কাবাডি ফেডারেশনের কর্তাদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ খেলোয়াড়রা

পার্থ প্রতীম রায় পার্থ প্রতীম রায় প্রকাশিত: ১১:৪৪ এএম, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১
কাবাডি ফেডারেশনের কর্তাদের আন্তরিকতায় মুগ্ধ খেলোয়াড়রা

সংগ্রহীত

কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। তবে সঠিক প্রচার-প্রচারণার অভাবে অনেক হয়তো কাবাডি সম্পর্কে জানেই না। তবে আশার কথা হলো আস্তে আস্তে বেশ উন্নতি করছে কাবাডি। দেশজুড়েও ছড়িয়ে পড়ছে কাবাডির সেই পুরাতন জোয়ার।

সম্প্রতি কাবাডির সবচেয়ে বড় কর্পোরেট ইভেন্ট প্রো কাবাডি লিগে দল পেয়েছেন বাংলাদেশের তিন কাবাডি খেলোয়াড় তুহিন তরফদার, মাসুদ করিম এবং জিয়াউর রহমান। সেখানে তারা নিজেদের সেরাটা দিয়ে পারফর্ম করতে মুখিয়ে আছেন। 

কাবাডির বর্তমান এ উন্নতিকে তারা ফেডারেশনের অক্লান্ত পরিশ্রম হিসেবে দেখছেন। ফেডারেশন কর্তাদের পরিশ্রমেই কাবাডির উন্নতি হচ্ছে বলে মনে করেন তারা।

কাবাডিতে আসা,নিজেদের ব্যক্তিগত লক্ষ্য, কাবাডির উন্নতি এ সব বিষয়ে স্পোর্টস মেইল ২৪ ডট কমের সহ-সম্পাদক পার্থ প্রতীম রায়ের সাথে কথা বলেছেন বাংলাদেশের তিন কাবাডি খেলোয়াড় তুহিন তরফদার, জিয়াউর রহমান এবং মাসুদ করিম।

তুহিন তরফদার

sportsmail24

কাবাডিতে আসা কিভাবে?

আমি মূলত গ্রাম বাংলার খেলা হা-ডু-ডুতে ছিলাম। হা-ডু-ডুতে আমি বাংলাদেশের প্রায় ৬৪ জেলার ৫৫-৫৬টা জেলায় আমি হাডুডু খেলতাম।  ওইখান থেকে জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে একটা টুর্নামেন্ট ছিল। ওইখানে আন্তর্জাতিক কোচ আব্দুল জলিল স্যার  সেখানে অতিথি ছিলেন। উনি আমার ওই খেলা দেখে নৌবাহিনীর যিনি কোচ ছিলেন তাকে আমার কথা জানান। তারপরে নৌ বাহিনী আমাকে ডাকে। এই চাকরির সুবাদে ২০১৫ সালে আমি জাতীয় দলে আসি।

যদি সার্ভিসেস টিম না হতো তাহলে কি কাবাডিতে আসা হতো?

আসলে যে আগে ফেডারেশনের যে অবস্থা ছিল তাতে এখানে আসা সম্ভব ছিল না। যদি বাহিনী আমাদের ঠিকমত পরিচর্যা না করতো তাহলে আমরা টিকে থাকতে পারতাম না। বর্তমানে যে কমিটি আছে তারা যেভাবে আগাচ্ছে তাতে সম্ভব।  একটু না বললেই নয়, হাবিব স্যার-মোজাম্মেল স্যার আছেন ওনাদের আন্তরিকতায় তা হয়েছে। বর্তমানে কাবাডি ফেডারেশনের এত বড় বিল্ডিং আমরা দেখবো তা আমরা আশাও করতাম না। কিন্তু এ কমিটি সেটিকে সম্ভব করে দেখিয়েছি। এখন যদি চাকরি না করি টিকে থাকা সম্ভব। একসময় এটা ছিল না।

প্রো কাবাডি লিগে কিরকম পারফর্ম আশা করেন?

আসলে প্রো কাবাডি লিগটা আইপিএলের মতো। পিএকেএলে (প্রো কাবাডি লিগ) অনেক ধরনের খেলোয়াড় আসবে। প্রত্যেকটা দেশ থেকে বাছাই করে ভালো খেলোয়াড়রা আসবে। সেখানে খেলার সুযোগ পাওয়াটা আসলেই ভাগ্যের ব্যাপার। সেখানে আমরা চাচ্ছি নিজেদের পারফর্মেন্স শো করে সেরাটা দিয়ে খেলবো। খেলে ভালো কিছু শিখবো, ভালো কিছু জেনে আসবো। বিদেশি যারা ভালো খেলোয়াড় আছে তাদের দূর্বল পয়েন্ট জেনে এসে আমার দেশের জন্য কাজে লাগিয়ে সামনে যে এশিয়ান গেমস আছে তাতে ভালো করবো। এশিয়ান গেমসে পদক আনবো।

সর্বশেষ বিশ্বকাপে তৃতীয় হয়েছিল বাংলাদেশ। জাতীয় দলের হয়ে ভবিষ্যত লক্ষ্য কি?

কাবাডির শুরু থেকে আমরা রানার আপ ছিলাম। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু কাপ আয়োজিত হয়েছিল। সেখানে আমি অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলাম।  ফেডারেশনের কাছে আমি এ জন্য কৃতজ্ঞ। সেখানে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। এই যে সুযোগ করে দিয়েছে এবং আমরা যে পারি তা আমরা দেখাতে পেরেছি। এরকম সুযোগ করে দেয় তাহলে আমরা এশিয়ান গেমস এবং বিশ্বকাপেও ভালো করতে পারবো আমরা।

অন্যান্য দেশের থেকে বাংলাদেশের কাবাডি খেলোয়াড়দের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

আগে জিম থেকে শুরু করে অনেক সুবিধা ছিল না। না থাকার কারণে অন্যান্য দেশগুলো সুযোগ সুবিধা পেয়ে অনেক এগিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা একই স্থানে আছি। আমরা উন্নতি করতে পারিনি।  বর্তমান কাবাডি ফেডারেশন এত সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছে যেটা আমাদের কাবাডির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আমরা কাবাডির হারিয়ে যাওয়া গৌরব আবারও ফিরিয়ে আনতে পারবো। একজন ট্রেইনার এবং পুষ্টিবিদ এনে আমাদের সবকিছু লক্ষ্য রাখছে। আমাদের সবকিছু উন্নত হচ্ছে। আমরা যদি নিজেদের কাজ করতে পারি তাহলে আমরা আমাদের পদক পুনরুদ্ধার করতে পারবো।

জিয়াউর রহমান

sportsmail24

আপনার কাবাডিতে আসা কিভাবে?

আমরা কাবাডিতে আসা মূলত ২০১৪ সালে। প্রথম আমি বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে চাকরি করতাম। বেসিক ট্রেনিংয়ের সময় ওইখানে ইউনিটভিত্তিক কাবাডি লিগ হয়েছিল। আমি যে ইউনিটে ছিলাম সেখান থেকে একটা টিম জেতে হবে। সেখানে আমাকে ডেকে নেয়। ওখানে ভালো খেলার খেলার পর নৌবাহিনীর প্রধান কোচ আমাকে পছন্দ করে।

নৌবাহিনীতে আসার পর আব্দুল জলিল স্যার আমাকে ভালোমতো প্রশিক্ষণ দেয়। তারপর আমি জাতীয় দলে আসি। ২০১৬ সালে কাবাডি বিশ্বকাপ দিয়ে আমি যাত্রা শুরু করি। 

সার্ভিসেস টিম না হলে কি কাবাডিতে আসা হতো?

আসলে সার্ভিস হিসেবে যদি থাকতো তাহলে ফুটবলটাই থাকতো। ২০০৮ সালে ফুটবলে অনুর্ধ্ব ১৮ দলে সুযোগ পেয়েছিলাম। সে সময় কয়েকদিন ক্যাম্পে থেকে বাড়িতে গিয়েছিলাম। এরপর আর ক্যাম্পে আসি নাই। ক্যাম্প থেকে যাওয়ার পর নৌবাহিনীতে যোগ দেই। 

কাবাডি থেকে আর্থিক নিশ্চয়তা কি রকম পাচ্ছেন?

আসলে চাকরি যখন ছিল তখন চাকুরির সুবিধা পেতাম। ২০১৭ সালে যখন প্রো কাবাডিতে প্রথমবার সুযোগ পাই, তখন ভারতীয় ১৮ লাখ ২০ হাজার রুপি পাই। ২০১৮ সালে ৩৪ লাখ রুপি পাই। এরপর আমি চাকুরি ছেড়ে দেই। কারণ চাকুরি থেকে আমাকে প্রো কাবাডি লিগে খেলতে দিবে না। দীর্ঘ তিন বছর যাবার পর মাসুদ করিম, বাদশা ভাই (এলাকার বন্ধু), কোচ আমাকে আবার ফিরিয়ে আনে। 

প্রো-কাবাডি লিগে ব্যক্তিগত লক্ষ্য কি?

এর আগেও প্রো কাবাডি লিগে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছি আমি। ২০১৭ সালে পুনে দলেও নিয়মিত ম্যাচ খেলছি এবং ২০১৮ সালে ব্যাঙ্গালুরু বুলসেও নিয়মিত ম্যাচ পেয়েছি। নৌবাহিনীর কারণে পরেরবার যেতে পারি নাই। তিন বছর পর আবার সুযোগ পেলাম। আশা করি ভালো করবো।

ক্যারিয়ার শেষে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?

ক্রিকেটারদেরকে বাংলাদেশের সবাই চেনে। আমাদেরও ওই রকম আশা আকাঙ্খা আছে। যেহেতু কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা। সে হিসেবে আমাদের চাওয়া জণগন আমাদেরকে চিনুক-জানুক। শুধু জাতীয় দলেই খেললেই মানুষ চিনবে এমন যেন না হয়। ক্রিকেটারদেরকে তুলে ধরেন আপনারাই (সাংবাদিক)। কাবাডি খেলোয়াড়দের ফোকাস দেওয়ার জন্য আপনারদেরকেই কাজ করতে হবে।

আপনাদের ইনজুরিগুলো কতটা গুরুতর হয়?

বডি কন্টাক গেম ইনজুরি হবেই। তবে ফেডারেশন থেকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হয় তাই এখন একটু নিশ্চিন্ত। এটা খেলোয়াড়দের জন্য অনেক সুবিধা।

অনুশীলন ব্যবস্থা কি বিশ্বমানের?

আগে থেকে অনেক ভালো অনুশীলন সুবিধা আছে এখন। আগে ক্রীড়া পরিষদ বিল্ডিংয়ে থাকতাম, এখন নিজস্ব ভবনে থাকি। সেখানে থাকার পরিবেশ ছিল না। সেক্রেটারি, জয়েন্ট সেক্রেটারি স্যার আমাদের জন্য অনেক সুবিধা করছে। সে জন্য তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ।

আবারও কাবাডির পুর্নজাগরণ ঘটবে?

ক্রিকেটের এখন যেরকম আর্থিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। আস্তে আস্তে আমরাও সেই সুবিধা পাচ্ছি। অবশ্যই আমরা দেশকে ভালো কিছু এনে দিতে পারবো। সামনে কর্পোরেট লিগ শুরু হলে আরও অনেক খেলোয়াড় উঠে আসতে পারবে।

মাসুদ করিম

কাবাডির যাত্রা কিভাবে ছিল?

আমার কাবাডি যাত্রাটা বেশ ঐতিহাসিক। আমি স্কুল-কলেজ জীবনে কোনোদিন কাবাডি খেলি নাই। পুলিশে চাকুরি হওয়ার পরে গোপী রঞ্জন তালুকদার স্যার আমাকে কাবাডিতে নিয়ে আসে। প্রথমে খেলতে চাই নাই, জোর করে খেলতে নামিয়েছিল। লম্বা আছো, শরীর ভালো আছে এ বলেই আমাকে খেলতে নামিয়েছে।

কয়েকদিন খেলার পর আমি বলেছিলাম, আমি আর কাবাডি খেলবো না। হাত-পা ভাঙে, সমস্যা হয়। এ কথা বলার পর কোচ আমাকে ৫-৭ দিনের জন্য ছুটি দেয়। পরে দেখলাম এখান থেকে ছুটি পাওয়া যায়। এরপরেই আস্তে আস্তে কাবাডিতে আসে। জাতীয় দলে ২০১৩ সালে আসি।

কাবাডিতে বয়সভিত্তিক দল আছে কি?

হ্যাঁ, আছে। আমাদের একটি বয়সভিত্তিক দল আছে। কিছুদিন আগে জুনিয়র বিশ্বকাপ খেলে এসেছে দলটি।

তৃণমূল থেকে কি নতুন কোনো খেলোয়াড় উঠে আসতে দেখতেছেন?

বর্তমানে কাবাডির যে ফেডারেশন সেক্রেটারি এবং জয়েন্ট সেক্রেটারি মহোদয় যেভাবে কাজ করতেছে তাতে আরও অনেক খেলোয়াড় আসবে। কাবাডিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে অনেক কাজ করতেছে। কর্পোরেট লিগ নিয়েও কাজ করতেছেন।

ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলে কি রকম আর্থিকভাবে সুবিধা পাচ্ছেন?

প্রিমিয়ার লিগে নিয়মিত হয়। তবে সেখানে সার্ভিসেস দলের হয়ে খেলতে হয়। বাইরের খুব কম ক্লাব প্রিমিয়ার লিগ খেলে। তাই এখানে অতিরিক্ত কোনো অর্থ আসে না। সার্ভিসেস দলের বাইরে কেউ প্রিমিয়ার লিগে আসেনা।

এছাড়াও ক্যাম্পে থাকাকালীন ফেডারেশন থেকে আর্থিক সুবিধা পাচ্ছি।

প্রো কাবাডি লিগে কততম বার মতো যাচ্ছেন?

আমি তৃতীয়বারে মতো কাবাডি লিগে খেলতে যাচ্ছি। আমার সতীর্থ তুহিন দ্বিতীয়বারের মতো আর জিয়া তৃতীয়বারের মতো কাবাডি লিগে খেলতে যাচ্ছে।

আমরা কি আশা করতে পারি ভবিষ্যতে আরও অনেক বেশি খেলোয়াড় প্রো কাবাডি লিগ খেলবে?

প্রতি মৌসুমেই একজন করে প্রো কাবাডি লিগ খেলতে গিয়েছিল। আমার ধারণা এবারই প্রথমবার তিনজন এক সাথে প্রো কাবাডি লিগ খেলতে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক কাবাডি টুর্নামেন্টে ভালো খেলায় আমরা সুযোগ পেয়েছি।

অন্য দেশের কাবাডি খেলোয়াড়দের থেকে আমাদের শারীরিক শক্তির পার্থক্যের জায়গাটা কোথায়?

কাবাডি শুধু শারীরিক খেলা না। মানসিক এবং টেকনিক্যালিও খেলতে হয়। না হলে তো কেনিয়া প্রত্যেকবার চ্যাম্পিয়ন হতো। বর্তমান কমিটি যেভাবে সাহায্য করছে তাতে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ভালো ফলাফল করবে।

জিম তো প্রায় প্রস্তুত। ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন?

দুই একদিনের মধ্যেই জিম ব্যবহার শুরু করতে পারবো। তবে আমরা ভাগ্যবান একজন আন্তর্জাতিক মানের ফিটনেস ট্রেইনার নিয়ে কাজ করতে পারতেছি।

ফিটনেস ঠিক রাখতে তাহলে সঠিক গাইড লাইন পাচ্ছেন?

খেলায় ইনজুরি আছে। এটা নিয়মিত হবে। তবে এখন ইনজুরি থেকে সেরে ওঠার সময় সঠিক দিক নির্দেশনা পাবো। এছাড়াও সেক্রেটারি এবং জয়েন্ট সেক্রেটারি মহোদয় ফান্ডিংয়ের ব্যবস্থা করেছেন। আমাদের জন্য অনেক উপকার করবে।

স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর

[sportsmail24.com এখন sportsmail.com.bd ঠিকানাতেও। খেলাধুলার ভিডিও-ছবি এবং  সর্বশেষ সংবাদ পড়তে ব্রাউজ করুন যেকোন ঠিকানায়। এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে ইনস্ট্রল করে নিতে আমাদের অ্যাপস ]


বিষয়ঃ

শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

আরও ১৫ বছর খেলা শেষে কোচ হতে চান রোমান সানা

আরও ১৫ বছর খেলা শেষে কোচ হতে চান রোমান সানা

বাবার মাছ ধরার জালে প্র্যাকটিস ছাড়াও রেসিপি করছি : নিগার সুলতানা

বাবার মাছ ধরার জালে প্র্যাকটিস ছাড়াও রেসিপি করছি : নিগার সুলতানা

বাদ পড়াটা আমার শিক্ষা : মোস্তাফিজ

বাদ পড়াটা আমার শিক্ষা : মোস্তাফিজ

যা বলতে চায় বলতে দিন, আমি শুধু খেলে যেতে চাই : মেসি

যা বলতে চায় বলতে দিন, আমি শুধু খেলে যেতে চাই : মেসি