ক্লাব ফুটবলে পোলিশ ফরোয়ার্ড রবার্ট লেভানডোভস্কির গায়ের জার্সি বদলেছে, ক্লাব বদলেছে! শুধু বদলায়নি মুড়িমুড়কির মতো গোল করার অভ্যাস।
জার্মান ক্লাব বায়ার্ন মিউনিখ থেকে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার জার্সিতেও অভিষেকের পর থেকে গোল করেই চলেছেন তিনি। লেভানডোভস্কির হ্যাটট্রিকে চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রথম ম্যাচে ভিক্টোরিয়া প্লাজেনকে ৫-১ গোল ব্যবধানে হারিয়ে শুভসূচনা করেছে বার্সেলোনা।
বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) চ্যাম্পিয়নস লিগের চলতি মৌসুমে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ঘরের মাঠে ক্রোয়েশিয়ান ক্লাব ভিক্টোরিয়া প্লাজেনের মুখোমুখি বার্সেলোনা। ম্যাচের শুরু থেকে প্রতিপক্ষের রক্ষণে হামলা দেয়া শুরু করে জাভি হার্নান্দেজের শিষ্যরা।
ম্যাচের দশম মিনিটে ডান পাশ থেকে আসা ক্রসে লেভানডোভস্কির শট প্রতিপক্ষের গায়ে লেগে বাইরে গেলে সুযোগ হাতছাড়া হয় বার্সেলোনার।
ম্যাচের ১৩তম মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায় বার্সেলোনা। চ্যাম্পিয়নস লিগে অভিষেক ম্যাচেই গোল পেলেন ফ্রাঙ্ক কেসি।
কর্নার থেকে উড়ে আসা ক্রসে কুন্দের হেড থেকে বাতাসে ভেসে থাকা বলে আবার হেড দিয়ে কাছের পোস্ট দিয়ে লক্ষ্যভেদ করেন এই আইভোরিয়ান ফুটবলার।
ম্যাচের ১৭তম মিনিটে প্রতিপক্ষের ডিফেন্স ভেদ করে দারুণ এক পাস দিয়েছিলেন বার্সেলোনার রবার্তো। তবে ডান পাশের কেউ সেই পাস ধরতে পারেনি।
১৮তম মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের সামনে দারুণ জায়গায় বল পেয়েও শট পোস্টে রাখতে পারেননি আনসু ফাতি।
ম্যাচের ২২তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে দারুণ দক্ষতায় একের পর এক ভিক্টোরিয়া ফুটবলারের বাধা এড়িয়ে বল নিয়ে লেভানডোভস্কিকে পাস দেন বার্সেলোনার পেদ্রি। তবে তখন গোল পায়নি বার্সা।
ম্যাচের ২৪তম মিনিটে ভিক্টোরিয়ার জনকে বার্সেলোনার ক্রিস্টেনসন ফাউল করার অভিযোগে প্রথমে পেনাল্টি দেন রেফারি। তবে পরবর্তীতে ভিএআর চেক করে পেনাল্টি না দিয়ে উল্টো জনকে হলুদ কার্ড দেখান ফাউল করার জন্য।
বার্সেলোনার একের পর এক আক্রমণের তোপে বল বেশিরভাগ সময়েই ভিক্টোরিয়ার বক্সে বা তার আশেপাশেই ঘোরাঘুরি করেছে।
বার্সোনার জার্সিতে ম্যাচের ৩৪তম মিনিটে নিজের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ গোল পান পোলিশ ফরোয়ার্ড রবার্ট লেভানডোভস্কি।
সার্জিও রবার্তোর অ্যাসিস্ট থেকে প্রতিপক্ষের বক্সের ঠিক উপর থেকে ডান পায়ের নিখুঁত শটে বার্সেলানাকে ২-০ গোলে এগিয়ে দেন তিনি।
ম্যাচের ৩৬তম মিনিটে বার্সা অধিনায়ক সার্জিও রবার্তো গোলার মতো শট দুর্দান্ত দক্ষতায় প্রতিহত করেন ভিক্টোরিয়ার গোলরক্ষক।
৪০তম মিনিটে লেভানডোভস্কির ব্যাকহিল থেকে প্রায় লক্ষ্যভেদ করে ফেলেছিলেন পেদ্রি। তবে শেষ মুহূর্তে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার গোললাইন সেইভ করলে হতাশ হতে হয় তাকে। পরের মিনিটে ওসমান দেম্বেলের ডিফেন্স চেড়া পাস কাজে লাগাতে পারেনি সার্জিও রবার্তো।
