অধিনায়ক হিসেবে প্রথমবারের মতো শিরোপা উঁচিয়ে ধরার সুযোগ ছিল জামাল ভুঁইয়ার সামনে। তবে সেটি আর হলো না। সেমিফাইনালের প্রত্যাবর্তনের পুনরাবৃত্তি করতে পারেনি চট্টগ্রাম আবাহনী। প্রথমে দুই গোল হজম করে শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার তেরেঙ্গানু এফসি ক্লাবের কাছে হেরে গেছে স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে প্রতিযোগিতার তৃতীয় আসরের ফাইনালে ২০১৫ সালের চ্যাম্পিয়নদের ২-১ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তেরেঙ্গানু। ৬২ বছরের ইতিহাসে দেশের বাইরে প্রথমবারের মতো কোন টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েই শিরোপার স্বাদ পেল মালয়েশিয়ার দলটি।
টুর্নামেন্টের প্রথম আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল স্বাগতিক চট্টগ্রাম আবাহনী। পরের আসরে সেমিফাইনাল থেকেই বিদায় নেয়। এক মৌসুম পর আবারও ফাইনালে নাম লিখিয়ে শিরোপা পুনরুদ্ধারের স্বপ্ন দেখেছিল তারা। তবে সূচনা লগ্নের দুই গোল খেয়ে আর পেরে উঠতে পারেনি।
শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের শুরু থেকেই উভয় দল আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলা শুরু থেকে। তবে আগে সুযোগ পায় স্বাগতিকরা। ১৩ মিনিটেই তেরেঙ্গানুর ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল মারুফুল হকের শিষ্যরা। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি রতকোভিচ লুকা। মাঝমাঠ থেকে চিনেদু ম্যাথিউয়ের পাসে বল পেয়েছিলেন এ ফরোয়ার্ড। প্রতিপক্ষের গোলরক্ষককে একা পেয়েও নিশানা ভেদ করতে ব্যর্থ হন লুকা।
এরপরই ছন্দ হারিয়ে বসে বন্দরনগরীর দলটি। সেই সুযোগে স্বাগতিক রক্ষণকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে মাত্র পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে গোটা মাঠকে স্তব্ধ করে দেয় তেরেঙ্গানু এফসি। ১৫ মিনিটে নিজেদের সুযোগ কাজে লাগাতে বিন্দুমাত্র ভুল করেনি। ৩৫ হাজারের বেশি দর্শকে ভরা এম এ আজিজ স্টেডিয়ামের গ্যালারি একেবারে নিস্তব্ধ করে দিয়ে দলকে এগিয়ে নেন হাকিম বিন মামাত। বাঁ প্রান্ত দিয়ে অধিনায়ক লি টাকের দারুণ এক কর্নারে বুলেট গতির হেডে নিশানা ভেদ করেন এ ফরোয়ার্ড (১-০)।
প্রথম গোলের ধাক্কা ভোলার আগেই পাঁচ মিনিট বাদে দ্বিতীয় ধাক্কায় টালমাটাল চট্টগ্রাম আবাহনী। এবার আঘাত হানলেন মোহাম্মদ আলিয়াস। ৩০ গজ দূর থেকে ক্রস পেয়ে সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়েই ছুটলেন বাম প্রান্ত দিয়ে। তার পথ আটকানোর চেষ্টা করেছিলেন দুই ডিফেন্ডার। কিন্তু দারুণ ড্রিবলিং করে তাদেরও বোকা বানালেন আলিয়াস। গোলরক্ষক নেহালকে ফাঁকি দিয়ে ঠিকই সেই শট জড়ালেন তিনি (২-০)।
দুই গোল খেয়ে পরিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে আক্রমণ চালাতে থাকে স্বাগতিকরা। ৩০ মিনিটে মাথা গরম করে হলুদ কার্ড দেখে বসেন অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া। ৩৩ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ মিস করেন রতকোভিচ লুকা। সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে তেরেঙ্গানুর ডি-বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন মন্টেনিগ্রো জাতীয় দলের এ ফরোয়ার্ড। কিন্তু অগ্রসর হওয়া গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে পারেনননি।
বিরতিতে যাওয়ার আগে আবার সুযোগ মিস করে কোচ মারুফুলের শিষ্যরা। ফলে ২-০ গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যেতে হয় তাদের। তবে বিরতি থেকে ফিরে এসেই ম্যাচে ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে ব্লু পাইরেটসরা। সেই ফল পেতেও খুব বেশি সময় লাগেনি। দ্বিতীয়ার্ধে মাঠে নামার তিন মিনিটের মধ্যেই ব্যবধান কমিয়ে আনে চট্টগ্রাম আবাহনী।
গোলের নায়ক রতকোভিচ লুকা। প্রথমার্ধে বেশ কয়েকটি সুযোগ মিস করা এ ফরোয়ার্ড এবার ডান পায়ের জোড়ালো শটে নিশানা ভেদ করেন (২-১)। উৎসবে মেতে ওঠে এমএ আজিজের গ্যালারি।
ম্যাচে ফিরতে মরিয়া জামাল ভূঁইয়ার দল তখনো আক্রমণের ধার কমায়নি। কিন্তু ফরোয়ার্ডদের ব্যর্থতায় ম্যাচে আর ফেরা সম্ভব হয়নি। পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই ছাড়তে হয় মাঠ। ফরোয়ার্ড রতকোভিচ লুকা পুরো ৯০ মিনিট মাঠ চষে বেড়িয়ে কম করে হলেও পাঁচটি গোলের সুযোগ সৃষ্টি করেছিলেন। কিন্তু ফিনিশিং দিতে ব্যর্থ হন। ফলে হার মেনেই মাঠ ছাড়ে তারা।
এ টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন দল তেরেঙ্গানু পেয়েছে ট্রফি সহ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। রানার আপ চট্টগ্রাম আবাহনী পেয়েছে ২৫ হাজার মার্কিন ডরার। ম্যাাচ শেষে প্রধান অতিথি হিসেবে বিজয়ীদের হাতে পুরস্কারের অর্থসহ ট্রফি তুলে দেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল।