রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার বেশ কয়েকদিন গেছে। এরি মধ্যে বিশ্বকাপের ভালো-মন্দ নিয়ে আলোচনা সমালোচনাও কমে গেছে। তবে হঠাৎ করেই আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দিলেন জার্মানির তারকা মিডফিল্ডার মেসুত ওজিল। তার এ বিদায়ের কারণ বয়স বা ফর্ম নয়, ‘বর্ণবাদ এবং সম্মানহানি।’ বিদায় বলার আগে তাই জার্মানিকে ‘ধিক্কার’ জানিয়ে গেলেন তিনি।
বিশ্বকাপে জার্মানির ব্যর্থতার পর ‘বর্ণবাদী’ গালাগাল শুনতে হয়েছে মেসুত ওজিলকে। তুরস্কে জন্ম নেয়া এ ফুটবল তারকা এতে এতটাই আঘাত পেয়েছেন যে, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তটা নিয়েই ফেললেন। রোববার টুইট বার্তায় ২৯ বছর বয়সী এ প্লে-মেকার পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, জার্মানির হয়ে আর খেলতে চান না।
টুইটে তিনি আরও লিখেন, ‘আমি আর জার্মানি জাতীয় দলের জার্সি গায়ে জড়াতে চাই না। আমি বর্ণবাদ এবং অবমাননার শিকার।’
গত মে মাসে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়িপ এরদোয়ানের সঙ্গে ওজিল দেখা হয়। লন্ডনের এক অনুষ্ঠানে এরদোয়ানের সঙ্গে দেখা করার সময় তার সঙ্গে ছিলেন সতীর্থ ইলকে গুনদোগানও। দু’জনই তুরস্কের বংশোদ্ভূত জার্মান মিডফিল্ডার। সেদিক থেকে হয়তো এ বিষয়টিকে খুব একটা খারাপ মনে করেননি ওজিল। তবে এটা ভালোভাবে নেয়নি জার্মানি এবং দেশের সমর্থকরা। এ জন্য মাঠে অনেকবারই কথা শুনতে হয়েছে এ মিডফিল্ডারকে। টেলিফোনে শুনতে হয়েছে হুমকিও।
এক দীর্ঘ বিবৃতিতে সেই ক্ষোভের কথাও জানিয়েছেন ওজিল। বলেছেন, ‘জেতার পর সবাই আমাদের জার্মান বলে আর হারলেই অনুপ্রবেশকারী! আমাকে বারবার এমন কথা শুনতে হয়েছে।’
সাক্ষাতের বিষয়ে টুইটারে তিনি বলেন, ‘এটা কোনো রাজনৈতিক সাক্ষাৎ ছিল না। নিতান্তই সৌজন্যতাবশত, সেই সাক্ষাৎ নিয়ে যে এত কিছু হবে, সেটি কখনো ভাবিনি। তা ছাড়া ভুলে গেলে চলবে না। আমার দুটি হৃদয়। একটি তুর্কি, অন্যটি জার্মান। তুরস্ক আমার জন্মস্থান। আমি ছোটবেলা থেকে শিখেছি, কখনো নিজের উৎসকে ভুলে গেলে চলে না। তুরস্ক আমার উৎসভূমি। আমার মা আমাকে সেটিই শিখিয়েছেন।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, ‘আমি জার্মান ফুটবল ফেডারেশনের (ডিএফবি) কিছু কর্মকর্তার মুখ থেকে যে ধরনের কটূক্তি শুনেছি, তাতে এ দেশটির (জার্মান) জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়ানোর কোনো রুচি আমার অবশিষ্ট নেই। আসলে আমি মনে করি বর্ণবাদী মানসিকতার লোকজনের এমন কোনো ফুটবল ফেডারেশনে কাজ করা উচিত নয়, যেখানে প্রচুর খেলোয়াড়ের নাগরিকত্বে দ্বৈত সত্ত্বা রয়েছে।’
২০০৯ সাল থেকে জার্মানির জার্সি গায়ে খেলছেন ওজিল। ৯২ ম্যাচের অভিজ্ঞতা সম্পন্ন এ তারকা ফুটবলার তিনটি বিশ্বকাপে খেলেছেন। ২০১০ বিশ্বকাপে নিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দিয়ে নিজেকে চিনিয়েছিলেন। ২০১৪ বিশ্বকাপজয়ী জার্মান দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি।