ভিয়েতনামকে হারিয়েই দিল বাংলাদেশের মেয়েরা। এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশীপের বাছাই পর্বে ‘এফ’ গ্রুপে ভিয়েতনামকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হিসেবেই পরের রাউন্ড নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ দল।
রোববার কমলাপুরস্থ বীরশ্রেষ্ঠ শহিদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে একক আধিপত্য বিস্তার করে যোগ্য দল হিসেবেই শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে স্বাগতিক বালিকারা। টানা চার ম্যাচে জয়ের ফলে পূর্ণ ১২ পয়েন্ট নিয়েই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা।
প্রথম তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ২৫ বার বল পাঠিয়েছে স্বাগতিক দল। সমান পয়েন্ট নিয়ে তাদের সহাবস্থানে ছিল ভিয়েতনামও। মজার বিষয় হচ্ছে গোলের দিক থেকেও সমানে সমান ছিল দল দুটি। যে কারণে আজকের (রোববার) বাংলাদেশ বনাম ভিয়েতনামের ম্যাচটি ‘অঘোষিত ফাইনালে’ পরিণত হয়।
যে দল জয় পাবে সে দলই পাবে দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলার ছাড়পত্র। অবশেষে ভিয়েতনামকে হারিয়ে সেই লক্ষ্য পূরণ করলো বাংলাদেশের মেয়েরা। ৯ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ রানার্সআপ হিসেবেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে ভিয়েতনামকে।চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় আগামী বছর ২৩ ফেব্রুয়ারী থাইল্যান্ডে শুরু হতে যাওয়া দ্বিতীয় রাউন্ড খেলতে যাবে বাংলাদেশ।
আজ বল মাঠে গড়ানোর পর থেকেই ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক মেজাজে খেলতে শুরু করে টিম বাংলাদেশ। ম্যাচের ৫ মিনিটেই লিড নেয়ার সুযোগও এসেছিল। কিন্তু রিতুর আড়াআড়ি শটটি সাইড বার ঘেঁষে বাইরে চলে গেলে সে যাত্রায় বেঁচে যায় ভিয়েতনাম।
একের পর এক আক্রমণে ভিয়েতনামকে কোনঠাঁসা করে ফেলেছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু গোলের দেখা পাচ্ছিলো না। ম্যাচের ৩৭ মিনিটে প্রতিপক্ষ দলটির শক্ত রক্ষণ প্রাচীরে চিড় ধরায় গোলাম রব্বানী ছোটনের শিষ্যরা। কিন্তু শামসুন্নাহার জুনিয়রের দেয়া সেই গোলটি অফ সাইড কল করে বাতিল করে দেন অস্ট্রেলিয়ান রেফারি ক্যাথরিন।
সেই মেঘ দূর করতে অবশ্য বেশি সময় নেয়নি বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে গোল করে সবাইকে উৎসবে মাতিয়ে তোলেন তহুরা খাতুন। ভিয়েতনামের গোলরক্ষক থি ওয়ান তহুরা নেওয়া শটটি গ্রীপে নিতে ব্যর্থ হলে সামনে দাঁড়ানো শামসুন্নাহার জুনিয়র সামনের দিকে ঠেলে দেন বল। দৌঁড়ে এসে তহুরা খাতুন নিঁচু হেডে বল জালে জড়ান। উৎসবে মেতে উঠে মাঠে ছুঁটে আসা হাজার তিনেক সমর্থক (১-০)।
দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের সেই ধারা অব্যাহত রাখে স্বাগতিকরা। তহুরার হাত ধরে গোলও পেয়ে গিয়েছিল লাল-সবুজ জার্সীধারীরা। কিন্তু এবারও অফসাইড কল করে গোল বাতিল করে দেন রেফারি ক্যাথরিন। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন প্রতিবাদও জানান। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। গোল বাতিলের পর যেন আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে স্বাগতিক দল। প্রতিপক্ষের জমাট রক্ষণ ভেঙ্গে দিয়ে ম্যাচের ৬৩ মিনিটে স্কোর লাইন ২-০ এ পৌছে দেন আঁখি খাতুন।
ম্যাচ শেষ হওয়ার পাঁচ মিনিট আগে আরও একবার প্রতিপক্ষের জালে বল পাঠিয়েছিলেন তহুরা খাতুন। এবারের গোলটিও বাতিল হয়ে যায় অফ সাইডের কারণে। একে একে তিনটি গোল অফ সাইড কল করে বাতিল করায় হতাশ কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন।
খেলা শেষে তিনি বলেন, ‘একটি গোলও অফ সাইড ছিল না। আর এগুলো নিয়ে কোন অভিযোগ দিলে কাজ হয় না। গত সাত/আট বছরে আমার অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে। অভিযোগ দিলে এএফসি রেফারির পক্ষেই থাকে। তাই এসব বিষয়ে কোন অভিযোগ দিতে চাই না।’
তবে শিষ্যদের পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট কোচ। বলেন, ‘মেয়েরা অনেক কষ্ট করেছে। শুরু থেকেই আজ আক্রমণাত্মক ছিল। ভিয়েতনামকে এক মুহূর্তের জন্যও সুযোগ দেয়নি আমার দল। আমি দলের পারফরমেন্সে অত্যন্ত খুশি।’
দু’টি গোল বাতিল করলেও হতাশ নন তহুরা খাতুন। তিনি বলেন, ‘আমার গোল বাতিল করেছে তাতে মোটেও খারাপ লাগছে না। কারণ দল জিতেছে।’
স্বাগতিক দলের আরেক গোলদাতা আঁখি খাতুন বলেন, ‘দলের এমন জয়ে আনন্দটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। খুব ভালো লাগছে গোল করতে পারায়।’