আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপের ট্রফি জিতেছিল সেই ১৯৮৬ সালে। এরপর প্রায় ৩৬ বছর পার হয়ে গেলেও অধরা থেকে গেছে বিশ্বকাপের ট্রফি। সেই খরা কাটাতেই মত্ত আলবিসেলেস্তেরা। স্বপ্ন পূরণের মিশনে মঙ্গলবার (১৩ ডিসেম্বর) লুসাইল স্টেডিয়ামে ক্রোয়েশিয়ার বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে মাঠে নামবে আর্জেন্টিনা।
কোপা-আমেরিকা শিরোপা জয়ের পর, বিশ্বকাপের আগে ৩৬ ম্যাচে অপরাজিত ছিল মেসির দল। তবে গ্রুপপর্বে সৌদি আরবের সাথে পরাজয়ে কিছুটা হতাশ থাকলেও, এরপর মরুর বুকে ঘোড়ার মতো এগিয়ে যাচ্ছে তারা। কিন্তু সেই মরুতে চোরা বালি হতে পারে ক্রোয়েশিয়া। ২০১৮ এর বিশ্বকাপেও তাদের কাছে ৩-০ গোলে হেরেছিল আলবিসেলেস্তেরা। চারবছর পর বিশ্বকাপে আবারো মুখোমুখি হচ্ছে দুটি দল।
ম্যাচটি নিয়ে অধির আগ্রহে উতলা বাংলাদেশ সহ ফুটবল বিশ্ব। কেননা পাঁচ বারের ব্যালন ডি অর জেতা মেসির শেষ শিরোপার লড়াই এটা। গতবারের হারের কথা মনে করলে, ক্রোয়েশিয়া যেন গোলার কাটা। কেননা শেষ ১১ ম্যাচে হারেনি লুকা মদ্রিজের দলটি।
কোকাস্তি’দের সবশেষ জয় আবার পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষে। যদিও সমিকরণে কেউ আগে কিংবা পিছিয়ে নয়। ক্রোয়েশিয়ার সাথে সামনা-সামনি লড়াইয়ে একটি ড্র, দুই জয় ও দুই পরাজয় আলবিসেলেস্তেদের। তাই বলা বাহুল্য, এ যেন সেয়ানে সেয়ানে লড়াই।
প্রথম দেখা ক্রোয়েশিয়ার মাকসিমির স্টেডিয়ামে সেই ১৯৯৪ সালে। সেবার দিয়েগো ম্যারাডোনা, গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতাদের রুখে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। গোল শূন্য ড্র নিয়ে সেদিন মাঠ ছেড়ে ছিল দুই দল।
দুই বছর পর ১৯৯৮ এর ফ্রান্স বিশ্বকাপে আবারো মুখোমুখি আর্জেন্টিনা-ক্রোয়েশিয়া। তবে সে ম্যাচে প্রথমবারের মতো নিরাশ হয়ে মাঠ ছাড়েনি দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। ম্যারাডোনাকে ছাড়াই সেবার ১-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছিল বাতিস্তুতা-সিমিয়নের দল।
এরপর পরাজয় শোধ করার জন্য কোকাস্তি‘রা অপেক্ষা করেছিল আট বছর। ২০০৬ সালের প্রীতি ম্যাচে সেবার ফুটবল প্রেমিরা দেখেছিল গোলের উৎসব।
ম্যাচ শুরুর ৩ মিনিটেই ইভান ক্লাসনিচের গোলে লিড পায় ক্রোয়েশিয়া। তবে সেই গোলের সমতা করতেও সময় নেয়নি আর্জেন্টিনা। ইভানের গোলের একমিনিট পরেই গোল পায় আর্জেন্টাইন স্ট্রাইকার কার্লোস তেভেজ। এর দুই মিনিটের মাথায় গোলের ব্যবধান দ্বিগুন করেন লিওনাল মেসি।
আর এতেই ম্যাচের শুরুর ছয় মিনিটেই স্কোর বোর্ড দাড়াই ২-১। এরপর সমতাই ফিরতে মরিয়া হলেও প্রথমার্ধে ব্যর্থ হয় কোকাস্তি’রা। তবে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই জালের দেখা পেয়ে ২-২ গোলে ব্যবধান সমান করে লুকা মদ্রিজের দল। শেষে হাড্ডা হাড্ডি লড়াই হলেও তীরে এসে তরি ডোবে আর্জেন্টিনার। ৯০মিনিটে ড্যারিও সিমিকের গোলে ৩-১ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ক্রোয়েশিয়া।
ক্রোয়েশিয়ার মতো আর্জেন্টিনারাও প্রীতি ম্যাচের প্রতিশোধ নিতে আট বছর অপেক্ষা করে। ২০১৪ সালের সেই ম্যাচে শুরুর ১১ মিনিটেই হোঁচট খায় মেসির দল। ক্রোয়েশিয়া মিডফিল্ডার আনাস সারবিনির গোলে ১-০ তে পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। পিছিয়ে পড়ে জালের দেখা পেতে মরিয়া হলেও প্রথমার্ধে স্কোরবোর্ডে আর কোন পরিবর্তন করতে পারেনি তারা।
তবে বিরতি থেকেই ফিরেই চমক দেখায় আর্জেন্টিয়ান ডিফেন্ডার ক্রিস্টিয়ান আনসালদি। দারুণ গোলে সমতা আনেন তিনি। এরপর স্পট কিকের গোল থেকে ব্যবধান বাড়ান লিওনাল মেসি। সবশেষ ২-১ গোলের হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে লুকা মদ্রিজের দল।
এরপর আবারো পরাজয়ের ঝাল মেটাই ক্রোয়েশিয়া। গত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই ৩-০ গোলে উড়িয়ে দেয় কোকাস্তি’রা। সেমিফাইনালের ম্যাচে, প্রথমার্ধ ছিল গোল শূন্য।
তবে বিরতি থেকে ফিরেই আন্তে রেবিচের গোলে এগিয়ে যায় ক্রোয়েশিয়া। ব্যবধান সমান করতে মরিয়া হলেও ব্যর্থ হয় মেসির দলটি। আক্রামণ বাড়াতে গেলে উল্টো জোড়া গোল খায় আলবিসেলেস্তেরা। নির্ধারিত সময়ের শেষ ১০ মিনিটে জোড়া গোল দিয়ে কফিনের শেষ পেরেক মারেন ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক লুকা মদ্রিজ। এতেই ২১ তম বিশ্বকাপের সেমি থেকে বিদায় নেয় আর্জেন্টিনা।
গত বিশ্বকাপের হারের প্রতিশোধ কি নিতে পারবে মেসির দল সেটি দেখতেই মরিয়া হয়ে আছে গোটা ফুটবল বিশ্ব।
স্পোর্টসমেইল২৪/এমটিআর