কাতার বিশ্বকাপে প্রথম অঘটনের জন্ম দিলো সৌদি আরব। বিশ্বকাপের সি’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে শিরোপার অন্যতম ফেবারিট লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে পরাজিত করেছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরব। ম্যাচের প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়ার পরও দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে পর পর দুই গোল করে জয় নিশ্চিত করে আরব দেশটি।
মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) লুইসাইল স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচটিতে প্রথমার্ধে লিওনেল মেসির পেনাল্টি গোলে পিছিয়ে পড়ে সৌদি আরব। বিরতি থেকে ফেরার পর সৌদি আরবের হয়ে পর পর দুই গোল করেন যথাক্রমে সালেহ আল-শেহরি ও সালেম আল-ডসারি। এ হারে আর্জেন্টিনার টানা ৩৭ ম্যাচে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটিও থমকে গেল।
ম্যাচের প্রথমার্ধে ১-০ গোলে এগিয়ে ছিল আর্জেন্টিনা। ১০ মিনিটে লিওনেল মেসি পেনাল্টি থেকে দেওয়া গোলে লিড পায় তারা। ওই অর্ধে অন্তত ৪-০ গোলে এগিয়ে যেতে পারতো শিরোপা ফেবারিট দলটি। কিন্তু তিনটি গোলই বাতিল হয়েছে অফসাইডের কারণে। অফসাইডের কারণে মেসির একটি ও লটারো মার্টিনেজের দুটি গোল বাতিল হয়।
ম্যাচের দ্বিতীয় মিনিটেই সৌদি আরবের বিপক্ষে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করেছিল আর্জেন্টিনা। ডি বক্সের ভেতর জটলা থেকে মেসির বাঁ পায়ের শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন সৌদি গোলরক্ষক মোহাম্মদ আল-ওয়েসিস। তবে লিড পেতে সময় নেয়নি দক্ষিণ আমেরিকার দল আর্জেন্টিনা।
দশম মিনিটে লিড পায় তারা। ডি বক্সের বাইরে থেকে মেসি ফ্রি কিক নিলে প্রতিহত করেন সৌদি আরবের গোলরক্ষক। কিন্তু ইতিমধ্যেই ডি বক্সের ভেতর আর্জেন্টাইন লিয়ান্দ্রো পারদেসকে অবৈধভাবে আল বুলাইহি ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ভিএআর প্রযুক্তি দেখে পেনাল্টির নির্দেশ দেন কর্তব্যরত রেফারি ভিনসিচ।
পেনাল্টি থেকে বাঁ পায়ের মাটি কামড়ানোর শটে সহজে গোল করেন মেসি। ফলে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিন। এরপর ২২তম মিনিটে আবারও গোল করে আর্জেন্টিনা। মধ্য মাঠ থেকে উড়ে আসা ক্রসের বল মেসি বেশ দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একা থাকা সৌদি গোলরক্ষককে পরাস্ত করেন। তবে এর আগেই অফসাইডের নির্দেশ দেন লাইন্সম্যান।
২৮তম মিনিটে লটারো মার্টিনেজের পা থেকে আবারও আসে গোল। অফসাইট ট্র্যাক ভেঙে ফাঁকায় থাকা সৌদি গোলরক্ষককে পরাজিতও করেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত সেই গোলটিও বাতিল হয় অফসাইডের কারণে।
এরপর ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে আবারও গোল করে আর্জেন্টিনা। মেসির বাড়িয়ে দেওয়া বল দ্রুত নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সৌদি গোলরক্ষক আল-ওয়েসিসকে হারিয়ে বল জালে পাঠান মার্টিনেজ। এবারের গোলটিও বাতিল হয় অফসাইডে। ইনজুরি টাইমে ডি মারিয়ার একটি প্রচেষ্টা রুখে দেন সৌদি গোলরক্ষক। ফলে ১-০ গোলের লিড নিয়েই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতি থেকে ফেরার পর চিরচেনা আবহাওয়ার সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে সুদূর দক্ষিণ আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনাকে চেপে ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দল সৌদি আরব, সফলও হয় তারা। ম্যাচের ৪৮ মিনিটে ডি বক্সের মধ্যেই ফিরাস আল-বুরাইকানের বাড়িয়ে দেওয়া বল প্লেসিং শটে আর্জেন্টিনার জালে জড়িয়ে দেন ১১ নম্বর জার্সি পরিহিত স্ট্রাইকার সালেহ আল-শেহরি (১-১)।
সমতায় ফিরে আরও উজ্জীবিত হয়ে খেলতে থাকে সৌদি আরব। ৫ মিনিট পর ফের গোল করে এগিয়ে যায় তারা। ৫৩ মিনিটে লেফট উইঙ্গার সালেম আল-ডসারি আর্জেন্টাইন পোস্টে বল পাঠালে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সৌদি আরব। ডি বক্স থেকে ডান পায়ে নেওয়া সালেমের শটের বল আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজের বাঁ হাতে স্পর্শ করেই উপরের ক্রসবার ঘেষে জালে প্রবেশ করে। ফলে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় সৌদি আরব।
পিছিয়ে পড়েও ৮০তম মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি কিকের সুযোগ পেয়েছিলেন মেসি। তবে চির চেনা সেই ফ্রিকিক কারিশমা দেখাতে পারেননি। তার শটের বলটি ক্রসবারের উপর দিয়ে বাইরে চলে যায়। এরপর ৮৪তম মিনিটে ডি বক্সের মধ্যে ডি মারিয়ার ক্রসের বলে মেসি হেড করলেও সেটি গ্রীবে পুরে নেন সৌদি গোলরক্ষক।
৮ মিনিটের ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে একটি জটলা থেকে প্রথমে বল ফিরিয়ে দেন সৌদি আরবের গোলরক্ষক আল-ওয়েসিস। ওই সময় তিনি নিচে পড়ে যান। এ সুযোগে আর্জেন্টাইন বদলি ফরোয়ার্ড জুলিয়ান আলভারেজ আবারও পোস্টে শট নিলে গোল লাইন থেকে হেডের মাধ্যমে বলটি ফিরিয়ে দেন সৌদি আরবের এক ডিফেন্ডার।
ফলে জয় তো দূরের কথা, সমতায়ও ফিরতে পারেনি আর্জেন্টিনা। হার নিয়ে মাঠ ছাড়ে এবারের বিশ্বকাপে ফেবারিট হিসেবে খেলতে আসার আর্জেন্টিনা। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সৌদি আরবের গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস