০ নম্বর (আইসিসি র‌্যাংকিং) থেকে দ্রুত ৭ নম্বরে পৌঁছে গেছি। আমরা ইতোমধ্যে অনেক বড় একটি ধাপ অতিক্রম করেছি। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু কিছু খেলোয়াড়ের দারুণ পারফরম্যান্সের কারণে।

আমি ওয়ানডে ক্রিকেট খেলতে ভালোবাসি এবং চাই যতদিন পারা যায় ততদিন খেলে যেতে চাই। তবে এ জন্য কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করা কঠিন। বিশেষ করে বাংলাদেশে। আমি চাই খেলা চালিয়ে যেতে; কিন্তু আমি যদি খারাপ সময় অতিবাহিত করি তাহলে তো অবশ্যই একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

গত ইংল্যান্ড সফর পর্যন্ত কার্যকর একটি সময় পার করে এসেছেন। এখন কি ২০১৫ সাল থেকে ভিন্ন কোনো কিছু গ্রহণ করবেন?

২০১৫ বিশ্বকাপের পর সত্যি বলতে, আমি নতুন বলে বোলিং করিনি। সম্ভবত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে একটা-দুটা ম্যাচে করেছি। খুব অল্পবয়সে যখন আমার ক্যারিয়ারের শুরু, তখন থেকে সবসময়ই আমি বোলিং ওপেন করতাম। সুতরাং, এ বিষয়টার ওপরই নতুন বলে আসলে আমার স্কিল গড়ে ওঠেছে। যে কোনো একজন বোলারের স্কিল গড়ে ওঠে মূলত একটা পয়েন্টকে ভিত্তি করেই। মোস্তাফিজ যেমন নতুন বলের তুলনায় আধা-নতুন বলে খুব ভালো। কারণটা হচ্ছে তার কাটার। তাসকিন আর রুবেল ১০ ওভার পরে অনেক বেশি কার্যকর, যখন তারা বাইরে দু’জন অতিরিক্ত ফিল্ডার পেয়ে যায়। সৈয়দ রাসেল, তাপস বৈশ্য এবং মঞ্জুরুল ইসলামরাও সবাই ছিল নতুন বলে ভালো। একই ব্যাপার আমার ক্ষেত্রেও।

আমি হয়তো পুরনো বলে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছি। যদিও এটা প্রথম দিকে আমার জন্য কঠিন হয়েছে। এই ভূমিকাটাও আমি উপভোগ করতে শুরু করেছিলাম এবং দলও এ সময়ে এসে সাফল্য পেতে শুরু করেছিল। আমি ভাবলাম, এটাই তো ভালো। ভারত এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মোস্তাফিজ শুরুতেই উইকেট পেতে শুরু করলো। এরপর যখন সে ইনজুরিতে পড়লো, আমি আবারও বোলিং ওপেনিংয়ে ফিরে আসলাম। আমার সারাজীবনে এটাই করে গেছি।

শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে আপনার প্রথম স্পেলই বলতে গেলে বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। আসলে কিভাবে আপনি শুরুতে এভাবে ব্রেক থ্রু এনে দেয়ার দক্ষতা অর্জন করেছেন?

আসলে এটা নির্ভর করে বোলারের আত্মবিশ্বাস এবং সামর্থ্যের ওপর। মানুষ তামিম ইকবালকে অনেক সময় দোষারোপ করে, যদি সে দ্রুত আউট হয়ে যায়, রান করতে না পারে; কিন্তু মনে রাখতে হবে, সে ওয়ানডেতে শুরুতে দুটি নতুন বলের মোকাবেলা করে। এ চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করার সামর্থ্য তার আছে বলেই সে এটা করে যাচ্ছে।

আমার ক্ষেত্রে আমি বলবো, আফগানিস্তান সিরিজের সময় আগের বলে শেহজাদ ছক্কা মেরে দিল। পরের বলেই কট বিহাইন্ড করে তার উইকেট তুলে নিলাম। আমার আত্মবিশ্বাস ফিরে এলো। ওই সময় আমি অনুভব করতে শুরু করলাম যে, তাহলে আমিই সেরা এবং এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষেও আমি ব্রেক থ্রু এনে দিতে পেরেছি।

বর্তমান সময়ের ট্রেন্ড হলো একেবারে প্রথম ওভার কিংবা প্রথম বল থেকেই ওপেনাররা খুব আক্রমণাত্মক খেলেন। একজন বোলারের জন্য এমন পরিস্থিতিতে নিজের ওপর আস্থা এবং বিশ্বাস ধরে রাখা কতটা কঠিন?

আসলে আমার আত্মবিশ্বাস এসেছে মূলত দীর্ঘ ক্যারিয়ার থেকে, যখন থেকে আমি খেলা শুরু করেছি, তখন থেকেই। আমি যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি, তখন মনে করতাম, খুব ভয়ঙ্কর কোনো ওপেনার তো সম্ভবত এখন আর নেই। অথচ প্রতিটি দলেই ছিল বিখ্যাত সব ওপেনিং ব্যাটসম্যান।

ভারতের ছিল গৌতম গম্ভীর, বিরেন্দর শেবাগ, অস্ট্রেলিয়ার ম্যাথিউ হেইডেন, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, শ্রীলঙ্কার সনাৎ জয়সুরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকার হার্সেল গিবস এবং গ্রায়েম স্মিথ। তবে বর্তমান সময়ের ওপেনাররা টেকনিক্যালি খুব ভালোমানের নয়। এ কারণে আমার কাজটা সহজ হয়ে যায়।

আপনার বোলিংয়ের এমন একটা পয়েন্ট বলুন, যেটা আপনার আত্মবিশ্বাস অনেক বাড়িয়ে দেয়...

উইকেট সবসময়ই আমাকে আত্মবিশ্বাস জুগিয়ে যায়। তবে প্রথম বল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রথম বলকে আপনি যেখানে বল ফেলতে চান সেখানে যদি ফেলেন, তাহলে আত্মবিশ্বাস বেড়ে যাবে। এটাই খুব গুরুত্বপূর্ণ।

অনিচ্ছাকৃতভাবে ইনসুইং কিংবা আউট সুইংয়ের মধ্যেও অনেক পার্থক্য থাকে, যখন আপনি ইচ্ছা অনুযায়ী নির্দিষ্ট কোনো ডেলিভারি দিতে পারবেন। আপনি চাইলে জেনে-বুঝে এটা দিতে পারেন। তখন উইকেট পাওয়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। যখন অনিচ্ছাকৃতভাবে কোনো বলে ইনসুইঙ্গার কিংবা আউটসুইঙ্গার হয়ে যায়, তখন সেটা ব্যাটসম্যানের জন্যও অনেকটা অসুবিধাজনক অবস্থায় চলে যায়। তখন তারা বুঝতে পারে না, বলটাতে আসলে কী হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের বোলারদের দীর্ঘদিনের সমস্যা এটা যে- বোলাররা একটি উইকেট পেলে পরের বলটিই করে বসে খুব বাজে। এ সমস্যা নিয়ে কাজ করার বিষয়ে কোন চিন্তা কি আছে আপনার মাথায়?

আমি মনে করি, অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটা কমে আসবে। আমাদের হাতে প্রায় অনভিজ্ঞ একটি বোলিং ইউনিট। মোস্তাফিজুর হয়তো খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেক সাফল্য পেয়ে গেছে। এটাকে ধরে রাখার এবং তার সাফল্যের মাত্রাটা বাড়িয়ে নেয়ার দায়িত্ব এখন তার কাছে।

প্রতিটি ম্যাচেই পাঁচ উইকেট করে নিক, এমনটাও আপনি তার কাছে আশা করতে পারেন না। কারণ, প্রতিটি প্রতিপক্ষই এখন তাকে নিয়ে অনেক বেশি গবেষণা করে। তারা অনুভব করে মোস্তাফিজকে যদি উইকেট নেয়া থেকে বিরত রাখা যায়, তাহলে আমাদের উইকেট নেয়ার ক্ষমতা অনেকটা কমে গেল। আমার বিশ্বাস বোলাররা অভিজ্ঞতা বাড়ার পাশাপাশি আরও অনেক পরিণত হবে।


বিষয়ঃ

শেয়ার করুন :