বিশ্বকাপে অতীত ইতিহাস নেইমারের জন্য মোটেই সুখকর নয়। তবে সেই হতাশা থেকে শিক্ষা নিয়ে কাতারে বিশ্বকাপ মঞ্চে নিজের সেরা ফর্ম প্রমাণে দীর্ঘদিন ধরেই প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন ব্রাজিলিয়ান এ সুপারস্টার। দলের কোচ এবং সতীর্থদের আশা, বিশ্বকাপে দেশের ভার বহনে প্রস্তুত নেইমার।
বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার হিসেবে ৩০ বছর বয়সী নেইমার কখনো কখনো প্রত্যাশার চাপ ধরে রাখতে পারেননি। ফর্মহীনতার একটি মূল কারণ অবশ্য ইনজুরি। ২০১৭ সালে বিশ্বরেকর্ড ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে বার্সেলোনা থেকে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর ইনজুরি তার পিছু ছাড়েনি।
খুব বেশি দিন হয়নি নেইমার নিজেই জানিয়ে দিয়েছিলেন কাতার বিশ্বকাপই বিশ্ব মঞ্চে তার শেষ আসর হতে যাচ্ছে। ওই সময়ে মূলত সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিজেকে ধরে রাখতে লড়াই করা নেইমার অনেকটাই হতাশা থেকেই এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তবে এবারের মৌসুমে প্রথম তিন মানে তার ফর্ম ও শারীরিক ভাষা অন্তত এটুকু প্রমাণ করেছে বিশ্ব মঞ্চে ব্রাজিলীয় সমর্থকরা নিঃসন্দেহে প্রিয় তারকাকে অন্যরূপে দেখতে যাচ্ছে।
ফরাসি জায়ান্টদের হয়ে ইতিমধ্যেই ১৯ ম্যাচে ১৫ গোল করেছেন নেইমার। এছাড়া সতীর্থ লিওনেল মেসি ও কিলিয়ান এমবাপেকে দিয়ে করিয়েছেন বেশ কিছু গোল। জাতীয় দলের কোচ তিতেও দলের অন্যতম মূল এ তারকাকে নিয়ে দারুণ আশাবাদী।
তিনি বলেছেন, “নেইমার এখন উড়ছে। বিশ্বকাপকে মাথায় রেখে সে যেভাবে নিজেকে প্রস্তুত করে তুলেছে তার ফল মাঠে পাওয়া যাচ্ছে।”
ব্রাজিলের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতা পেলের ৭৭ গোলের রেকর্ড স্পর্শ করতে নেইমারের আর মাত্র দুই গোল বাকি। জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ৭৫ গোলের আটটি এসেছে কাতার বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে, যেখানে পুরো ব্রাজিল দল ছিল দারুণ অপ্রতিরোধ্য।
দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বাছাইপর্বে টানা ১৭ ম্যাচে অপরাজিত থেকে ব্রাজিল গ্রুপের শীর্ষস্থান লাভ করেছিল। বাছাইর্বে নিজে আট গোল করা ছাড়াও সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও আট গোল। আর এর মাধ্যমে জাতীয় দলের দুই সতীর্থ অ্যাটাকার রিচারলিসন ও লুকাস পাকুয়েটার সাথে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছে।
ব্রাজিলের সাবেক লিজেন্ড কাফু বলেছেন, “নেইমার যেহেতু ভালো ফর্মে আছে সে কারণে এবার আমাদের বিশ্বকাপ জয়ের ভালো সম্ভাবনাও আছে। কারণ, সে এমন একজন খেলোয়াড় যে সহজেই প্রতিপক্ষের সাথে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে।”
শেষ পর্যন্ত নেইমার যদি সফল হন তবে হয়তোবা ব্যালন ডি’অরের স্বপ্ন পূরণ হতে পারে। তবে মূলত তার লক্ষ্য অতীত বিশ্বকাপের দুঃসহ স্মৃতিগুলো ক্যারিয়ার থেকে মুছে ফেলা।
২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালে জার্মানীর কাছে ৭-১ গোলের হার এখনো দুর্বিসহ স্মৃতি হয়ে আছে। ওই ম্যাচের আগে কলম্বিয়ার বিপক্ষে শেষ আটে গুরুতর ইনজুরিতে পড়ে নেইমার বিশ্বকাপ থেকে ছিটকে গিয়েছিলেন।
চার বছর পর কোস্ট রিকা ও মেক্সিকোর বিপক্ষে জয়ের ম্যাচগুলোতে নেইমার গোল করেছিলেন। রাশিয়া বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে বেলজিয়ামের কাছে পরাজিত হয়ে বিদায় নেয় সেলেসাওরা।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস