সৌদি পেশাদার লিগের ট্রান্সফার উইন্ডোর বন্ধ হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে ইউরোপীয়ান ক্লাবগুলোতে। এবারের গ্রীষ্মে সৌদির বিশাল বাজেটের ট্রান্সফারের মূল লক্ষ্য ছিল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের খেলোয়াড়রা। ফলে সৌদি আরবের চাহিদা নিয়ে শঙ্কায় ছিল ইউরোপীয়ান ক্লাবগুলো।
সৌদি পেশাদার লিগের ট্রান্সফার উইন্ডোর বৃহস্পতিবার বন্ধ হয়েছে। তার ছয়দিন আগে ইউরোপের এলিট লিগগুলোর জন্য দলবদলের দরজা বন্ধ হয়েছে। জেদ্দার ক্লাব আল-ইত্তিহাদ শেষ দিন পর্যন্ত লিভারপুল থেকে মোহাম্মদ সালাহকে দলে নিতে চেষ্টা চালিয়েছে।
মিশরীয় এ তারকাকে দলে ভেড়াতে ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ডের প্রস্তাব তারা দিয়েছিল। যদিও শেষ পর্যন্ত লিভারপুল এ প্রস্তাবে কোন সাড়া দেয়নি। তবে ৩১ বছর বয়সী সালাহকে দলে পেতে এখনো হাল ছেড়ে দেয়নি ইল-ইত্তিহাদ।
আগামী উইন্ডোতে তারা আবারও সালাহকে দলে পেতে চেষ্টা চালাবে বলে ইতিমধ্যেই ইঙ্গিত দিয়েছে। ২০২৫ সাল পর্যন্ত সালাহর সাথে লিভারপুলের বর্তমান চুক্তির মেয়াদ রয়েছে।
গত তিন মাসে সৌদির শীর্ষ চার ক্লাব একে একে দলে ভিড়িয়েছে বর্তমান ব্যালন ডি’অর বিজয়ী করিম বেনজেমা, ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমার, রিয়ার মাহারেজ, ফ্যাবিনহো, এন’গোলে কান্তে, সাদিও মানে, রুবেন রেভেস ও জর্ডান হেন্ডারসনের মত তারকাদের।
এর আগে বছরের শুরুতে আল-নাসর পর্তুগীজ সুপারস্টার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে দলে নিয়েছিল। রোনালদোর পদাঙ্ক অনুসরণ করেই একে একে সব তারকারা সৌদি আরবে এসেছে।
স্পোর্টস বিজনেস গ্রুপ ডেলোয়িটের তথ্যমতে জানা গেছে, ইংল্যান্ড, স্পেন, ইতালি, ফ্রান্স ও জার্মানী থেকে ৩৭ জন খেলোয়াড় এবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশটিতে এসেছেন। এখানে যে শুধু ক্যারিয়ারের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাওয়া বয়স্ক খেলোয়াড়রা এসেছেন তা নয়, ২১ বছর বয়সী স্প্যানিশ উদীয়মান খেলোয়াড় গাব্রি ভেইগা সেল্টা ভিগো থেকে আল-আহলিতে এসেছেন।
ম্যানচেস্টার সিটি ও স্পেনের মিডফিল্ডার রড্রি বলেছেন, “এটা নিশ্চিত যে ইউরোপীয়ান ফুটবল একে একে খেলোয়াড় হারাচ্ছে। আমাদের যেকোনো ভাবে প্রতিভা হারানোর পথ বের করতে হবে। প্রথমে সেখানে শুধুমাত্র বেশি বয়সী খেলোয়াড়রা পাড়ি জমালেও এখন তরুণরাও আকৃষ্ঠ হচ্ছে।”
ডেলোয়িট জানিয়েছে, এবারের ট্রান্সফার উইন্ডো সৌদি ক্লাবগুলো ৯৫৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে। দেশের উচ্চাভিলাষী অর্থনৈতিক বৈচিত্র্যকরণ পরিকল্পনার অংশ হিসাবে পেশাদার লিগ এভাবে খেলোয়াড় কিনেছে। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ চারটি দলই উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, যাদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে সৌদি সরকারের পাবলিক ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড।
এ ক্লাবগুলো হলো রিয়াদের আল-হিলাল ও আল-নাসর, বর্তমান চ্যাম্পিয়ন আল-ইত্তিহাদ ও জেদ্দার আল-আহলি। খেলোয়াড়দের চুক্তি বাবদ তেল সমৃদ্ধ ধন্যাঢ্য এ ক্লাবগুলো যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে তাতে ভবিষ্যতে ইউরোপীয়ান ক্লাবগুলোর তাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় টিকে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়বে বলে অনেকেই মত দিয়েছেন।
আল-হিলালের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র মতে জানা গেছে, প্রতি মৌসুমে নেইমারকে তারা শুধুমাত্র বেতন দিবে ১০০ মিলিয়ন ইউরো, যা এ মুহূর্তে নেইমারের পিছনে কোন ইউরোপীয়ান ক্লাবই ব্যয় করতে পারবে না। লিভারপুলের সাবেক তারকা সাদিও মানে ৪০ মিলিয়ন ইউরোতে বায়ার্ন মিউনিখ ছেড়ে আল-নাসরেতে যোগ দিয়েছেন। মূল এ বেতনের সাথে বোনাস মিলিয়ে এর পরিমাণ আরও বাড়বে।
পিএসজির কাতারি সভাপতি নাসির আল-খেলাইফি বলেছেন, “আমি মনে করি না এখানে বিপদের কোন ঝুঁকি আছে। আমাদের নিজেদের ওপর আস্থা আছে। বিশ্বের সেরা প্রতিযোগিতা ইউরোপেই হয়, বিশ্বের বড় ক্লাবগুলোও এখানেই খেলে।”
তবে ৩০ বছরের বেশি বয়সী খেলোয়াড়দের জন্য সৌদি পেশাদার লিগ একটি নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। এ্যাথলেটিকো মাদ্রিদ ও ফ্রান্সের তারকা ফরোয়ার্ড আঁতোয়ান গ্রীজম্যান সৌদি আরবের সম্ভাব্য প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।
এদিকে, গ্রীজম্যান ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, “ভবিষ্যতে আমি অবশ্যই তাদের এ প্রস্তাব বিবেচনা করে দেখবো। এখানে অর্থের পরিমাণ বিশাল এবং এটা জীবনকে বদলে দিতে পারে।”