১৯৯১ সালে প্রথম যখন নারীদের বিশ্বকাপ ফুটবল চালু হয়েছিল তখন শুধুমাত্র স্বাগতিক চায়নায় টেলিভিশনে ম্যাচগুলো উপভোগ করার সুযোগ ছিল। অথচ আধুনিকতার ছোঁয়ায় ফুটবল বিশ্বে নারীরাও এখন সমান জনপ্রিয়। তারই প্রমান আসন্ন ফ্রান্স নারী বিশ্বকাপের ম্যাচগুলো ২০০’টিরও অধিক দেশে সরাসরি সম্প্রচারিত হবে।
আগামী ৭ জুন থেকে ৭ জুলাই পর্যন্ত ফ্রান্সে অনুষ্ঠিতব্য ২৪টি দেশের অংশগ্রহণে এই বিশ্বকাপ এক বিলিয়নেরও অধিক দর্শক টানতে সক্ষম হবে বলে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ন্ত্রন সংস্থা ফিফা আশা করছে। ধারণা করা হচ্ছে এর মাধ্যমে পুরষ ফুটবলের ব্যপক জনপ্রিয়তায় নারীরাও কিছুটা হলেও মাইলেজ পাবে। বিশেষ করে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের খেলার যোগ্যতা অর্জণ করা জ্যামাইকা ও দক্ষিণ আফ্রিকায় নারী ফুটবলের অগ্রযাত্রা আরো এগিয়ে যাবে।
কিছু কিছু দেশে বিশেষ করে যেখানে জাতীয় দলের সাফল্যে নারী ফুটবল বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছে সেখানে টেলিভিশনে অনেক ভাবেই নারীদের ম্যাচগুলো প্রদর্শন করা হয়। এমনকি সেখানে ধারাভাষ্যকার কিংবা বিশেষজ্ঞ হিসেবেও নারীদের কাজ করতে দেখা যায়। এই ম্যাচগুলো উপভোগের দর্শকও বেড়েছে। তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ও চারবারের অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় টেলিভিশন দর্শক। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখেছিল প্রায় ২৭ মিলিয়ন ফুটবল পাগল মানুষ।
এমনকি কানাডার ভ্যানকুয়েভারে অনুষ্ঠিত হওয়ায় টাইম জোনের কারনে পৃথিবীর অনেক দেশেই সময়ের ব্যবধান হবার পরেও দর্শক সংখ্যা একটুও কমেনি। ফাইনালে জাপানকে পরাজিত কওে সর্বশেষ ঐ আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে জয়ী ও ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের ফাইনালে পরাজিত জাপানও এক্ষেত্রে একেবারেই পিছিয়ে নেই। উভয় আসরেই তাদের প্রতিপক্ষ ছিল যুক্তরাষ্ট্র। লন্ডন গেমসে ৩০ শতাংশ দর্শক ফাইনাল ম্যাচটি উপভোগ করেছিল।
ফ্রান্স টেলিভিশনের স্পোর্টস পরিচালক লরেন্ট এরিক লি লে বলেছেন, ‘টেলিভিশনে ক্রীড়ার আলাদা একটি ঐতিহ্য আছে। তবে এর মধ্যে বেশীরভাগই পুরুষদের ক্রীড়ার মাধ্যমে তৈরী হয়েছে। তারপরেও বর্তমানে অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। নারীদের ফুটবলটা অনেক পরে আলোর মুখ দেখেছে। হতে পারে এই ঐতিহ্য একসময় পাল্টে যাবে।’
পুরুষদের বিশ্বকাপের সময় প্রাইম টাইমে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন বাবদ যা আয় হয়েছির তার থেকে অর্ধেকও আয় হবেনা নারীদের ম্যাচ থেকে। তা জেনেও আসন্ন টুর্নামেন্টের জন্য বিজ্ঞাপন সংস্থাগুলো কোন কার্পন্য করছে না।
নারী ফুটবলে অন্যতম পরাশক্তির নাম জার্মানী। ২০১১ সালে বিশ^কাপের স্বাগতিক হিসেবে জার্মানীতে নারীদের ফুটবল দারুন জনপ্রিয়তা লাভ করে। সেখানে নিয়মিত টেলিভিশনে জাতীয় দলের ম্যাচগুলো প্রদর্শিত হয়। ব্রাজিলে এই প্রথমবারের মত দেশটির সচেয়ে বড় টেলিভিশন চ্যানেল গ্লোবো জাতীয় দলের সবগুলো ম্যাচ সরাসরি প্রদর্শন করবে।
জর্ডান ফুটবল এসোসিয়েশন ও ওয়েস্ট এশিয়ান ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি প্রিন্স আলি বিন আল-হুসেন বলেছেন নারীদের ফুটবলে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে নারীদের ফুটবলে সম্প্রচার প্রতিষ্ঠানগুলো সম্পৃক্ত না থাকায় সেখানে কোন রোল মডেল তৈরী হয়না। ইউরোপেও কোন ক্লাব প্রতিযোগিতা টেলিভিশনে দেখানো হয়না।