৪৩তম মিনিটে মাঝমাঠ থেকে একক দক্ষতায় প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকলেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি বার্সেলোনার তরুণ স্প্যানিশ ফুটবলার আনসু ফাতি।
বিরতিতে যাওয়ার কিছুক্ষণ আগে গোল হজম করে বার্সেলোনা। স্প্যানিশ ক্লাবটির আক্রমণের ভিড়ে পাল্টা আক্রমণে ৪৪তম মিনিটে ব্যবধান কমায় ভিক্টোরিয়া। জামেলিকার বা পাশ থেকে দেওয়া ক্রসে দুর্দান্ত হেড করে ভিক্টোরিয়াকে ম্যাচে ফেরান সাইকোরা।
বিরতিতে যাওয়ার আগে ডান পাশ থেকে দারুণ দক্ষতায় বল নিয়ে বক্সের বাইরে থেকে বা পা দিয়ে জোড়ালো শট নেন ওসমান দেম্বেলে। তবে আরও একবার দুর্দান্ত সেভ করে ভিক্টোরিয়াকে বাচান গোলরক্ষক।
তবে পরের মিনিটে আর পারেননি! অতিরিক্ত সময়ের তৃতীয় মিনিটে ডান পাশ থেকে দেম্বেলের দারুণ ক্রসে বাম পাশে ফাঁকায় থাকা লেভানডোভস্কির মাথায় ছূয়ে ঢুকে যায় ভিক্টোরিয়ার জালে।
ম্যাচে যেটা লেভার দ্বিতীয় গোল, আর বার্সেলোনা এগিয়ে যায় ৩-১ গোলে। এরপরই বিরতিতে যায় দুই দল। বিরতি থেকে ফিরেই গোলের সু্যোগ পেয়েছিল বার্সেলোনা। কিন্তু ফাতির শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হলে সে যাত্রায় রক্ষা পায় ভিক্টোরিয়া।
৫১তম মিনিটে লেভার দারুণ চিপ থেকে গোলরক্ষককে একা পেয়েও শট নিতে পারেননি জর্ডি আলবা। পরের মিনিটেই হ্যাটট্রিকের সুযোগ পেয়েছিলেন লেভানডোভস্কি। কিন্তু শট নেওয়ার আগেই প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক এগিয়ে এসে আটকে দেন।
পুরো ম্যাচ জুড়েই প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের রীতিমতো নাচিয়ে ছেড়েছেন বার্সেলোনার ফরাসি ফুটবলার ওসমান দেম্বেলে।
৬৮তম মিনিটে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন লেভানডোভস্কি। বদলি হিসেবে নামা ফেরান তোরেসের ছোট্ট পাস পেয়ে বক্সের বাইরে থেকে ডান পায়ের গড়ানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। বার্সেলোনা এগিয়ে যায় ৪-১ গোলের বড় ব্যবধানে।
পরের মিনিটে আরও একবার গোলের দেখা পেতে পারতো বার্সেলোনা। তবে দেম্বেলের গোলার মতো শট ভিক্টোরিয়ার গোলরক্ষক ফিরিয়ে দেন।
তবে তখন না হলেও তার পরের মিনিটে ৫-১ গোলে এগিয়ে বার্সেলোনা। দেম্বেলের লম্বা থ্রু মাটিতে পড়ার আগেই জোড়ালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন ফেরান তোরেস।
৭৬তম মিনিটে আরও একবার গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েছিলেন লেভানডোভস্কি। তবে তার বাকানো শট ফিরিয়ে দেন ভিক্টোরিয়া গোলরক্ষক।
ম্যাচের বাকি সময়ে গোলের সুযোগ তৈরি হলেও কোনো দলই আর লক্ষ্যভেদ করতে পারেনি। ফলে ৫-১ গোলের বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে বার্সেলোনা।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি