দুইবার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত পিএসজির কাছে পয়েন্ট হারালো রিয়াল মাদ্রিদ। দ্বিতীয়ার্ধে দুই মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে রিয়াল মাদ্রিদের সাথে ২-২ গোলে ড্রয়ের মাধ্যমে মাঠ ছেড়েছে পিএসজি। এ ড্রয়ে গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে পরের রাউন্ডে পা রাখলো পিএসজি। দ্বিতীয় দল হিসেবে মাদ্রিদও গেছে নক আউট পর্বে।
সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে প্রতিদ্বন্দ্বীতাপূর্ণ ম্যাচটিতে পুরোটা সময়ই মাদ্রিদের আধিপত্য ছিল। ৭৯ মিনিটে করিম বেনজেমার দ্বিতীয় গোলে মাদ্রিদ যখন ২-০ গোলে এগিয়ে গিয়েছিল তখন স্প্যানিশ জায়ান্টদের জয়টা সময়ের ব্যপার ছিল মাত্র। কিন্তু ম্যাচের নাটকীয়তা তখনো বাকি। ৮১ মিনিটে কিলিয়ান এমবাপ্পের গোলে এক গোল পরিশোধ করার দুই মিনিটের মধ্যে পাবলো সারাবিয়া দলকে গুরুত্বপূর্ণ এক পয়েন্ট উপহার দেন।
ম্যাচ শেষে পিএসজি কোচ থমাস টাচেল বলেন, ‘দীর্ঘ সময় ধরে রিয়ালই ভালো খেলেছে। কিন্তু আজকের এ ড্র’টায় ভাগ্য আমাদের সহায় ছিল।’
বদলী হিসেবে খেলতে নামা গ্যারেথ বেলকে স্বাগতিক সমর্থকরা মিশ্র অভিবাদন জানিয়েছে। ড্রয়ের ফলে মাদ্রিদের থেকে পাঁচ পয়েন্ট এগিয়ে গ্রুপ-এ’তে পিএসজির শীর্ষস্থান নিশ্চিত হলো। দিনের শুরুতে ক্লাব ব্রাগ ও গ্যালাতাসারের ম্যাচটি ১-১ গোলে ড্র হওয়ায় মাদ্রিদের দ্বিতীয় স্থান নিশ্চিত হয়েছে।
সেপ্টেম্বরে পার্ক ডি প্রিন্সেসে পিএসজির কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হওয়ার পর মাদ্রিদের এ ফিরে আসাকে অনেকেই প্রশংসা করেছে। মাদ্রিদ কোচ জিনেদিন জিদান বলেছেন, ‘আজ খেলোয়াড়রা দারুণ খেলেছে। যদিও তারা কেউই এ ফলাফলে খুশি নয়। কিন্তু ৮০ মিনিট আমরা যেভাবে খেলেছি তাতে সকলেরই খুশি হওয়া উচিত। পুরো ম্যাচের পারফরমেন্সে আমি দারুণ সন্তুষ্ট।’
দ্বিতীয়ার্ধে গোঁড়ালির ইনজুরিতে পড়ায় তিন সপ্তাহ পর বার্সেলোনার বিপক্ষে মৌসুমের প্রথম এল ক্ল্যাসিকোতে এডেন হ্যাজার্ডের খেলা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। হ্যামস্ট্রিং ইনজুরির সমস্যা কাটিয়ে উঠলে টাচেলের বিবেচনা মূল দলে আসতে পারেননি নেইমার। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ইদ্রিসা গুয়ের স্থানে বদলী হিসেবে খেলতে নেমেছিলেন তিনি।
সারাবিয়ার সমতাসূচক গোলের যোগানদাতা ছিলেন নেইমার। টাচেল বলেছেন, ‘আমি নেইমারকে নিয়ে কোন ঝুঁকি নিতে চাইনি। তাকে দিয়ে শুধুমাত্র ম্যাচটা শেষ করতে চেয়েছি।’
আগামী গ্রীষ্মে দলবদলের বাজারে মাদ্রিদের আগ্রহের তালিকায় শীর্ষে রয়েছেন এমবাপ্পে। সোমবার ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনেও জিদানও সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এদিকে পিএসজির হয়ে শততম ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন ফেঞ্চ তারকা এমবাপ্পে। প্রথম থেকেই তিনি নিজেকে প্রমাণে ব্যস্ত ছিলেন।
পিএসজির হয়ে যেখানে এমবাপ্পে একাই লড়াই করে গেছেন সেখানে মাদ্রিদের পুরো দলটি ছিল একতাবদ্ধ। বল আদান প্রদান, আগ্রাসন, রক্ষণভাগ সবদিক থেকেই তারা পিএসজির থেকে এগিয়ে ছিল। তার ফলও আসে ১৭ মিনিটে। হ্যাজার্ডের থেকে শুরু হয়ে ইসকো ও ফেডে ভালভার্দের সহযোগিতায় বেনজেমা রিয়ালকে এগিয়ে দেন। এরপর পিএসজি দুটো সুযোগ পেয়েও তা কাজে লাগাতে পারেননি।
অ্যাঙ্গেল ডি মারিয়ার কাছ থেকে বল পেয়ে এমবাপ্পে সুযোগ হারিয়েছেন। মাওরো ইকার্দিকে এরপর ডিবক্সের মধ্যে ফাউল করে বসেন মাদ্রিদ গোলরক্ষক থিবাট কুর্তোয়া। পর্তুগীজ রেফারি আর্টার ম্যানুয়েল কুর্তোয়াকে লাল কার্ড দেখান ও পেনাল্টির নির্দেশ দেন। কিন্তু ভিএআর রিভিউতে দেখা গেছে তার আগে ইদ্রিসা মার্সেলোকে ফাউল করেছেন। যে কারণে রেফারি তার সিদ্ধান্ত বাতিল করতে বাধ্য হন।
৭৯ মিনিটে মার্সেলোরা ক্রস থেকে বেনজেমা নিজের দ্বিতীয় গোল করলে মাদ্রিদ ২-০ গোলে এগিয়ে যায়। কিন্তু মাদ্রিদের এ গোল উৎসব খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। মুয়েনিয়ারের ক্রস থেকে এমবাপ্পে পিএসজি শিবিরে স্বস্তি ফেরান। দুই মিনিট পর নেইমার পুরো মাদ্রিদ রক্ষণভাগকে বোকা বানিয়ে সারাবিয়াকে দিয়ে সমতাসূচক গোলটি করান।