বার্সেলোনার সামনে বিদায়ের শঙ্কা আগে থেকেই ছিল, এবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে সেটাই বাস্তবে পরিণত হলো। বুধবার দিনগত রাতে ক্যাম্প ন্যু’তে এ পরাজয়ে বার্সেলোনাকে আগামী মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে অবনমন হয়ে ইউরোপা লিগে খেলতে হবে। অন্যদিকে, পাঁচ ম্যাচে শতভাগ জয় দিয়ে গ্রুপ-সি’র শীর্ষস্থান নিশ্চিত করেছে বায়ার্ন।
গ্রুপের আরেক ম্যাচে রোমেলু লুকাকুর ফেরার দিনে ভিক্টোরিয়া প্লাজেনকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে বায়ার্নের সাথে দ্বিতীয় দল হিসেবে শেষ ১৬’র টিকিট পেয়েছেন ইন্টার মিলান। টানা দ্বিতীয় মৌসুমের মতো প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় ঘটলো বার্সেলোনার।
কোচ জাভি হার্নান্দেজের অধীনে টানা দুই মৌসুম ব্যর্থ বার্সেলোনা আগের ১৭টি আসরে নক আউট পর্ব নিশ্চিত করেছিল। ক্যাম্প ন্যুতে এবার দলের ভাগ্য ফেরানোর লক্ষ্যে ৮৪ হাজার সমর্থক উপস্থিত ছিলেন। তবে সাদিও মানে ও এরিক ম্যাক্সিম ছুপো-মোটিংয়ের প্রথমার্ধের গোলে কার্যত বার্সেলোনার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে যায়।
স্টপেজ টাইমে বেঞ্জামিন পাভার্ডের আরও এক গোলে বার্সার বিপক্ষে বায়ার্নের টানা ষষ্ঠ জয় নিশ্চিত হয়। পরাজয় আঁচ করতে পেরে বেশ কিছু সমর্থক বিরতির পরেই মাঠত্যাগ করে। ২০২৪ সালের আগে ক্যাম্প ন্যুতে এটাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে বার্সেলোনার শেষ ম্যাচ ছিল। সংষ্কারের কারণে নতুন মৌসুমে শহরের অলিম্পিক স্টেডিয়ামে বার্সেলোনা তাদের হোম ম্যাচগুলো খেলবে।
ম্যাচ শেষে দলের বিদায় ঘটলেও সে কারণেই স্বাগতিক সমর্থকরা পুরো দলকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিয়ে গেছেন। ম্যাচ শেষে জাভি বলেছেন, ‘নিঃশর্ত সমর্থনের জন্য সমর্থকদের অনেক ধন্যবাদ। আজকের পরিবেশটা সত্যিই অসাধারণ ছিল। তাদেরকে ধন্যবাদ দিতেই হবে। একই সাথে আমাদের কাছ থেকে শ্রদ্ধাও তাদের প্রাপ্য।’
তিনি আরও বলেন, ‘যদিও মাঠের পারফরমেন্সে আমরা তাদের আস্থার প্রতিদান দিতে পারিনি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে আমরা বিদায় নিয়েছি, বাস্তবতা আমাদের মেনে নিতে হবে। আজ আমরা পরিপূর্ণ ছিলাম না। সেভাবে নিজেদের মেলে ধরতে পারিনি। তারা দারুণ খেলেছে, আমাদের চেয়ে সবদিক থেকেই বায়ার্ন এগিয়ে ছিল। আমি নিশ্চিত ম্যাচের আগেই বিদায়ের শঙ্কায় আমরা মানসিকভাবে পিছিয়ে পড়েছিলাম।’
এ ম্যাচের আগেই বায়ার্নের নক আউট পর্ব নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। দলে ছিলেন না ইনজুরি আক্রান্ত গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার, ডিফেন্ডার লুকাস হার্নান্দেজ ও উইঙ্গার লেরয় সানে। তবে তারপরও শক্তিশালী একাদশ নিয়েই বায়ার্ন মাঠে নেমেছিল। ১০ মিনিটে সার্জি গ্যানাব্রির দারুণ এক থ্রু বলে সেনেগালিজ ফরোয়ার্ড মানে বার্সা গোলরক্ষক মার্ক-আন্দ্রে টার স্টেগানের মাথার উপর দিয়ে বল জালে জড়ান।
৩১ মিনিটে গ্যানাব্রির আরও একটি পাস থেকে সাবেক স্টোক সিটি ও পিএসজি স্ট্রাইকার ছুপো-মোটিং দারুণ ফিনিশিংয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন। গত চার ম্যাচে ক্যামেরুনের এ স্ট্রাইকারের এটি পঞ্চম গোল। বিরতির আগে জুলিয়ান নাগলেসম্যানের দল তৃতীয় গোল প্রায় করেই ফেলেছিল।
তবে হেক্টর বেলেরিন লাইনের উপর থেকে বল ক্লিয়ার করেন এবং পোস্টের খুব কাছ থেকে জামাল মুসিয়ালার শট রুখে দেন টার স্টেগান। পরের মিনিটেই মাথিস ডি লিটের ফাউলে পেনাল্টি আদায় করে নেন রবার্ট লিওয়ানদোস্কি। কিন্তু রিভিউ দেখে রেফারি এন্থনি টেইলর নিজের সিদ্ধান্ত বাতিল করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে অফসাইডের কারণে গ্যানাব্রির গোল বাতিল হয়ে যায়। বায়ার্নের একের পর এক আক্রমণ প্রতিরোধ করতেই মূলত ব্যস্ত ছিল বার্সেলোনার রক্ষণভাগ। স্টপেজ টাইমে কর্নার থেকে পাভার্ডের গোলে বায়ার্নের বড় জয় নিশ্চিত হয়।
নাগলসম্যান বলেছেন, ‘এটা পুরো দলের সমন্বিত একটি পারফরমেন্স ছিল। যতটা সম্ভব বল আমাদের কাছে রাখার চেষ্টা করেছি। কারণ আমরা জানি বার্সেলোনা বিশ্বের অন্যতম সেরা দল। যেকোনো সময় তারা ম্যাচের আবহ পরিবর্তন করে দিতে পারে। সঠিক মুহূর্তের অপেক্ষা আমরা করেছি এবং সেগুলো কাজে লাগিয়েছি। এটা একটি সফল ম্যাচ ছিল।’
গ্রীষ্মে আলিয়াঁজ এরেনা ছেড়ে ক্যাম্প ন্যুতে যোগ দেওয়া সাবেক বায়ানর্ স্ট্রাইকার লিওয়ানদোস্কি আরও একবার হতাশা নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন। পুরনো দলের বিপক্ষেও তিনি গোল করতে পারেননি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের অন্যতম সফল এ ফরোয়ার্ড।
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস