সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচের শেষ দিকে কাসেমিরোর একমাত্র গোলে বিশ্বকাপে টানা জয় তুলে নিলো ব্রাজিল। এ জয়ে কাতার বিশ্বকাপের শেষ ষোলোতে খেলা নিশ্চিত করলো পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ম্যাচের ৮৩তম মিনিটে জয় সূচক একমাত্র গোলটি করেন মিডফিল্ডার কাসেমিরো।
সোমবার (২৯ নভেম্বর) গ্রুপ-জি’তে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে পূর্ণ তিন পয়েন্ট অর্জন করে ব্রাজিল। দুই ম্যাচে ২ জয়ে পূর্ণ ৬ পয়েন্ট নিয়ে গ্রুপ থেকে প্রথম দল হিসেবে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে ব্রাজিল। সমান সংখ্যক ম্যাচে সুইজারল্যান্ড ৩, ক্যামেরুন-সার্বিয়ার ১ করে পয়েন্ট অর্জন করেছে।
দোহার ৯৭৪ স্টেডিয়ামে দলের সেরা তারকা নেইমার ও ডানিলোকে ছাড়া খেলতে নামে ব্রাজিল। ইউরোপের দেশ সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে বিশ্বকাপের মঞ্চে এর আগে কোন জয় নেই ব্রাজিলের। ফলে কিছুটা চাপে থেকেই সুইসদের বিপক্ষে মাঠে নামে ব্রাজিল।
বল দখলের লড়াইয়ের মাঝে ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম আক্রমণে যায় সুইজারল্যান্ড। কর্নার থেকে বল পেয়ে ব্রাজিলের বক্সের মধ্যে ক্রস করেন স্ট্র্ইাকার রুবেন ভারগাস। বল পেয়ে গোলমুখে ডিফেন্ডার সিলভান উইডমারের শট ব্রাজিলের ডিফেন্ডার সিলভা প্রতিহত করেন।
ম্যাচের ২৭তম মিনিটে প্রথম আক্রমণ করে ব্রাজিল। গোলের সবচেয়ে ভালো সুযোগও ছিল সেটি। ডান-প্রান্ত দিয়ে সুইজারল্যান্ডের বক্সে ক্রস করেন স্ট্রাইকার রাফিনহা। বাঁ-প্রান্তে থাকা স্ট্রাইকার ভিনিসিয়াস জুনিয়র বল পান। তবে সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষক ইয়ান সোমারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি ভিনিসিয়াস। ভিনিয়াসের শট সোমার রুখে দিলে নিশ্চিতভাবে গোল বঞ্চিত হয় ব্রাজিল।
এরপর ৩১তম মিনিটে আবারও আক্রমণ করে ব্রাজিল। মধ্যমাঠ থেকে বল নিয়ে রাফিনহোকে বল দেন ডিফেন্ডার এডার মিলিটাও। তবে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া রাফিনহোর শট জমা পড়ে সুইজারল্যান্ডের গোলরক্ষকের হাতে।
প্রথমার্ধের বাঁশি বাজার আগ পর্যন্ত চারটি আক্রমণ শানায় ব্রাজিল। তবে আক্রমণগুলোতে ফিনিংশটা যুৎসই করতে পারছিলেন না নেইমারবিহীন ব্রাজিলের খেলোয়াড়রা। ফলে গোলছাড়াই শেষ হয় ম্যাচের প্রথমার্ধ।
প্রথমার্ধে ৫৫ শতাংশ বল দখলে রেখেছিল ব্রাজিল, যেখানে আক্রমণ ছিলো ৬টি, আর গোলমুখে শট ছিল ২টি। সুইজারল্যান্ডের গোলমুখে ২টি শট নিয়েছিলেন ভিনিসিয়াস ও রাফিনহো। একবার আক্রমণ করলেও বল ব্রাজিলের গোলমুখে রাখতে পারেনি সুইজারল্যান্ড।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে নিজেদের গুছিয়ে নিতে মনোযোগী ছিল দুই দলের মিডফিল্ড। এরই মধ্যে ৫৪তম মিনিটে ডান-প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে বাঁ-দিকে থাকা আক্রমণভাগের সতীর্থ রুবেন ভারগাসকে পাস দেন সুইস স্ট্রাইকার ব্রিল এমবোলো। ব্রাজিলের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলমুখে শট নেন ভারগাস। তবে সেই শট বিফল করে দেন সিলভা।
ওই আক্রমণের পর আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে সুইজারল্যান্ড। মধ্যমাঠের দখল নিয়ে আরও ৩টি আক্রমণ করে। তবে সেগুলো থেকে কোন সাফল্য পায়নি সুইজারল্যানন্ড। অবশেষে ৬৪তম মিনিটে ব্রাজিলের আক্রমন গোলে রুপ নেয়। তবে অফসাইডের কারণে সেটিও বাতিল হয়ে যায়।
বাঁ-দিক থেকে বল নিয়ে সুইজারল্যান্ডের ডি বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে বল জালে জড়ান ভিনিসিয়াস। আনন্দে মেতে উঠে ব্রাজিল। তবে ভিএআরএর সহায়তায় গোলটি অফসাইডে বাতিল হয়।
তবে গোল না পাওয়ার হতাশায় থমকে যায়নি ব্রাজিল। আক্রমণের ধার বাড়িয়ে ৮৩তম মিনিটে গোল আদায় করে নেয় তারা। ডান-প্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে ডি-বক্সের সামনে দাঁড়ানো স্ট্রাইকার রডরিগোকে বল দেন সিলভা। বলকে না থামিয়ে বক্সের ভেতর থাকা মিডফিল্ডার কাসেমিরোকে পাস দেন রডরিগো। ক্যাসেমিরোও বলকে না থামিয়ে বুদ্ধিমত্তার সাথে সুইজারল্যান্ডের গোলবারের ডান-প্রান্ত দিয়ে শট নিয়ে বলকে জালে জড়ান, ১-০ গোলে লিড নেয় ব্রাজিল।
লিড নিয়ে ৮৭ মিনিটে আবারও আক্রমণ করে ব্রাজিল। থিলভার কর্নার থেকে বল পেয়ে জোড়ালো শটে বল বাইরে মারেন স্ট্রাইকার এন্টনি। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর ইনজুরি সময়ের চতুর্থ মিনিটে ভিনিসিয়াসের পাস থেকে বল পেয়ে গোল করতে ব্যর্থ হন রডরিগো। ষষ্ঠ মিনিটে বাঁশি বাজিয়ে ম্যাচের ইতি টানেন রেফারি।
ফলে ১-০ গোলে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে ব্রাজিল। বিশ্বকাপের মঞ্চে সুইজারল্যান্ডের বিপক্ষে ব্রাজিলের এটাই প্রথম জয়। একই সাথে গ্রুপে সবার আগে শেষ ষোলোতে খেলাও নিশ্চিত করলো ব্রাজিল।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস