কাতার ফুটবল বিশ্বকাপের উৎসব প্রায় শেষ লগ্নে। মেসি নাকি এমবাপ্পে কার হাতে উঠবে ২২তম বিশ্বকাপের ট্রফি, তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আর একটি রাত। মরুর দেশে ফাইনালে আর্জেন্টিনার প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। তবে বিশ্বসেরার মুকুট ছাড়াও ইতিহাস রচনা করতে যাচ্ছে লুসাইল স্টেডিয়ামে। অতীত রেকর্ড ভেঙ্গে লেখা হতে চলেছে নতুন সব কীর্তি।
একদিকে আছে, টানা দুইবার শিরোপা জেতার সুযোগ। অন্যদিকে ৩৬ বছরের বিশ্বকাপ না পাওয়ার আক্ষেপ ঘোচানোর হাতছানি। তবে এগুলো ছাড়াও আরো বেশ কিছু রেকর্ডের দাঁড় গোড়ায় বিশ্বমঞ্চ। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, কেমন হবে সেগুলো
প্রথমত:
'মেসি ম্যাজিকে আর্জেন্টিনার বিশ্বজয়'
এমন সংবাদই যদি হয় বাস্তব, তবে এদিন যেসব রেকর্ড হবে তা হলো-
১. ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপ জিতবে আর্জেন্টিনা। এর আগে শেষ বার ট্রফির দেখা পেয়েছিল ১৯৮৬ সালে।
২. ১৭ বছরের ট্রফি জেতার স্বপ্ন পূরণ হবে মেসির। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জয়ের স্বাদ পাবেন ৩৫ বছর বয়সী এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। এরই সাথে আর্জেন্টিনার অপর দুই অধিনায়ক ড্যানিয়েল পাসারেল্লা এবং দিয়েগো মারাদোনাকে স্পর্শ করবেন এলএমটেন।
৩. ফাইনাল ম্যাচে খেলতে নামলে বিশ্বমঞ্চে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার খেতাব অর্জন করবেন মেসি। ফরাসিদের বিপক্ষে মাঠে নামলে জার্মানির বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক লোথার ম্যাথাউসের ২৫ ম্যাচ খেলার রেকর্ড ভাঙবেন আর্জেন্টাইন সুপারস্টার।
৪. ফাইনালে ১টি অ্যাসিস্ট গোল করাতে পারলেই পেলে-ম্যারাডোনার রেকর্ড ভাঙবেন মেসি। দুই কিংবদন্তির রেকর্ড ভেঙ্গে, একমাত্র ফুটবলার হিসাবে বিশ্বকাপের মঞ্চে সর্বোচ্চ অ্যাসিস্ট গোলের কারিগর হবেন এলএমটেন।
৫. মেসি, এমবাপ্পে, অলিভিয়ে জিরু, জুলিয়ান আলভারেজ একটি করে গোল করলে গোল্ডেন বুটের জন্য সবচেয়ে বেশি দাবিদার হবেন লিওনেল মেসি।
একই সাথে সেরা ফুটবলার হওয়ার জন্য সোনার বলও পেতে পারেন এলএমটেন। ২০১৪ সালেও এই পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। কাতার বিশ্বকাপে এই ট্রফি জিতলে প্রথম ফুটবলার হিসাবে এই পুরস্কার দুইবার জিতবেন তিনি।
৬. কাতার বিশ্বকাপে চার বার ম্যাচের সেরার পুরস্কার পেয়েছেন লিও মেসি। ফাইনালেও এই খেতাবের মালিক মেসি হলে নতুন রেকর্ড তৈরি হবে। এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচের সেরার পুরস্কার পাওয়ার নজির গড়বেন আর্জেন্টাইন মহাতারকা।
৭. আর্জেন্টিনার জয়ে চতুর্থ দল হিসাবে তিন বার বিশ্বকাপ জেতার নজির তৈরি আলবেসেলেস্তে’রা। আকাশি-নীলরা ছাড়াও এই কীর্তি আগেই করেছেন ব্রাজিল, জার্মানি ও ইতালি। যেখানে ব্রাজিল পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর জার্মানি ও ইতালি জিতেছে চার বার করে।
দ্বিতীয়ত:
'মেসিদের কাঁদিয়ে আবারও বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স'
বিশ্বকাপ ফাইনালের পর যদি এমন খবর সত্য হয় তবে যেসব রেকর্ড হবে তা হলো-
১. ৬০ বছর পর, টানা দুইবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার খেতাব জিতবে ফ্রান্স। এর আগে এই সাফল্যতা আছে কেবল দু্টি দলের।
প্রথম দলটি ইতালি। যারা ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালের তৃতীয় ও চতুর্থ বিশ্বকাপ ঘরে তুলে। অন্যদলটি হলো হট ফেবারিট ব্রাজিল। ১৯৫৮ ও ১৯৬৮ সালে পরপর দুই বিশ্বকাপে শিরোপা অর্জন করে সেলেসাওরা।
২. ২য় কোচ হিসাবে পরপর দুই বিশ্বকাপে জেতার খেতাব পাবেন দিদিয়ের দেশম। এখন পর্যন্ত ইতালির সাবেক কোচ ভিক্টোরিয়ো পোজো একমাত্র কোচ, যিনি পরপর দুইবার বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন। ভিক্টোরিয়ান পোজো ১৯৩৪ ও ১৯৩৮ সালে আজ্জুরি’দের টানা দুইবার বিশ্বকাপ জেতান।
৩. দিদিয়ের দেশম প্রথম ব্যক্তি হবেন যিনি ফুটবলার হিসেবে একবার ও কোচ দুইবার ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের কারিগর।
দিদিয়ের দেশমের নেতৃত্বে ১৯৯৮ সালে প্রথমবারের মতো ফুটবল বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন পূরণ করে ফ্রান্স। এরপর শিরোপা অধরা হয় তাদের। কিন্তু ২০ বছর পর আবারো ফ্রান্সকে ফুটবল বিশ্বকাপ জেতান দেশম। তবে সেটি ফুটবলার হিসেবে নয়। বরং লা ব্লুজদের কোচের দায়িত্ব পালন করে পুনরায় বিশ্বমঞ্চের শিরোপা অর্জন করেন তিনি। কাতার বিশ্বকাপে জয় পেলে ফ্রান্সের তিনটি বিশ্বকাপের কারিগরই হবেন তিনি। যেখানে একটি ফুটবলার হিসাবে ও বাকি দুইটি কোচ হিসাবে।
৪. ফ্রান্স বিশ্বকাপে জিতলে, এটি হবে ইউরোপের টানা পাঁচবারের শিরোপা অর্জন। কেননা ২০০৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত চারটি বিশ্বকাপ ট্রফি ইউরোপের দেশগুলো অর্জন করে। যেখানে ২০০৬ সালে ইতালি, ২০১০ সালে স্পেন, ২০১৪ সালে জার্মানি, ২০১৮ সালে ফ্রান্স, বিশ্বকাপের শিরোপা জয় লাভ করে।
৫. ফাইনাল ম্যাচে এমবাপ্পে গোল করলে সেটিও এমবাপ্পের জন্য রেকর্ড হতে পারে। ২৪ বছরের আগে এক বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি গোল করার খেতাব তার আগে কেবল তিনজনের আছে। তারা হলেন, ব্রাজিলিয়ান কিংদন্তি পেলে, আর্জেন্টিনার মারিয়ো কেম্পেস এবং কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেস।
৬. ফ্রান্সের জয়ে চতুর্থ দল হিসাবে তিন বার বিশ্বকাপ জেতার নজির তৈরি করবেন দিয়ের দেশমের দল। লা ব্লুজরা ছাড়াও এই কীর্তি আগেই করেছেন ব্রাজিল, জার্মানি ও ইতালি। যেখানে ব্রাজিল পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। আর জার্মানি ও ইতালি জিতেছে চার বার করে।
৭. ফাইনালে এমবাপ্পে বা অলিভিয়ে জিরু মেসির থেকে বেশি গোল পেলে, তাদের মধে কেউ একজন হয়ে যাবেন, সোনার বুটের অন্যতম দাবিদার।
তবে এই রেকর্ড গুলো ঠিক কতটা কার্যকর হবে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে বিশ্বকাপ ফাইনালের জন্য। কার হাতে মরুর দেশে বিশ্বকাপে সোনার ট্রফি উঠবে, সেই দিকে তাকিয়ে থাকবে গোটা ফুটবল বিশ্ব।
স্পোর্টসমেইল২৪/এমটিআর