বিসিবি থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি : আমিনুল

স্পোর্টসমেইল২৪ স্পোর্টসমেইল২৪ প্রকাশিত: ১১:৫৩ পিএম, ১৫ মার্চ ২০১৮
বিসিবি থেকে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি : আমিনুল

শ্রীলঙ্কান কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়ার পর জাতীয় দলের প্রধান কোচ খুঁজছে বিসিবি। কোচ খোঁজা হচ্ছে এইচপি, একাডেমিরও। এরমধ্যে আলোচনায় এসেছেন সাবেক অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নাম। যদিও বিসিবির তরফ থেকে তাকে প্রস্তাব দেয়া না দেয়া নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে।

আইসিসির রিজিওনাল ডেভলপমেন্ট ম্যানেজার হিসেবে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সম্প্রতি বাংলাদেশের প্রথম সারির ইংরেজি পত্রিকা দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তিনি। স্পোর্টসম্যাইল২৪.কম পাঠকদের জন্য কতা এখানে তুলে ধরা হলো।

প্রশ্ন : আকরাম খান বলেছেন আপনাকে একটা মৌখিক প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যদি আপনার আগ্রহ থাকে তবে অনূর্ধ্ব-১৯ কিংবা এইচপি দলের কোচ হিসেবে তারা আপনাকে চান।

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : আমার যত ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছে তারমধ্যে একজন হচ্ছে আকরাম খান। আমরা প্রায় ১৭-১৮ বছর একসঙ্গে ক্রিকেট খেলেছি। হয়ত তার ভূমিকা এখন হেড অব ক্রিকেট অপারেশন্স। আমার ভূমিকা অন্য জায়গায়। এখানে পেশাদারিত্ব বলে একটা কথা আছে। পেশাদারিত্বের ঘাটতি দেখি সব জায়গায়। এখানেও ঘাটতি দেখছি। তারা আমার ফোন নম্বর জানে। আমি দেশে যাই, আসি। আমি কিন্তু কখনো আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পাইনি।

ফরম্যালি ডেকে নিয়েও কথা বলেনি। যেটা হয়েছে আপনার সঙ্গে আমার দেখা হলো আপনি বললেন, ‘এই চলে আস না... কোচিং করবা?’ এই ধরনের কথাবার্তা বলা আর নির্দিষ্ট একটা চাকরির অফার করা কিন্তু আলাদা। তারা বলেছেন- ‘সে আগ্রহী কিনা’। আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই।

সাধারণত একটা চাকরির প্রক্রিয়া হচ্ছে আমাকে আবেদন করতে হবে। আমাকেই ত চাকরি দেবে না, আমার সঙ্গে আরও প্রার্থী থাকবে। সেখান থেকে তারা সেরাটা বেছে নিবে। এটাও ঠিক যে আমি তো আবেদন করিনি। এ জন্য আমি বলতেও পারি না যে আমাকে তারা প্রত্যাখ্যান করেছে। আবার এটাও ঠিক যে একটা পেশাদার ব্যাপার যখন চলে আসে অবশ্যই আলাপ আলোচনার ব্যাপার থাকে। আবারও আমি পরিষ্কার করছি আমাকে কখনো ক্রিকেট বোর্ড থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয়নি। প্রস্তাব দেওয়া হয়নি বলেই আমি আজকেও ডিনাই করলাম।

তবে এটাও ঠিক যে অপেশাদার পথে কেন আমাকে প্রস্তাব দেবে। আমাকে তো আবেদন করতে হবে। ওই রকম কোন পরিস্থিতি তৈরি হয়নি।

প্রশ্ন : আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব পেলে অনূর্ধ্ব-১৯ বা এইচপি দলের কোচ হতে আপনি আগ্রহী?

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : এটা কিন্তু দুই ধরনের ব্যাপার। সাংবাদিক হিসেবে আপনি আমার মতামত জানতে চাচ্ছেন। সেখানে আমি আপনাকে মতামত দিতে পারব না, কারণ আমি এক জায়গায় চাকরি করি। আমাকে ওখানে কী সুযোগ-সুবিধা দেবে এসব ব্যাপার আছে । আর অনূর্ধ্ব-১৯ না এইচপি নাকি এ দল, নির্দিষ্টভাবে তারা কী করাতে চায় আমি জানি না। আমিও জানি না কোন জায়গাটায় কী পোস্ট খালি আছে। এভাবে সাংবাদিকদের না বলে সরাসরি আমাকে বললে ব্যাপারটা ভালো হতো।

তবে অবশ্যই আমি কাজ করতে আগ্রহী। বাংলাদেশের যেকোনো জায়গায়, সেটা অনূর্ধ্ব-১৯ হোক, জাতীয় দল, একাডেমি, এইচপি বা হেড অব কোচ এডুকেশন হোক। কিন্তু এটা কতটুকু হৃদয় থেকে বলা আর কতটুকু আপনাদেরকে কেবল বলার জন্য বলা। এটা আমার একটা বড় প্রশ্ন।

প্রশ্ন : চন্ডিকা হাথুরুসিংহে দায়িত্ব ছাড়ার পর এখনো প্রধান কোচ পায়নি বাংলাদেশ। শোনা যাচ্ছে অনেকে বিসিবির প্রস্তাবে রাজী হয়নি এখনো, এর কারণ কী হতে পারে?

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : অনেক কারণ আছে। গত ১৯ বছরের ফল দেখেন। কোনও কোচের বিদায় কিন্তু সুখকর হয়নি। কিছুদিন পরই আমরা ভাবতে শুরু করি এই কোচটা ভালো না। কোচ ভালো না নাকি মানুষ ভালো না সেটা জানি না কিন্তু মনে করা হয়-‘এ আর চলে না’। এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের যে ট্রাক রেকর্ড আছে সেটা ভালো না। ভালো না বলেই ভালো ভালো কোচ যারা আছে তারা এখানে আসতে চায় না। প্রচুর পয়সা অফার করা হয়। হাথুরুসিংহের মতো কোচ, ওকে কিন্তু কেউ তাড়িয়ে দেয়নি, সে নিজে নিজেই চলে গেছে। সব মিলিয়ে কোচ হেন্ডেলিং ইজ ভেরি ভেরি পুউর।

প্রশ্ন : কোচ না পাওয়ার জন্য ফ্রেঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগের প্রভাবের কথা বলেন অনেকে

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : আমি এটা কখনই বিশ্বাস করি না। এই অজুহাত ক’দিন থেকেই দেওয়া হচ্ছে। তাই যদি হবে বাকি যে ১১টা টেস্ট খেলুড়ে দেশ আছে। সবার তো কোচ আছে। তাদের তো সমস্যা নাই। আমাদের বেলায় কেন এরকম হয়। এটা তো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বলতে শুনি না, অস্ট্রেলিয়াকে বলতে শুনি না এমনকি জিম্বাবুয়েকে বলতে শুনি না। এইগুলা অজুহাত, এগুলো কিছুই না।

প্রশ্ন : দেশীয় কোচ নিয়ে জাতীয় দল চালানোর অবস্থা কি এসেছে?

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : একটা সহজ উত্তর দেই। একটা বোর্ড যখন চলে, সামনের দিকে এগিয়ে যায়। জাতীয় দল একটা পিলার। যাই পারফরম্যান্স একটা পিলার। সাথে সাথে আরও অনেক পিলার থাকে। আম্পায়ারিং থাকে, কোচিং থাকে, কোচ এডুকেশন থাকে, কিউরেটর থাকে। অনেকগুলো ব্যাপার নিয়ে ক্রিকেট আগায়। বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোচ বাংলাদেশি এখনো আমরা করতে পারিনি, এটার সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা কিন্তু বিসিবির। আমরা এই সেক্টরে কতটুকু কাজ করেছি কোচ এডুকেশন নিয়ে। এ দলে , হাই-পারফরম্যান্স দলে কোচ হওয়ার যে পাথওয়ে সিস্টেমটা আছে। সে সিস্টেমে কতটুকু স্থানীয় কোচ কাজে লাগাতে পেরেছি। যুবদল ভালো করছে তখন শেষ মুহূর্তে আমরা বিদেশি কাউকে দিয়েছি। আমাদের দুইটা সমস্যা, এক সেই পাথওয়ে সাজাতে পারিনি।

আর দুই নম্বর হচ্ছে, আমরা অজানা মানসিক রোগে ভুগি যে, বিদেশি হলেই হয়ত সব উদ্ধার হয়ে যাবে। যতদিন এই মানসিকতা থেকে বের না হতে পারব আর স্থানীয় কোচদের পথরেখা না দেব ততদিন আমরা ভালো স্থানীয় কোচ পাব না। যেভাবে চলছে এভাবে চলবে। এর আগে অনেক নিম্নমানের কোচ বাংলাদেশ জাতীয় দলের বা এইচপিতে এসেছে। তারচেয়ে ভালো ভালো কোচ দেশেই ছিল। একটা খবরের কাগজে পড়েছি। বাংলাদেশের কোচেরা নেগলেগটেড বাই দ্য ক্রিকেট বোর্ড।

প্রশ্ন : আমাদের সংস্কৃতি মাথায় নিলে দেশীয় কোচরা কি যথেষ্ট ব্যক্তিত্ব নিয়ে কাজ কারার সামর্থ্য রাখেন?

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : আমরা কতজন স্থানীয় কোচকে নিরীক্ষা করেছি? একজন স্থানীয় কোচই (জাতীয় দলে) কাজ করেছেন...ইমরান স্যার (সারওয়ার ইমরান)। হি ডিড ওয়ান্ডারফুল জব। তারপর কোন স্থানীয় কোচকে সুযোগ দিয়েছি? আমরা তো কখনো কাজ করাইনি। সংস্কৃতির ব্যাপারটা কি, একজন কোচ হচ্ছে একজন টিচার। কোচ একজন বাবা, একজন ম্যানেজার, একজন প্রশিক্ষক। অনেক কিছু মিলিয়েই কোচ হয়।

একটা সংস্কৃতির সঙ্গে যখন আরেকটা সংস্কৃতির কাজ করতে দেওয়া হয় তখন কিন্তু কোচিং সহজ ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায় না। এখানে কেবল গেম প্ল্যান না। উঁচু পর্যায়ের মানসিক বোঝাপড়ার ব্যাপারও আছে। এই বোঝাপড়াটা কখনই আরেকটা ভাষার লোক দিয়ে করাতে পারবেন না। আমাদের দলটা এখনো এতটা পরিপক্ব নয়। বাংলার সংস্কৃতি নিয়েই আমরা বড় হই। একটা ছেলে যে ভাত খেয়ে বড় হওয়া হঠাৎ করে যখন তাকে কর্নফ্লেক্স আর পেঁপে খাওয়ানো শুরু করবেন, সে কখনই তার শরীরের সঙ্গে তা মানাতে পারবে না। সাংস্কৃতিক ব্যবধানটা সব সময় রয়ে গিয়েছে, এখনো আছে। আর বাংলাদেশি কোচদের তৈরিতে যে একটা পথরেখা লাগে, একটা সুযোগ লাগে, বিশ্বাস রাখতে হয় সেটাও নেই।

কোচ তৈরিটা অনেকটা লেগ স্পিনার তৈরির মতো। কখনো কখনো খুব খরুচে মনে হয়। কিন্তু পরে সে অনেক কিছু দিতে পারে। তার সবচেয়ে বড় সুবিধা যে সে এখানকার সংস্কৃতিটা জানবে।

আমি একটা ব্যাপার মনে করি। আমাদের অন্যতম শক্তি হচ্ছে, আমাদের আবেগ। আবেগ দিয়েই কিন্তু আমরা একাত্তরের যুদ্ধে জয়ী হয়েছিলাম। আবেগ দিয়ে কিন্তু বহু যুদ্ধে জয়ী হয়েছি। এ আবেগ কতটুকু ইতিবাচকভাবে কাজে লাগাতে পারছি সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় ব্যাপার। বিদেশি একজন কখনই আবেগটা কাজে লাগাতে পারবে না।

প্রশ্ন : একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটটা মিরপুর কেন্দ্রীক, এটা একটু ব্যাখ্যা করবেন?

