সম্প্রতি শেষ হলো ফুটবরের ;সবচেয়ে বড় আসর বিশ্বকাপ। রাশিয়ায় ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে রাহিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ফ্রিান্স। এখন আবার অপেক্ষা কাতারে পরবর্তী বিশ্বকাপ আয়োজনে।
২০২২ সালের বিশ্বকাপ শুরু হতে এখনো সাড়ে চার বছর বাকি। ভেন্যু নির্মাণ ও সংস্কারসহ বড়সড় অবকাঠামো নির্মাণের কাজে বেশি মনোযোগ দিয়েছে কাতার। টুর্নামেন্টের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে আটটি ভেন্যু। এরই মধ্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে খালিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামের। সেটি উন্মুক্তও করে দেয়া হয়েছে। যেখানে আগামী বছর অনুষ্ঠিত হবে ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিকস চ্যাম্পিয়নশীপ। চলতি বছরের মধ্যেই আল ওয়াকারাহ এবং আল বায়েত স্টেডিয়ামের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবার কথা রয়েছে।
মূলত দোহাকে কেন্দ্র করেই নির্মিত হচ্ছে ভেন্যুগুলো। মাত্র ৫৫ কিলোমটিারের মধ্যেই সব ভেন্যুর অবস্থান। যে কারণে এটিকে এক শহর কেন্দ্রিক টুর্নামেন্টও বলা যেতে পারে। ২০২২ আসরের উদ্বোধনী ও ফাইনালের জন্য নির্ধারিত লুসাইল স্টেডিয়ামের কাজও এগিয়ে চলেছে জোরেশোরে। তবে সেই সঙ্গে অব্যহাত রয়েছে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক সঙ্কটও।
প্রায় ১৩ মাস ধরে প্রতিবেশী রাষ্ট্র সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং তাদের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসন করতে হবে বিশ্বকাপের আয়োজক দেশটির। ২০১৭ সালের ৫ জুন সৌদি জোটের আরোপিত নিষেধাজ্ঞার করাণে বন্ধ হয়ে গেছে দেশ দু’টি থেকে নির্মাণসামগ্রীর সরবরাহ। এর পরিপ্রেক্ষিতে তারা চীন ও মালয়েশিয়া থেকে এসব সামগ্রী আমদানী করছে।
আরও পড়ুন> কাতার বিশ্বকাপের তারিখ চূড়ান্ত
স্টেডিয়াম ছাড়াও বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেখানে নির্মিত হচ্ছে নতুন নতুন সড়ক, হোটেল, জাদুঘর এমনকি নতুন শহরও। এ জন্য ব্যয় হচ্ছে আনুমানিক ৪৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। দোহায় প্রথমবারের মতো স্থাপন হচ্ছে মেট্রো সিস্টেম। ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হবে ২০১৯ সালের মধ্যেই।
২০২২ বিশ্বকাপ উপলক্ষে ১৫ লাখ দর্শক কাতার সফর করবে বলে আশা করছে আয়োজকরা। তাদের আবাসনের জন্য থাকবে বাসা বাড়ি কেন্দ্রিক হোটেল, এয়ার বিএনবি প্রপার্টিস, তাবু এবং ১২ হাজার ভাসমান জাহাজ।
দোহার বিরুদ্ধে বড়সড় অভিযোগের মধ্যে অন্যতম ছিল পর্যাপ্ত হোটেলের অপ্রতুলতা। ফিফার নিয়ম অনুযায়ী বিশ্বকাপ আয়োজক দেশের অন্তত ৬০ হাজার হোটেল রুমের ব্যবস্থা থাকতে হবে। খুবই গুরুতর এ অভিযোগ থেকে তাদেরকে অবশ্যই মুক্তি নিতে হবে এবং প্রমাণ করতে হবে ফিফার সবগুলো শর্ত পুরণে তারা সক্ষম।
সেই সঙ্গে তাদেরকে স্থাপন করতে হবে ফ্যান জোন এবং সংরক্ষিত স্থান, যেখানে সমর্থকরা পানীয় পান করতে পারেন। যদিও কাতার হচ্ছে একটি রক্ষণশীল মুসলিম দেশ, যেখানে নির্ধারিত স্থানের বাইরে অ্যালকোহল পান করার অনুমতি নেই।
আরও পড়ুন> আমার দুঃখটা অনেক বেশি : নেইমার
কাতারে অবস্থানকারী দলগুলো আবাসন কোথায় হবে এবং সবগুলো দল সেখানে অবস্থান করতে পারবে কি-না সে বিষয়গুলো এখনো পরিষ্কার নয়। ইরান অবশ্য তাদের কিশ আইসল্যান্ডে দলগুলোর অনুশীলন ঘাঁটি বানানোর প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বর্তমানের মত ৩২ দল নিয়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হবে, নাকি পরিকল্পনা অনুযায়ী ৪৮ দলের অংশগ্রহণে এটি অনুষ্ঠিত হবে সেটি এখনো নির্ধারিত হয়নি।
নিরাপত্তা এবং দাঙ্গাবাজদের প্রতিহত করার জন্য বিদেশি পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যবহার করবে কাতার। আয়োজকরা বলেছেন তারা, ‘বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিশ্বকাপ’ উপহার দেয়ার লক্ষ্য স্থির করেছে। টুর্নামেন্ট চলাকালে নিরপত্তা জোরদার এবং আকাশপথে পাহারার জন্য গত বছর ৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করে ব্রিটিশ টাইফুন যুদ্ধ বিমান ক্রয় করেছে কাতার।
এদিকে কাতারের অর্থমন্ত্রী আলী শরিফ আল ইমাদি গত বছর বলেছিলেন, ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল আয়োজনে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবে তার দেশ। ফুটবল অনুরাগীরা মধ্য প্রাচ্যের অবতরণের আগেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হবে। কাতারে আসা মানুষকে আমরা প্রস্তুতির চিত্র দেখাতে চাই না।
বিশ্বকাপের জন্য অবকাঠামোগত কাজের জন্য প্রতি সপ্তাহে ব্যয় করা হচ্ছে ৫০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিশ্বকাপ দেখতে আসা কোন ভ্রমণকারীর সামনে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি দেখা খুবই অপ্রত্যাশিত বলেও বলছিলেন কাতারের এ অর্থমন্ত্রী।