দীর্ঘ ১২ বছর পর আবারও কোপা আমেরিকার সুপার এল-ক্লাসিকোতে মুখোমুখি হয়েছে ল্যাটিন আমেরিকার দুই জায়ান্ট ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচের চৌদ্দবারের চ্যাম্পিয়নদের আরও একবার হারিয়ে দিল আটবারের চ্যাম্পিয়নরা। এই জয়ের সুবাদে কোপার ফাইনালে চলে গেল ব্রাজিল।
বুধবার (৩ জুলাই) সালভাদরে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় পায় ব্রাজিল। গুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে গোল করেছেন জেসুস ও ফিরমিনো। গেল দুই আসরের ফাইনাল খেললেও এবারের আসরে সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায় নিতে হলো আর্জেন্টিনাকে।
কোপা আমেরিকার মঞ্চে শুরু থেকেই নড়বড়ে ছিল আর্জেন্টিনা শিবির। কলম্বিয়ার বিপক্ষে পরাজয় দিয়ে হোঁচট খায় আলবিসেলেস্তেরা। পরে ম্যাচে প্যারাগুয়ের সঙ্গে ড্র করে আবারো ধাক্কা খায় মেসির দল। পরে কাতারকে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। এরপর শেষ আটে ভেনেজুয়েলাকে সহজেই হারিয়ে সেফিফাইনাল নিশ্চিত হয়।
অন্যদিকে পুরো টুর্নামেন্ট জুড়েই দারুণ ফুটবল খেলেছে ব্রাজিল। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই কোয়ার্টার ফাইনাল, এরপর প্যারাগুয়েকে ট্রাইব্রেকারে হারিয়ে সেমিফাইনালের টিকিট পায় তিতের দল।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই দুর্দান্ত এক আক্রমণ করেন রবার্তো ফিরমিনো। তবে তার সে প্রচেষ্টা রুখে দেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক ফ্রাঙ্কো আরমানি। তবে পরবর্তীতে সেটিকে অফসাইড দেখানো হয়।
নবম মিনিটের মাথায় ফের আর্জেন্টাইন রক্ষণে করে স্বাগতিকরা। ফরোয়ার্ড গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে রুখতে গিয়ে ফাউল করে বসেন নিকলাস তালিয়াফিকো। ম্যাচের দশ মিনিট হওয়ার আগেই প্রথম হলুদ কার্ড দেখান রেফারি।
তবে ম্যাচে প্রথম গোলের সুযোগটা তৈরি করেছিল আর্জেন্টিনাই। ফাঁকায় থাকা লিওনার্দো পারেদেস ১২ মিনিটের মাথায় দুর্দান্ত এক শট নেন ব্রাজিলের গোলবারের উদ্দেশ্যে। যা পরাস্ত করে গোলরক্ষক অ্যালিসন বেকারকেও। কিন্তু তা একটুর জন্য বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। বড় সুযোগ হারায় মেসির দল।
১৯ মিনিটেই প্রথম গোল করে ফেলে ব্রাজিল। অধিনায়ক দানি আলভেস দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল সামনে বাড়ান রবার্তো ফিরমিনোকে উদ্দেশ্যে করে। তবে তিনি তা রিসিভ না করে সরাসরি পাস দেন ডি-বক্সে ফাঁকায় দাঁড়ানো গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে। সুযোগসন্ধানী হেসুস কোনো ভুল করেননি গোলের সহজতম এ সুযোগটি কাজে লাগাতে।
আর্জেন্টিনার সামনে এ গোল শোধ করার দারুণ এক সুযোগ আসে ৩০তম মিনিটে। বাম পাশ থেকে লিওনেল মেসির ফ্রি-কিকে সবার চেয়ে ওপরে লাফিয়ে মাপা হেড করেন সার্জিও আগুয়েরো। কিন্তু সেটি গিয়ে আঘাত হানে ক্রসবারে। সেবারও গোল মিস করে আর্জেন্টিনা।
প্রথমার্ধের বাকি সময়টা দুই পক্ষের আক্রমণ পাল্টা আক্রমণে শেষ হয়।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ধার কারো থেকে কারো কম ছিল না! মাঝে মাঝে আর্জেন্টিনার দুর্বল ডিফেন্স লক্ষ্যনীয় ছিল। তবে ফ্রি-কিক থেকে মেসি করার আরও একটি সুযোগ পায়। ম্যাচের ৬৬তম মিনিটে নিজেই ফাউলের শিকার হলে ডি-বক্সের বাইরে থেকে দুর্দান্ত শট নিলেও লিভারপুলের ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসনের অবদানে বেঁচে যায় আটবারের চ্যাম্পিয়নরা!
যখনই আর্জেন্টিনার গোল মুখে ব্রাজিল গোল নিয়ে যায় দেখা যায় তাদের দুর্বল ডিফেন্স! এই সুযোগকে কাজে লাগায় ব্রাজিল। ম্যাচের ৭১তম মিনিটে ফিরমিনোর গোলে ব্যবধান দিগুন করেন ব্রাজিল।
জেসুসের করা প্রথম গোলে অবদান ছিল ফিরমিনোর; ঠিক পরের গোলটিতে আগের অবদান রাখেন জেসুস; মনে হয় যেন একে অন্যের দাবী মেটালেন! আর্জেন্টিনার ডিফেন্সকে ভাঙে ছুরে খুব সহজে ফিরমিনোকে দিয়ে গোলটি করান জেসুস।
২-০ গোলে এগিয়ে থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ যখন ব্রাজিলের হাতে তখক গেল শোধে মরিয়া আর্জেন্টিনা চোটে বসলেন ব্রাজিলের ওপর। ম্যাচের ৭৪তম মিনিটে মার্তিনেজ ফিরমিনোকে ফাউল করলে শুরু হয় বাগবিতণ্ডা। যেখানে মাঠে ঢুকে পড়েন মেসিদের কোচ লিওনেল স্কালোনি; রেফারী তাকেও হলুদ কার্ড দেখায়!
বার্সার হয়ে ফ্রি-কিক থেকে গোলের অভাব নেই মেসির। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এই ম্যাচে ছিলেন ব্যর্থ। ম্যাচের ৭৭তম মিনিটে ফের ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু ব্রাজিলের জমাটবাঁধা রক্ষন ভাঙতে পারেননি মেসি। মাত্র ২০ গজ দূরে থেকে শটটি নিয়েছিলেন মেসি।
বার্সার হয়ে ফ্রি-কিক থেকে গোলের অভাব নেই মেসির। কিন্তু জাতীয় দলের জার্সি গায়ে এই ম্যাচে ছিলেন ব্যর্থ। ম্যাচের ৭৭তম মিনিটে ফের ফ্রি-কিক পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু ব্রাজিলের জমাটবাঁধা রক্ষন ভাঙতে পারেননি মেসি। মাত্র ২০ গজ দূরে থেকে শটটি নিয়েছিলেন মেসি।
শেষের দিকে গোল শোধ তো দূরে থাক ব্রাজিলের আক্রমণ সামলাতেই বেস্ত ছিল আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডাররা। কিন্তু গোল করতে পারেনি স্বাগতিকরা। ফলে ২-০ গোলেই শেষ হয়ে কোপার প্রথম সেমি-ফাইনাল। আগামী ৭ জুলাই ফাইনালে খেলবে ব্রাজিল; তাদের প্রতিপক্ষে হতে পারে- পেরু অথবা চিলি।