গোল পাল্টা গোলে রোমাঞ্চে টইটুম্বুর ছিল ম্যানচেস্টার সিটি ও টটেনহাম হটস্পারের লড়াই। ৭ গোলের এই টানটান উত্তেজনার লড়াইয়ে জিতেছে সিটিজেনরা, কিন্তু অ্যাওয়ে গোলের সুবিধা নিয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠেছে টটেনহাম। বুধবার ইতিহাদ স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগ তারা হেরেছে ৪-৩ গোলে। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-৪ গোল হওয়ার পরও ম্যানসিটির মাঠে তিন গোল করায় শেষ চারে স্পাররা।
মাত্র ২১ মিনিটের মধ্যে ৫ গোল হয়। প্রথম গোল উদযাপন করে ম্যানসিটি। ৪ মিনিটে কেভিন ডি ব্রুইনের পাস থেকে বক্সের মধ্যে বল নিয়ে ঢোকেন রহিম স্টারলিং। টটেনহামের কিয়েরন ট্রিপিয়েরকে বোকা বানিয়ে ডান পায়ের শটে উগো লরিকে পরাস্ত করেন ইংলিশ ফরোয়ার্ড।
টটেনহামের সমতা ফেরাতে সময় লেগেছে মাত্র ৩ মিনিট। ডিবক্সের প্রান্ত থেকে বাঁ দিকে বল পাঠান ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন। বল পায়ে নিয়ে ৮ গজ দূর থেকে লক্ষ্যভেদ করেন সন হিউং মিন। ৭ মিনিটের সমতাসূচক গোলেই থেমে থাকেননি দক্ষিণ কোরিয়ার ফরোয়ার্ড।
হিউং মিন তার দ্বিতীয় গোলের দেখা পান ১০ মিনিটে। এরিকসেনের বাড়ানো বলে ১৭ গজ দূর থেকে উঁচু ও কোনাকুনি শটে জালে জড়ান তিনি।
পরের মিনিটে ম্যানসিটি ফেরায় সমতা। সের্হিও আগুয়েরো বক্সের মধ্যে খুঁজে পান বের্নার্দো সিলভাকে। টটেনহামের বাজে ডিফেন্ডিংয়ের কারণে দ্বিতীয় গোল পায় সিটিজেনরা। সিলভার শট রোজ আটকাতে পারেননি। বল লরির হাতে লেগে জালে জড়ায়।
শেষ মুহূর্তে স্টারলিংয়ের গোল বাতিল হয় ভিএআরেডি ব্রুইনের দারুণ পাসে ২১ মিনিটে এগিয়ে যায় ম্যানসিটি। ডান দিক থেকে বেলজিয়ান মিডফিল্ডারের বাড়ানো বলে দূরের পোস্ট থেকে চোখের নিমিষে গোল করেন স্টারলিং।
বিরতির ঠিক আগে ডি ব্রুইনের শট সরাসরি চলে যায় লরির হাতে। দ্বিতীয়ার্ধের চতুর্থ মিনিটে তিনি ফ্রি কিক ক্রসবারের উপর দিয়ে মারেন। ৫১ মিনিটের শট ঠেকিয়ে স্টারলিংকে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করেন লরি। চার মিনিট পর বক্সের প্রান্ত থেকে ডি ব্রুইনের ঠাণ্ডা মাথায় নেওয়া শট একহাতে ঠেকান টটেনহাম গোলরক্ষক।
ম্যানসিটি দুই লেগের লড়াইয়ে এগিয়ে যায় ৫৯ মিনিটের গোলে। ডি ব্রুইনের বাড়ানো বলে আড়াআড়ি শটে কাছের পোস্ট দিয়ে দলের চতুর্থ গোল করেন আগুয়েরো।
এরপরও স্বাগতিকদের স্বস্তিতে থাকতে দেয়নি স্পাররা। ৭৩ মিনিটে কর্নার থেকে উড়ে আসা বল ফের্নান্দো লরেন্তের গায়ে লেগে জালে জড়ায়। বল তার হাতে লেগে গোল হয়েছে এমন সন্দেহে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারি প্রযুক্তির ব্যবহার হয়। দুই মিনিট যাচাই শেষে গোলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন রেফারি কানেইত কাকির।
৭৮ মিনিটে পেনাল্টির আবেদন করে টটেনহাম। এরিকসেনের শট বক্সের মধ্যে ভিনসেন্ত কোম্পানির হাতে লাগার দাবি করে অতিথিরা। রিপ্লেতে তা বাতিল হয়।
অফসাইডে ছিলেন আগুয়েরো, শেষ গোল বাতিলে তাই হতাশায় ভেঙে পড়েন তিনিদুই মিনিট পর আগুয়েরোর দুর্দান্ত হেড ডানদিকে লাফিয়ে ব্যর্থ করেন লরি। ৮৬ মিনিটে ইকো গুন্দোগানের ভলি ক্রসবারের উপর দিয়ে গেলে পঞ্চম গোল করতে পারেনি ম্যানসিটি।
ইনজুরি সময়ের শেষ মিনিটে আগুয়েরোর পাস থেকে স্টারলিংয়ের দারুণ এক গোল করেন, তাতে সেমিফাইনালে ওঠার উল্লাসে মেতেছিল ম্যানসিটি। কিন্তু রেফারির সিদ্ধান্ত নিস্তব্ধ করে দেয় ইতিহাদ স্টেডিয়ামকে। ভিএআর দেখে আগুয়েরোর অফসাইডে গোলটি বাতিল করেন রেফারি।
দিনের আরেক ম্যাচে পোর্তোর মাঠে ৪-১ গোলে জিতেছে লিভারপুল। দুই লেগে ৬-১ গোলের অগ্রগামিতায় সেমিফাইনালে উঠেছে তারা। প্রথমার্ধ তারা শেষ করে এক গোলে এগিয়ে থেকে। ২৬ মিনিটে বক্সের মধ্যে থেকে মোহাম্মদ সালাহর বাড়ানো বল গোলরক্ষকের পাশ দিয়ে জালে ঠেলে দেন সাদিও মানে। বিরতির পর ৬৫ মিনিটে সালাহ ব্যবধান দ্বিগুণ করেন।
যদিও তিন মিনিট পর এদার মিলিতাও একটি গোল শোধ দেন। তাতে কোনও অঘটনের মুখোমুখি হয়নি লিভারপুল। ৭৭ মিনিটে রবের্তো ফিরমিনো তাদের তৃতীয় গোল করেন। খেলা শেষ হওয়ার ৬ মিনিট আগে ফন ডিক পর্তুগিজদের কফিনে শেষ পেরেক ঠুঁকে দেন।
সেমিফাইনালে টটেনহাম মুখোমুখি হবে আয়াক্সের। আর লিভারপুল খেলবে বার্সেলোনার বিপক্ষে।