এল ক্লাসিকোর আগে স্বস্তি নেই জিদান-ভালভার্দের

লা লিগা মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকো যখন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল (অক্টোবরে) তখন রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার দুই কোচ জিনেদিন জিদান ও আর্নেস্টো ভালভার্দে দু’জনের সামনে পরাজিত হওয়ার পর চাকরি হারানোর শঙ্কা ছিল। তবে ম্যাচটি স্থগিত হয়ে যাওয়ায় আপাতত সেই শঙ্কা কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছেন তারা। এদিকে বুধবার মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে ক্যাম্প ন্যূতে এক অপরের মুখোমুখি হচ্ছে দুই স্প্যানিশ জায়ান্ট।

লিগে এ মুহূর্তে ১৬ ম্যাচ শেষে দুই দলেরই সংগ্রহে রয়েছে সমান ৩৫ পয়েন্ট। গোল ব্যবধানে এগিয়ে অবশ্য টেবিলের শীর্ষস্থানটা ধরে রেখেছে বার্সেলোনা। বুধবারের হাই-প্রোফাইল লড়াইয়ে যে জিতবে সে-ই বড় দিনের আগে নিজেকে এগিয়ে রাখবে। বিশেষ করে দুই সপ্তাহের শীতকালীন বিরতির আগে একে অপরের থেকে তিন পয়েন্টে এগিয়ে যাওয়াও একটি স্বস্তির বিষয়। যদিও পরাজিত দলটির এ এক ম্যাচের পরেই সব কিছু শেষ হয়ে যাবে না। তারপরেও ম্যাচটি ঐতিহ্যের ও মর্যাদার।

কয়েক সপ্তাহ আগেও অবশ্য দুই দলের চিত্রটা এমন ছিল না। প্রতিটি ম্যাচের পরেই কোচ হিসেবে নতুন কারও নাম যুক্ত হচ্ছিল। কোন গোল হজম করার সাথে সাথে শঙ্কাটা যে বেড়েই চলছিল। রিয়াল মাদ্রিদে জিদানের স্থানে অনেকেই হোসে মরিনহোকে প্রায় দেখেই ফেলেছিল।

অক্টোবরে জিদান বলেছিলেন, ‘অতীতে তুমি কি করেছো তা ফুটবলে সবাই ভুলে যায়। যদিও এ সমস্ত বিষয় নিয়ে আমি কখনই চিন্তিত নই। কিন্তু মানুষের মতামত তো আমি বন্ধ করতে পারব না।’

অন্যদিকে বার্সেলোনার সাথে রোল্যান্ড কোম্যানের সংযুক্তি সময়ের ব্যাপার ছিল। বিশেষ করে ডাচ ফেডারেশন যখন নিশ্চিত করে দিয়েছিল যে আগামী বছর গ্রীষ্মে ইউরো ২০২০’র পরেই তারা কোম্যানকে ছেড়ে দেবে তখন বার্সায় তার যোগ দেওয়ার বিষয়টি সামনে চলে আসে।

তবে সব গুজবে ছাপিয়ে মাঠে দুই দলের পারফরমেন্সই শেষ পর্যন্ত মূখ্য হয়ে ওঠে। বার্সেলোনার অস্থিরতা অবশ্য খুব বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। প্রথম পাঁচ ম্যাচের মধ্যে তারা মাত্র দুটিতে জয়ী হওয়ার পর ধীরে ধীরে পারফরমেন্সের উন্নতি ঘটে। নিজেদের আবারও লড়াইয়ে ফিরিয়ে এনে তারা কোচের আস্থার প্রতিদান দিতে শুরু করে। যে কারণে ভালভার্দের প্রতিও দলের আস্থা ফিরে আসে। যদিও রক্ষণভাগের দুর্বলতা ও অ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ থেকে উড়িয়ে নিয়ে আসা তারকা ফরোয়ার্ড আঁতোয়ান গ্রীজম্যানের ফর্মহীনতায় প্রায়ই ভালভার্দেকে দোষারোপ করা হয়েছে।

নভেম্বরে ভালভার্দে বলেছিলেন, ‘মৌসুমের শুরুতে কেবলমাত্র একটি শিরোপা জয়ের দিকে নজড় থাকে না, তখন সামনে তিন থেকে চারটি শিরোপা থাকে। যে কারণে ম্যাচ হারতে থাকলে হতাশাটা বেড়ে যায়।’

গত মৌসুম থেকেই জিদান ঘাড়ের উপর বেশ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। প্রথম তিনটি লিগ ম্যাচের মধ্যে দুটিতে ড্র করে জিদানের দুঃশ্চিন্তা আরও বাড়িয়ে দেয় রিয়ালের খেলোয়াড়রা। বিশেষ করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের পিএসজির কাছে প্রথম ম্যাচেই ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে জিদানের উপর চাপ বাড়িয়ে দেয় শিষ্যরা। অক্টোবরে ক্লাসিকোর পূর্ব নির্ধারিত ম্যাচের মাত্র সপ্তাহখানেক আগে লা লিগায় নতুন উন্নীত মায়োর্কার সাথে অ্যাওয়ে ম্যাচে পরাজিত হয়ে মাদ্রিদ ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেছিল।

যদিও ইন-ফর্ম স্ট্রাইকার করিম বেনজেমার ফর্ম কিছুটা হলেও জিদানকে স্বস্তি ফিরিয়ে দিয়েছে। তার সাথে দীর্ঘ প্রতিক্ষিত মিডফিল্ডার ফেডে ভালভার্দে ও ১৮ বছর বয়সী উইঙ্গার রড্রিগোকে দলে ভিড়িয়ে জিদান রিয়ালকে টেনে তুলেছেন। মাসের শুরুতে গোঁড়ালির ইনজুরিতে পড়ার আগে ইডেন হ্যাজার্ডও নিজেকে ফিট প্রমাণ করেছিলেন। তবে নতুন ইনজুরিতে আবারও নতুন বছরের আগ পর্যন্ত তিনি মাঠে বাইরে চলে গেছেন।

জিদানকে নিয়ে মাদ্রিদ শিবিরে স্বস্তি ফিরে আসলেও বার্সেলোনায় ভালভার্র্দেকে নিয়ে অনিশ্চয়তা এখনও কাটেনি। লিওনেল মেসির ফেরার কারণে পুরো দল উন্নতি করেছেন এটাও শতভাগ গ্যারান্টি দিয়ে বলা যাবে না। তবে দুই হ্যাটট্রিকসহ ৬ ম্যাচে চার এস্টিস্টে মেসি অবশ্যই দলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে চলেছেন। গ্রিজম্যানও তার ফর্ম ফিরে পেয়েছেন, গত পাঁচ ম্যাচে করেছেন তিন গোল।

লা লিগা মৌসুমের অর্ধেক পথ পাড়ি দেওয়ার দ্বারপ্রান্তে রয়েছে শীর্ষ দলগুলো। স্বস্তির বিষয় হচ্ছে জিদান ও ভালভার্দে নিজ নিজ দলে মাথা উঁচু করেই দাঁড়িয়ে আছেন। ক্লাসিকো শুধুমাত্র দুই দলের দুই কান্ডারির মধ্যেই লড়াই নয়, নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখারও সুক্ষ্ম একটি লড়াই এখানে রয়ে গেছে। এ লড়াইয়ে যে এগিয়ে যাবে সে কিছুটা হলেও নিজেকে ও একইসাথে দলকেই এগিয়ে রাখবে।