আলমেরিয়ার বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই ক্যাম্প ন্যুয়ে শেষবারের মতো মাঠে নামলেন জেরার্ড পিকে। সেই সঙ্গে পেশাদার ক্যারিয়ারের ইতিও টানলেন এই কিংবদন্তি স্প্যানিশ সেন্টার-ব্যাক। যদিও ওসাসুনার বিপক্ষে বার্সার স্কোয়াডে থাকার কথা তার। কিন্তু ঘরের মাঠে এটাই শেষ। আর বিদায়ী ম্যাচে তাকে জয় উপহার দেওয়ার পাশাপাশি রিয়াল মাদ্রিদকে ছাড়িয়ে লা লিগার পয়েন্ট তালিকায় শীর্ষেও উঠে এলো বার্সেলোনা।
ক্লাব কিংবদন্তির বিদায়ী ম্যাচ বলেই কিনা আজ বার্সার ঘরের মাঠ ক্যাম্প ন্যুয়ের গ্যালারি ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। রক্ষণভাগের নেতা হিসেবে দীর্ঘদিন এই দলটিকে আগলে রেখেছিলেন তিনি। কালাতান জায়ান্টদের বহু শিরোপা জয়ে রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ছিলেন ট্রেবলজয়ী ঐতিহাসিক দলের সদস্যও।
এমন সফল একজন তারকা ফুটবলারের আড়ম্বরপূর্ণ বিদায় তাই স্বাভাবিক। হয়েছেও তাই। পুরো ক্যাম্প ন্যু দাঁড়িয়ে সম্মান জানিয়েছে তাকে। হাত নাড়িয়ে তাদের বিদায় জানিয়েছেন পিকে। সতীর্থরা তার সম্মানে পরেছিলেন আইকনিক 'তিন' নম্বর জার্সি। সমর্থকরা তার নামাঙ্কিত জার্সি এবং প্লে-কার্ড নিয়ে হাজির হয়েছিলেন গ্যালারিতে।
শেষ পর্যন্ত বার্সার ২-০ গোলের জয়ে পিকের বিদায় হয়েছে সোনায় সোহাগা। যদিও সপ্তম মিনিটেই পেনাল্টি মিস করেন রবার্ট লেভানদোভস্কি। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধে গোল করে স্বাগতিকদের জয় নিশ্চিত করেন উসমানে দেম্বেলে ও ফ্রাঙ্কি ডি ইয়ং। তবে পুরো ম্যাচে ছিল বার্সার একক আধিপত্য।
বহুদিন পর যেন উজ্জীবিত বার্সার দেখা মিললো। বল দখল বা পাসের দিক থেকে তারা বরাবরই এগিয়ে, কিন্তু এবার আক্রমণ শানানোর ক্ষেত্রেও পুরনো রূপে দেখা গেল তাদের। আর এসবকিছুর পথে অনুঘটক হিসেবে কাজ করল পিকের বিদায়। যেন তার জন্যই ম্যাচটা জিততে মরিয়া বার্সা।
কাতালান জায়ান্টদের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়দের একজন পিকের সাম্প্রতিক সময়টা অবশ্য মোটেও ভালো যাচ্ছিল না। একদিকে দীর্ঘদিনের সঙ্গিনী ও সুপারস্টার সঙ্গীতশিল্পী শাকিরার সঙ্গে ছাড়াছাড়ি; অন্যদিকে ক্লাবেও অবস্থান হারাচ্ছিলেন তিনি। রোনালদ আরৌহো, এরিক গার্সিয়া, আন্দ্রেস ক্রিস্তেনসনদের ভিড়ে সুযোগ মিলছিল না তার।
আর তাই হুট করেই অবসরের ঘোষণা দেন তিনি। তাকে বিদায় দিতে তৈরিই ছিল বার্সা। তাইতো চলতি মৌসুমে গুরুত্ব হারানো পিকেকে আজ মুল একাদশে রাখেন কোচ জাভি হার্নান্দেস। অবশ্য জাভি জানিয়ে রেখেছেন, দলের পরবর্তী ম্যাচের স্কোয়াডে রাখা হবে পিকেকে।
বার্সেলোনাতে কিংবদন্তি হিসেবেই অবসর নিচ্ছেন পিকে।
বার্সার লা মেসিয়া অ্যাকাডেমির পাঠ চুকিয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে কিংবদন্তি কোচ স্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের অধীনে প্রিমিয়ার লিগ ও চ্যাম্পিয়নস জেতার স্বাদ পান পিকে। এরপর ২০০৮ সালে ইউনাইটেড থেকে ক্যাম্প ন্যুয়ে ফেরার পর ১৪ বছর কাটিয়ে দিয়েছেন তিনি। বার্সার সাবেক ও ম্যানচেস্টার সিটির বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলার সর্বজয়ী দলের সদস্য ছিলেন তিনি।
বার্সার জার্সিতে ৬১৬ ম্যাচ খেলেছেন পিকে। এর মধ্যে স্প্যানিশ লিগে ৩৯৬টি এবং চ্যাম্পিয়নস লিগে ১২৬টি। এই সময়ে ৮টি লা লিগা ও ৩টি চ্যাম্পিয়নস লিগের শিরোপা জিতেছেন তিনি। কিন্তু বার্সার এত সাফল্যের সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও পড়তি ফর্মের কারণে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ থাকা সত্ত্বেও নিজেকে সরিয়ে নিলেন ৩৫ বছর বয়সী পিকে। এমনকি বাকি দেড় বছরের বেতন-ভাতাও নেবেন না তিনি। ফলে আর্থিক সংকটে থাকা ক্লাব কিছুটা হলেও উপকৃত হবে।
১৮ বছরের ফুটবল ক্যারিয়ারে সম্ভাব্য সব শিরোপা ছুঁয়ে দেখেছেন পিকে। সবমিলিয়ে ৭৬৯ ম্যাচ খেলে করেছেন ৬৩ গোল; জিতেছেন ৩৬টি শিরোপা- ৮টি লা লিগা, ৭টি কোপা দেল রে, ৬টি সুপারকোপা, ১টি প্রিমিয়ার লিগ, ১টি ইএফএল কাপ, ১টি কমিউনিটি শিল্ড, ৪টি চ্যাম্পিয়নস লিগ, ৩টি উয়েফা সুপার কাপ, ৩টি ক্লাব ক্লাব বিশ্বকাপ, ১টি বিশ্বকাপ এবং ১টি ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। সবমিলিয়ে ফুটবল ইতিহাসেরই অন্যতম সফল সেন্টার-ব্যাক হিসেবে অবসরে যাচ্ছেন পিকে।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরআইএম