বিশ্বকাপের শেষ দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে স্বাগতিক ইংল্যান্ডসহ আট। কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের মোকাবেলা করবে সুইডেন। এ ছাড়া টুর্নামেন্টের হেভিওয়েট হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স সেমি-ফাইনালের ওঠার লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে দুইবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়েকে। আর ব্রাজিল মোকাবেলা করবে বেলজিয়ামের।
চারবারের প্রচেষ্টায় ইংল্যান্ড শেষ ষোলর বৈতরণী পার হয়েছে। তাদের এ অসাধ্য সাধনে ভূমিকা রেখেছে এরিক ডায়ারের স্পট কিক। এখন আগামী শনিবার সুইডেনের বাধা পেরুতে পারলে গ্যারেথ সাউথ গেটের দলটি সেমফিাইনালে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাবে ক্রেয়েশিয় অথবা রাশিয়াকে। কোয়ার্টার ফাইনালে পরস্পরকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পেয়েছে দল দুটি।
ইংলিশ কোচ বলেছেন, ‘এই অর্জনটি ছিলো বিশেষ কিছু। তবে এখন আমরা এগিয়ে যেতে চাই। সুইডেন এমন একটা দল যাদের বিপক্ষে আমাদের অতীত রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। অথচ বছরের পর বছর আমরা তাদের অবহেলা করে এসেছি। এখন নিজেদের মতো করেই ইতিহাস রচনার মাধ্যমে তারা নতুন গল্প তৈরি করেছে। তবে এখনই আমি ঘরে ফিরে যেতে চাই না।’
এদিকে গ্রুপ পর্বে জার্মানীর কাছে দুঃখজনকভাবে হারের ক্ষত কাটিয়ে উঠেছে জানে এন্ডারসনের সুইডেন। শোষ ষোল’র লড়াইয়ে সুইজারল্যান্ডকে ১-০ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে নাম লেখায় দলটি। যাদের হয়ে জয়সূচক একমাত্র গোলটি করেছেন আরবি লিপজিগের মিডফিল্ডার এমিল ফোর্সবার্গ। এর ফলে ১৯৯৪ সালের পর প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করলো সুইডেন। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে অবশ্য তৃতীয় স্থান লাভ করেছিল সুইডিশরা।
স্পটলাইটে নেইমার :
শুক্রবার কাজানে বেলজিয়ামের গোল্ডেন জেনারেশনের মুখোমুখি হবে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট ব্রাজিল। এর আগে নিজনি নভগোরদে উরুগুয়ের মোকাবেলা করবে তারুণ্যে ভরপুর ফ্রান্স। যে দলের প্রাণভোমরা হিসেবে সবার দৃষ্টি থাকবে টিনএজ তারকা কিলিয়ান এমবাপের ওপর।
তবে বেশি আলোচনায় থাকাবে ষষ্ঠবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জয়ের পথে থাকা ব্রাজিলের দিকে। যে দলের কেন্দ্রীয় চরিত্রে আছেন নেইমার। বিশ্বের সবচেয়ে দামী এ ফুটবল তারকা ইতোমধ্যে সংবাদের শিরোনাম হয়েছে মাঠে অতিরিক্ত অভিনয়ের কারণে। যদিও এর মাধ্যমে বড় কোন সমস্যার মুখে না পড়েই শেষ আটে পৌঁছে গেছে পাঁচ বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।
মেক্সিকোর কোচ হুয়ান কার্লোস ওসারিও ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হারের পর নেইমারের সমালোচনা করে বলেন, প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) এই স্ট্রাইকার মিগুয়েল লেওনের পায়ের চাপা খাওয়ার পর যা করেছেন, সেটি ‘ফুটবলের জন্য লজ্জাস্কর’।
এদিকে জাপানের সঙ্গে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে বেলজিয়াম টুর্নামেন্ট থেকে বিদায়ের প্রায় দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শেষ ২১ মিনিটের রোমঞ্চকর এক খেলা তাদের ফিরিয়ে আনে। ইনজুরি টাইমের চতুর্থ মিনিটে নাসের চাডলির গোল তাদের এনে দেয় ৩-২ গোলের এক রোমঞ্চকর জয়। কোয়ার্টার ফাইনালে এডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকু, দ্রিস মার্টেনস এবং কেভিন ডি ব্রুইয়ান যে ব্রাজিলীয় রক্ষণের কঠিন পরীক্ষা নিবে সেটি নিশ্চিত। অবশ্য দক্ষিণ আমেরিকার দলটি বিশ্বকাপের চার ম্যাচে একটি মাত্র গোল হজম করেছে।
বেলজিয়ামের কোচ রবার্তো মার্টিনেজ বলেছেন, ‘এটি এমন একটি খেলা যেটি আপনাকে ছোট বাচ্চার মতো স্বপ্ন দেখায়। তবে প্রথম সেকেন্ড থেকেই আমরা ম্যাচটি উপভোগ করার চেষ্টা করব।’
টুর্নামেন্টের গ্রুপ পর্বে ফ্রান্স অবশ্য শুরু থেকে নিজেদের সেভাবে মেলে ধরতে পারেনি। কিন্তু আর্জেন্টিনার বিপক্ষে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে এমবাপের নজরকাড়া পারফরমেন্সে ভর করে তারা ৪-৩ গোলের এক ক্লাসিক জয় পায়। ওই জয়টিই কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের উরুগুয়ের প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিয়েছে।
ফ্রান্সের কোচ দিদিয়ের দেশ্যম বলেন, ‘এমন একটি ম্যাচের জন্য আমরা মাসের পর মাস প্রস্তুতি নিয়েছি, সপ্তাহের পর সপ্তাহ অপেক্ষা করেছি।’
এদিকে উরুগুয়ের সফলতা এসেছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ডিফেন্ডার জুটি হোসে মারিয়া গিমেনেজ ও দিয়েগো গোডিনের নিখাদ রক্ষণে। অপরদিকে আক্রমণ ভাগে প্রতিপক্ষের শিবিরকে তছনছ করেছেন লুইস সুয়ারেজ ও এডিনসন কাভানির জুটিবদ্ধ আগ্রাসন। দলের হয়ে এই জুটি করেছেন ৫টি মূল্যবান গোল।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬০ বছর আগে পেলের অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত ব্রাজিল ছাড়া ইউরোপের মাটি থেকে ল্যাতিন আমেরিকার কোন দল বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করতে পারেনি। যদিও মাঠের লড়াইয়ে এইসব পরিসংখ্যানের কোন গ্যারান্টি থাকে না।