লিওনেল মেসির ঝলকে লিভারপুলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালের পথে বার্সেলোনা। বুধবার ঘরের মাঠে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের জোড়া লক্ষ্যভেদে ৩-০ গোলে সেমিফাইনালের প্রথম লেগ জিতেছে তারা।
মেসিকে শুরুতে জ্বলে উঠতে দেয়নি লিভারপুল। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড তার জাদুকরী ঝলক দেখালেও অতিথিদের রক্ষণ ভেদ করতে পারেননি শুরু থেকে। বরং প্রথম মিনিট থেকে বল দখলে ও বার্সার বক্সের আশেপাশে জায়গা করে নিতে থাকে লিভারপুল।
মোহাম্মদ সালাহ কয়েকবার বার্সার ডিফেন্ডারদের পাশ কাটিয়ে গোলমুখে শট নিয়েছিলেন। তার আগেই স্বাগতিক খেলোয়াড়রা তাকে প্রতিহত করে।
অন্যদিকে দারুণ দক্ষতায় মেসিকে রুখে দেন ফুটবলারদের ভোটে ইংল্যান্ডের বর্ষসেরা খেলোয়াড় ভার্জিল ফন ডাইক। অবশ্য ১৩ মিনিটে এই ডাচ ডিফেন্ডারের হাতে বল লাগার দাবিতে পেনাল্টির আবেদন করেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।
দুই মিনিট পর ফিলিপে কৌতিনিয়োকে বল বাড়িয়ে দেন তিনি। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডের শট সেভ করেন লিভারপুল গোলরক্ষক আলিসন।
মেসি-কৌতিনিয়োকে আটকাতে পারলেও লিভারপুল গোল খায় তাদের সাবেক ফরোয়ার্ড লুই সুয়ারেসের কাছে। ২৬ মিনিটে জোর্দি আলবা বক্সের মধ্যে খুঁজে পান উরুগুয়ান স্ট্রাইকারকে। হুয়ান মাতিপ ও ফন ডাইকের মাঝ দিয়ে সামনে এগিয়ে ডান পায়ে জালে বল ঠেলে দেন লিভারপুল থেকে বার্সায় আসা সুয়ারেস। চ্যাম্পিয়নস লিগে এটি ছিল কাতালানদের ৫০০তম গোল। রিয়াল মাদ্রিদের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেছে বার্সা।
নাবি কেইটার ইনজুরিতে বদলি মাঠে নামা হেন্ডারসন ৩৫ মিনিটে সুযোগ পান। কিন্তু তার বাঁ পায়ের শট ক্রসবারের উপর দিয়ে গেলে সমতা ফেরাতে পারেনি লিভারপুল। দুই মিনিট পর তার পাস থেকে সালাহর শট রুখে দেন ক্লেমন্ত লংলে। এর আগে সাদিও মানের শট ক্রসবারের উপর দিয়ে মাঠের বাইরে জায়গা করে নেয়।
দ্বিতীয়ার্ধে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে লিভারপুল। তাদের দারুণ কয়েকটি শট দারুণ সেভে লক্ষ্যভ্রষ্ট করেন মার্ক আন্দ্রে টের স্টেগেন। ৪৭ মিনিটে সালাহ ও উইনালডামের সমন্বিত চেষ্টায় বক্সের মাঝে বল পান জেমস মিলনার। তার বাঁ পায়ের শট দুর্দান্ত ডাইভে এক হাতে রুখে দেন জার্মান গোলরক্ষক।
৫৩ মিনিটে সালাহর নিচু শটও জালে ঢুকতে পারেনি টের স্টেগেনের বাধায়। মিলনার আবারও বার্সা গোলরক্ষককে পরাস্ত করতে ব্যর্থ হন। ৫৯ মিনিটে উইনালডামের বাড়ানো বলে জোরালো শট নেন তিনি। কিন্তু বল সোজা চলে যায় টের স্টেগেনের হাতে।
গোলরক্ষকের বীরত্বের পর বার্সা দ্বিগুণ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ৭৫ মিনিটে। বক্সে ঢুকে পড়া সার্জি রবের্তোকে রবার্টসন বাধা দিলেও বল পায়ে পান সুয়ারেস। তার উঁচু শট ক্রসবারে লেগে ফিরে এলে ৬ গজ দূরে দাঁড়িয়ে থাকা মেসি বুক দিয়ে বল ঠেকিয়ে ফাঁকা গোলপোস্ট পেয়ে সহজে লক্ষ্যভেদ করেন।
এই গোলেই দ্বিতীয় খেলোয়াড় হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগের এক আসরে তিনটি ভিন্ন ইংলিশ ক্লাবের (টটেনহাম, ম্যানইউ ও লিভারপুল) বিপক্ষে গোলের কীর্তি গড়েন মেসি। এর আগে ২০১৪ সালে এই কীর্তি ছিল থোমাস মুলারের।
এক গোলে ক্ষান্ত হননি মেসি। ৮১ মিনিটে ফ্যাবিনহোর ফাউলের শিকার হন তিনি। তাতে ৩০ গজ দূর থেকে পাওয়া ৮২ মিনিটের ফ্রি কিকে লিভারপুলের রক্ষণ দেয়ালের উপর দিয়ে বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী। ইংল্যান্ডের ক্লাবগুলোর বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৩৩ ম্যাচ খেলে ২৬ গোলের মালিক হলেন মেসি।
ভিন্ন একটি দেশের ক্লাবের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গোলদাতার তালিকায় রোনালদোর (জার্মান ক্লাবের বিপক্ষে) পাশে বসলেন তিনি। আরেকটি অর্জনে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ডের পাশে বসেছেন মেসি। গত শনিবার ক্লাব ক্যারিয়ারের ৬০০তম গোল করেন জুভেন্টাসের রোনালদো। বুধবার দুই গোল করে এই মাইলফলকে পৌঁছালেন মেসিও।
দুই মিনিট পর গুরুত্বপূর্ণ অ্যাওয়ে গোলের দারুণ সুযোগ নষ্ট করে লিভারপুল। বার্সার রক্ষণ ভেদ করে বল পাঠান মানে। ফিরমিনোর বাঁকানো শট স্বাগতিক দুই ডিফেন্ডার গোললাইন থেকে ফিরিয়ে দেন। ফিরতি শট নেন সালাহ, কিন্তু গোলপোস্টে আঘাত করে।
ইনজুরি সময়ের ষষ্ঠ মিনিটে উসমান দেম্বেলে একা গোলরক্ষককে পেয়েও ব্যবধান চারে নিতে পারেননি। তার শট সরাসরি চলে যায় আলিসনের হাতে। আগামী মঙ্গলবার অ্যানফিল্ডে লিভারপুলের মুখোমুখি হবে বার্সা। বলার অপেক্ষা রাখে না, প্রথম লেগের এই বড় জয়ে স্বস্তি নিয়ে তারা খেলবে দ্বিতীয় লেগ।