নেপালের দশরথ রঙ্গশালায় পাকিস্তানের বিপক্ষে বিরতির পর বদলী হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন বাংলাদেশ দলের ফরোয়ার্ড ঋতুপর্ণা চাকমা। ম্যাচের ৭৭তম মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া তার আচমকা শট পাকিস্তানের গোলরক্ষক শাহিদ বুখারির মাথার ওপর দিয়ে আশ্রয় নেয় জালে। এতেই বেড়ে যায় বাংলাদেশের জয়ের ব্যবধান। ম্যাচে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬-০ গোলে জয়লাভ করে লাল সবুজের দল।
দলের হয়ে এমন একটি গোলের পর সতীর্থরা যখন সেটি উদযাপনে ব্যস্ত তখন ম্লান চেহারা নিয়ে ঋতুপর্ণা হাতজোড় করে তাকিয়ে ছিলেন আকাশের দিকে। ম্যাচ শেষে তার এমন আচরণের কারণ জানা যায়নি, কারণ দলের সঙ্গে টিম হোটেল চলে গিয়েছিলেন তিনি।
ওই ম্যাচের পর শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর্র) আর্মি হেডকোয়ার্টার মাঠে দলের সঙ্গে অনুশীলনে যোগ দেওয়ার পর কথা বলেন গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে। প্রথমেই তার এমন বিষন্ন উদযাপনের কারণ জানতে চাইলে ঋতুপর্ণা চোখের জল আর সংবরণ করতে পারেননি।
চোখ মুছতে মুছতেই তিনি বলেন, “আমর প্রয়াত ভাই পার্বন চাকমাকে গোলটি উৎসর্গ করেছিলাম। তাই ওই সময় সৃষ্টিকর্তার কাছে ওর জন্য প্রার্থণা করলাম। সে এখন আর আমাদের মাঝে নেই। আমার ওই ছোট ভাই সব সময় আমার খেলা দেখতো। ভালো খেললে আমাকে অভিনন্দন জানাতো। খেলা খারাপ হলে কোথায় সমস্যা তাও জানিয়ে দিতো। পাকিস্তানের বিপক্ষে গোল করে সেই ভাইকে খুব মনে পড়েছিল। আমার ভাইকে সব সময় মনে পড়ে।”
পরিবারে চার বোনের একমাত্র ভাই ছিল পার্বন চাকমা। বোনের খেলা নিয়ে তার ছিল অনেক উৎসাহ। গত ৩০ জুন রাঙামাটির কাউখালিতে সেচপাম্প ঠিক করতে গিয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মারা যায় পার্বন চাকমা। ভাইকে হারানোর পর প্রথম কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে খেলতে দেশের বাইরে গিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা।
গোল শেষে সেই উদযাপনের বিষয়ে ঋতুপর্ণা বলেন, “ভাই আমার খেলা দেখার জন্য পাগল থাকতো। আমাকে নিয়ে গর্ব করতো। আমার সব খেলা দেখতো। আমার কত আদরের ভাই ছিল, তা বলে বুঝাতে পারবো না। কিন্তু সেই ভাই আজ নেই। ওর জন্য আজও আমি কাঁদি। মনের অজান্তেই চোখের জল গড়িয়ে পড়ে। আমি কোনদিন ভাইকে ভুলতে পারবো না।”
পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার পরেই নিজের ফেসবুক পেজে স্ট্যাটাস দেন ঋতুপর্ণা। সেখানে তিনি ভাইকে উদ্দেশ্য করে লিখেন, “আজকের এই গোলটা তোকে উৎসর্গ করলাম। তুই থাকলে হয়তো দেখতে পারতি। খুব মিস করছি তোকে। ওপারে ভালো থাাকিস ভাই আমার।”
স্পোর্টসমেইল২৪/আরএস