কাতারে সরগরম পরিবেশেই চলছে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ। আর মাত্র দুটি পর্বের পরই বিশ্বমঞ্চ পেয়ে যাবে তাদের ২২তম আসরের চ্যাম্পিয়ন। তেলের দেশে চলা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই উপভোগ করছে কোটি কোটি ফুটবল প্রেমিরা। মরুর দেশে খেলতে নেমে পায়ের জাদু দেখিয়েই তৈরি হচ্ছে নতুন নতুন রেকর্ড। একের পর এক অঘটনের সাক্ষী হচ্ছে ফুটবল বিশ্ব। সব মিলিয়ে কাতার বিশ্বকাপ যেন রূপকতার কোনো গল্প। যে গল্পের অন্যতম অধ্যায়ের স্বাক্ষী হচ্ছে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম।
বিশ্বকাপের ৮টি ভেন্যুর মধ্যে একটি ‘এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম’। দোহারের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত স্টেডিয়ামটিতে এরই মাঝে ইতিহাস রচনা করেছে। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের সাথে যেন পূর্ব শত্রুতার প্রতিশোধ নিয়েছে আল-রাইয়ানের মাঠটি। মরুর দেশের যতগুলো রেকর্ড তৈরি তার বেশির ভাগের স্বাক্ষী এই এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম।
রূপকথার গল্পের মতোই অকল্পনীয় সব ঘটনার কারিগর দোহারের এই ভেন্যুটি। শুরুটা হয়েছিল ফুটবল ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে দিয়ে। দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে এডুকেশন সিটি স্টেডিয়ামেই হোচট খেয়েছিল দুইবারের চ্যাম্পিয়ন দলটি। ম্যাচের নির্ধারিত সময় অতিক্রম করার পরে আরও ৮ মিনিট সুযোগ পেয়েছিল উরুগুয়ে। তবে তাইগুক ওয়ারিয়র্সদের জালের ঠিকানা পেতে ব্যর্থ হয়ে গোল শূন্য ড্রয়ে মাঠ ছাড়তে হয় সুয়ারেজ কাভানিদের।
এর সাথে প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে দক্ষিণ কোরিয়াদের বিপক্ষে জয় হাতছাড়া হয় দিয়েগো আলোনসোর শিষ্যদের। গ্রুপ ‘এইচ’-এর প্রথম ম্যাচের ওই হার লা সেলেসেতে’দের গ্রুপ পর্ব থেকেই ঘরে ফেরার অন্যতম কারণও বটে।
এডুকেশন সিটির পরের শিকার হলো ডেফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। তিউনেশিয়ার বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে নিজের শেষ ম্যাচে খেলতে নামে গতবারের শিরোপাধারীরা। তবে দুই ম্যাচে ৬ গোল করা দলটি এডুকেশন সিটিতেই থমকে যায়। গোল শূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেই ওহাবী খাজরীর গোল হজম করে লা ব্লুজরা। এরপর সমতা ফেরাতে মরিয়া হলেও ব্যর্থ হয় দিদিয়ের দেশমের শিষ্যরা।
ঈগলস অব কারথেজদের কাছে ১-০ গোলের তিক্ত পরাজয় নিয়ে এডুকেশন সিটির মাঠ ছাড়ে এমবাপ্পে-বেনজেমার দলটি। এর সাথে ৫১ বছর পর আবারও তিউনেশিয়ার কাছে হারের স্বাদ পায় ফ্রান্স।
রোনালদোর পর্তুগালের জন্যও সুখকর ছিল না এডুকেশন সিটি। ২০০২ এর বিশ্বকাপের পর আবারও দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারতে হয় পর্তুগালকে। দোহারের ভেন্যুতে সিআরসেভেনদের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়ে কোরিয়া পেয়েছিল নকআউট পর্বের টিকিট। গ্রুপপর্বের পর নকআউটের যে দুটি ম্যাচ ছিল দোহারের স্টেডিয়ামটিতে, সেখানেও ইতিহাস রচিত হয়।
রূপকথার গল্প লিখে প্রথমবারের মতো স্পেনকে হারিয়েছিল মরক্কো। ৩৬ বছর পর নকআউটে খেলা দলটি এ ভেন্যুতেই (এডুকেশন সিটি) ইতিহাস রচনা করে। কোয়ার্টার মিশনে প্রাণপন চেষ্টা করেও অ্যাটলাস লায়ন্স’দের জালের দেখা পায়নি ২০১০ এর চ্যাম্পিয়ন দলটি। এরপর ট্রাইবেকারের মাধ্যমেই ইতিহাসে প্রথমবারের মতো শেষ আটে ওঠে মরক্কো। এর সাথে ৬১ বছর ধরে স্পেনের বিপক্ষে জয়ের প্রতিক্ষাও শেষ হয় এডুকেশন সিটিতে।
সর্বশেষ এডুকেশন সিটির সর্বশেষ ম্যাচটিও বিষাদময় ছিল ব্রাজিলের জন্য। নিজেদের হেক্সা মিশন স্বপ্ন ভঙ্গ হয় এ ভেন্যুতেই। যে ক্রোয়েশিয়া বিশ্বকাপের ম্যাচে কখনই সেলেসাওদের জালের দেখা পায়নি, তারাই অতিরিক্ত সময়ের শেষ মুহূর্তে লেখে ইতিহাস। প্রথমবারের মতো বিশ্বমঞ্চে ব্রাজিলকে হারায় ক্রোয়েশিয়া।
নির্ধারিত সময়ে গোল শূন্য হলে ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেই যেন নাটকীয়তার শুরু। অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের প্রথম অংশেই চমক দেখায় নেইমার। বিরতির আগেই অতিরিক্ত মিনিটে গোলের দেখা পায় ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। এরপর সেলেসাওদের সেমি ওঠার মিশনে আর মাত্র ১৫ মিনিট অবশিষ্ট থাকে। অতিরিক্ত সময়ের চার মিনিট অবশিষ্ট থাকতেই অ্যালিসনকে ফাঁকি দিয়ে জালের দেখা পায় পেটকোভিক।
সমতা নিয়েই সময় শেষ করে শুরু হয় ট্রাইবেকার। এখানেই লিভাকোবিচের বাজিমাতে শেষ হয় ব্রাজিলের এবারের হেক্সা মিশন। হলুদ জার্সিদের বিদায় ঘটে কাতার বিশ্বকাপ থেকে। আরেকটি অঘটনের স্বাক্ষী হয় এডুকেশন সিটি স্টেডিয়াম।
স্পোর্টসমেইল২৪/এমটিআর/আরএস