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : আমি আইসিসিতে একদম কোর ডেভলপমেন্ট নিয়ে কাজ করি। আমি যদি দেখতে পেতাম বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা ছেলে, বরগুনার একটা ছেলে বা পঞ্চগড়ের একটা ছেলে বা বেনাপোলের একটা ছেলে বা কুমিল্লার আখাউড়ার একটা ছেলে বলত যে, আমিও বাংলাদেশের ক্রিকেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখনো ঢাকা শহরেই অবকাঠামো গড়ে উঠেনি, পর্যাপ্ত ইনডোর সুবিধা নেই।

নেটওয়ার্কটা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত ছিল। বয়সভিত্তিক যে দলগুলো আছে সেগুলো সত্যিকার অর্থে সাজিয়ে দেওয়া উচিত ছিল, সেটা পারিনি। আঞ্চলিক ক্রিকেট সংস্থা করার কথা ছিল টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার সময় থেকেই। সেটা নিয়ে আমরা এক বিন্দুও কিন্তু আগাইনি। এই জায়গাগুলোতে কোন কাজই হয়নি।

যদিও আমরা বলে থাকি যে আমাদের ২৫ জন বোর্ড পরিচালক আছেন। কতটুকু কে কোথায় কাজ করছে, কোন কাজের জবাবদিহিতা কী, সেগুলোর হিসেব নিকেশ কিছুই নেই।

প্রশ্ন : দল নির্বাচন নিয়েও অস্থিরতা দেখেন কিনা? গত সিরিজে অনেক খেলোয়াড় খেলানো হয়েছে।

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : হোম সিরিজে এই সুযোগটা আপনি নিতেই পারেন। এটা খারাপ কিছু না। কিন্তু নির্বাচকরা কতটা দল নির্বাচন করছে সেটা একটা প্রশ্ন এবং নির্বাচক কমিটির সদস্য আসলে ক'জন সেটা পরিষ্কার না। ৩২ খেলোয়াড় খেলেছে, এটা খেলতেই পারে। কিন্তু আমরা শুনি যে ম্যানেজারও নাকি নির্বাচক। আবার শুনি দুই সদস্যের নির্বাচক কমিটি, আবার শুনি বোর্ড সভাপতিও নির্বাচক।

প্রশ্ন : নিদহাস ট্রফিতে বাংলাদেশকে কেমন দেখছেন?

আমিনুল ইসলাম বুলবুল : বাস্তব কথা যদি বলেন, ভারতের মূল দলের ৫-৬ জন কিন্তু আসেনি। শ্রীলঙ্কা এখনো পুরো ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়নি। সাকিব ছাড়া আমাদের মূল দলটাই কিন্তু খেলছে, যারা অনেকদিন থেকেই খেলছে সব ফরম্যাটে। আমি মনে করি এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মতই দল।

সূত্র : দ্য ডেইলি স্টার



শেয়ার করুন :


আরও পড়ুন

এপ্রিলেই কোচ, আর দেরি নয়

এপ্রিলেই কোচ, আর দেরি নয়

টি-টোয়েন্টি টেস্টের ক্ষতি করছে : ওয়ালশ

টি-টোয়েন্টি টেস্টের ক্ষতি করছে : ওয়ালশ

প্রস্তুতিতে আমার কোনো ঘাটতি নেই

প্রস্তুতিতে আমার কোনো ঘাটতি নেই

আরাফাতের রেকর্ডে আবাহনী ‘আত্মসমর্পণ’

আরাফাতের রেকর্ডে আবাহনী ‘আত্মসমর্পণ’