১৯৯০ সালে ইতালি ফিফা বিশ্বকাপেও চমক দেখিয়েছিল আর্জেন্টিনা। আসরের শুরুতে হোঁচট খেলেও ফাইনাল খেলেছিল দিয়েগো ম্যারাডোনার দল। ৩২বছর পর কাতার বিশ্বকাপে সেই গল্পের পুনরাবৃত্তি করলো লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। এবারও শুরুতে পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করে আকাশি-নীলরা। তবে প্রথম ম্যাচের তিক্ত স্বাদ যে, আর্জেন্টাইনদের আরো বিধ্বংসী গড়ে তোলে তা আবারও প্রমাণ করলো আলবেসেলেস্তে’রা।
ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের সাথে শুরু হয়েছিল ‘ইতালিয়া ৯০’ ফিফা বিশ্বকাপ। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ১-০ গোলে হারিয়ে ফুটবল বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল ক্যামেরুন।
তবে সেই অঘটনে থমকে যায়নি ম্যারাডোনার দল। পরের ম্যাচে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল আকাশি-নীলরা। এরপর রোমানিয়ার বিপক্ষে ড্র করেও রাউন্ড অব সিক্সটিন নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা।
গ্রুপ পর্বের শান্ত থাকা আলবেসেলেস্তে’দের বিধ্বংসী মেজাজে দেখা যায় নক আউট পর্ব গুলোতে। শেষ আটে উঠার মিশনে তাদের প্রতিপক্ষ হয় ব্রাজিল। শুরু থেকেই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করে দুদল। তবে ম্যাচের ৮০ মিনিটেও জালের দেখা খুঁজে পায়নি কেউই।
তবে নির্ধারিত সময়ের ৯মিনিট বাকি থাকতেই ক্লদিও ক্যানিজিয়া গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা। এরপর কোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ স্লাভদের দেশ যুগোস্লাভিয়ার বিরুদ্ধে খেলতে নামে ম্যারাডোনার দল। আক্রামণ পাল্টা আক্রমণে জমে ম্যাচটি। তবে শতচেষ্টা করেও জালের দেখা না পেলে ম্যাচ গড়ায় ট্রাইবেকারে।
সেখানেই ফুটবল বিশ্ব দেখে চরম নাটকীয়তা। শুরুতে যুগোস্লাভিয়ার ভুজাদিন স্টানজকোভিচের মিস শটে ১-০ গোলের লিড পায় আর্জেন্টিনা। তবে ফুটবল ভক্তদের চমকে দেন ম্যারাডোনা। নিজেদের তৃতীয় স্পটকিকের শটটি মিস করেন ফুটবলের এই কিংবদন্তি। এতেই ম্যাচের স্কোর দাড়ায় ২-২ গোল। চতুর্থ স্পটকিক দুই দলই মিস করে। শেষ পেনাল্টিতে ফারুক হাজিবেগিচের শটটি জালের দেখা না পেলে, নিশ্চিত হয় আর্জেন্টিনার সেমিফাইনাল।
এরপর ফাইনালে উঠতে আকাশি-নীলদের একমাত্র বাধা থাকে তিনবারে চ্যাম্পিয়ন ইতালি। বর্তমানের দিয়েগো আরমান্ডো ম্যারাডোনা স্টেডিয়ামেই সেবার ম্যারাডোনাদের রুদ্র রূপ দেখে ফুটবল বিশ্ব। যদিও শুরুতে ইতালিয়ান স্ট্রাইকার সালভাদর শিলাচির গোলে পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা।
তবে বিরতিরপর আক্রামণের ধার বাড়িয়ে, ৬৮ মিনিটেই ক্লদিও ক্যানিজিয়ার গোলে সমতা পায় আলবেসেলেস্তে’রা। নির্ধারিত সময়ে আর কোন গোল না হলে, ম্যাচের রেজাল্ট নির্ধারণ হয় ট্রাইবেকারে। পেনাল্টি শুট আউটের শেষ সুযোগ মিস করেন আজ্জুরি'রা। আর এতেই আর্জেন্টিনার ব্যাক টু ব্যাক ফাইনাল নিশ্চিত হয়।
এদিকে কাতার বিশ্বকাপেও একই রূপে দেখা যাচ্ছে আলবেসেলেস্তে'দের। গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে ২-১ গোলের হারের স্বাদ পায় আকাশি-নীল’রা। ম্যাচ শুরুর ১০মিনিটেই স্পটকিকের গোল থেকে আকাশি-নীলদের এগিয়ে রাখেন মেসি।
তবে অঘটনের জন্ম নেয় ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধে। বিরতি থেকে ফিরেই এমিলিয়ানো মার্তিনেজদের জালে বল জড়ান সালেম আর সেহরি। এরপর কফিনের শেষ পেরেক মারেন সৌদি স্ট্রাইকার সালেম আল দাওসারি। এরপর হাজারো আর্জেন্টাইন ভক্তদের কাদিয়ে পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে মেসির দল।
তবে এই পরাজয়ে আরও ক্ষুরধার হয়ে ওঠে আর্জেন্টিনা। গ্রুপপর্বে একে একে মেক্সিকো, পোল্যান্ডকে হারিয়ে শেষ ষোল নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। নক আউট পর্বেও তাদের রুদ্র রূপ দেখে ফুটবল বিশ্ব। আলবেসেলেস্তে'দের শিকার হয়ে বাড়ি ফিরতে হয় অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়াকে। এরপরেই শিরোপা অর্জনের শেষ ধাপে পৌঁছায় মেসির দল।
২০১০ সালেও নিজেদের প্রথম ম্যাচে হেরে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিলো স্পেন। কাতার বিশ্বকাপেও কে ভেবেছিল, রাউন্ড অব সিক্সটিনে খেলা নিয়ে অনিশ্চিত দলটিই থাকবে বিশ্বকাপের ফাইনালে।
তবে ‘ইতিলিয়া ৯০’ বিশ্বকাপে শিরোপা জয়ের কীর্তি গড়তে পারেনি ইনজুরি জর্জরিত দিয়াগো ম্যারাডোনা। বিতর্কের জন্ম দিয়ে পশ্চিম জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরেছিল আর্জেন্টিনা। মেসি কি পারবে ৩৬ বছরের বিশ্বকাপের জেতার স্বপ্ন পূরণ করতে? এই উত্তর পেতেই রবিবার (১৮ ডিসেম্বর) ফাইনালে তাকিয়ে থাকবে গোটা ফুটবল বিশ্ব।
স্পোর্টসমেইল২৪/এমটিআর