করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ায় থেমে গেছে ফুটবলারদের দলবদল। যে কারণে পরের বছর কোন খেলোয়াড় কোথায় যাচ্ছেন সেটি নিয়ে যে রকম গুঞ্জন উঠতে দেখা যেত তার লেশমাত্রও নেই। সবাই একেবারেই নিশ্চুপ। জানার আগ্রহ নেই আগামী মৌসুমে কোথায় খেলতে যাচ্ছেন নেইমার বা পল পগবারা।
নতুন মৌসুম কখন শুরু হবে সেটাই জানে না কেউ। আর ফুটবল ক্লাবগুলো যে আর্থিক সংকটে পড়তে যাচ্ছে তার প্রভাব এমনিতেই পড়তে বাধ্য দলবদলের বাজারে। চলতি সপ্তাহেই আর্থিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান কেপিএমজির এক গবেষণা রিপোর্টে এর আভাসও দেওয়া হয়েছে। বলা হয় যে, করোনার কারণে মৌসুমের বাকি খেলাগুলো বাতিল হলে শুধুমাত্র ইউরোপের শীর্ষ ৫টি লিগের আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে চার বিলিয়ন ইউরোরও বেশি।
এতেই প্রতীয়মান হয় ক্লাবগুলো কতটা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে। আর বিশ্বব্যাপী এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়তে পারে ছোট ক্লাবগুলো।
মোনাকোর সহ-সভাপতি ওলেগ পিত্রোভ বলেছেন, ‘বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে আমরা এভাবে অর্থ আয় করতে পারব না। এমনকি এমবাপে, নেইমার বা পগবা কোথায় যোগ দেবেন সে বিষয়ে পর্যন্ত কারো কোন আগ্রহ নেই। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়।’
সাধারণত উয়েফার নির্দেশনা অনুযায়ী ৩০ জুনের মধ্যেই শেষ হয়ে যায় ইউরোপীয় মৌসুম। আর ওই সময়ের মধ্যেই সাধারণত ভাগ ভাগ করে পরিশোধ করা হয় চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের বেতন ভাতা। করোনার কারণে এবারের মৌসুম শেষ করা না গেলেও আগামী ১ জুলাই থেকে চুক্তিমুক্ত হয়ে যাবেন ম্যানচেস্টার সিটির ডেভিড সিলভা, চেলসির উইলিয়ান বা পিএসজির থিয়াগো সিলভা ও এডিনসন কাভানির মত ফুটবল তারকারা।
এমন পরিস্থিতিতে ক্লাব ও খেলোয়াড় উভয় পক্ষের স্বার্থ অক্ষুণ্ন রেখে করণীয় ঠিক করতে একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করেছে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফা। এরই মধ্যে অবশ্য আর্থিক অনটনে পড়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে ক্লাবগুলো।
লিয়ঁ-সহ ফ্রান্সের কিছু ক্লাব অর্থিক সাশ্রয়ের লক্ষ্যে কম সময় নিয়ে তাদের খেলোয়াড়দের নিয়ে কাজ করছে। এদিকে সুইস ক্লাব সিওন তাদের নয় খেলোয়াড়ের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। যারা সাময়িক বেকরত্ব বরণে রাজি ছিল না।
স্কটল্যান্ডে সাধারণত মে মাসে মৌসুমের শেষ ম্যাচটি মাঠে গড়ানোর পর চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে ধুকতে থাকা হেয়ার্টস ৫০ শতাংশ বেতন নেওয়ার জন্য তাদের স্টাফ ও খেলোয়াড়দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
এদিকে চুক্তির বাইরে থাকা তরুণ খেলোয়াড়রা পড়েছে মহা বিপাকে। আর্সেনালের আলেক্সান্দ্রে লেকাজেট্টিসহ বিভিন্ন খেলোয়াড়ের এজেন্ট ডেভিড ভেন্ডিটেলি তাদের দুর্দশার কথা তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, ‘এসব খেলোয়াড়রা খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে যাচ্ছেন। উন্মুক্ত খেলোয়াড়দের এ রকম অনেক এজেন্টই তাদের জন্য বাজার খুঁজে বেড়াচ্ছে।’
অবশ্য বাজারের চেহারায়ও এসেছে আমূল পরিবর্তন। এখন সবাই দরকষাকষি বাড়িয়ে দিয়েছে। তবে বর্তমান বাস্তবতায় কিছুই করার নেই।
গ্যারেথ বেলসহ অনেক তারকা খেলোয়াড়ের এজেন্ট জোনাথন বার্নেট বলেছেন,‘ এ মুহূর্তে কেউ এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে রাজি নন। এখন আমাদের প্রথমিক কাজ হচ্ছে তাদেরকে ভালোভাবে দেখবাল করে রাখা। এ মুহূর্তে আমরা সবাই চরম অনিশ্চয়তাসহ নানান সমস্যার মুখে পড়েছি। যে কারণে গ্রীষ্মকালীন দল বদল নিয়ে ভাববার ফুরসত নেই। কারণ, আমরা জানি না কতদিন পর্যন্ত চলবে এমন পরিস্থিতি।’