‘এমন কোন মারাত্মক ফাউল নেইমারকে করা হয়নি, যে তাকে এত অভিনয় করতে হবে’ - চলতি ফুটবল বিশ্বকাপে শেষ ষোলোতে ব্রাজিলের কাছে হারের পর এমন মন্তব্যই করলেন মেক্সিকোর কোচ হুয়ান কার্লোস ওসোরিও।
সোমবার শেষ ষোলোর ম্যাচে ব্রাজিলের কাছে ২-০ গোলে হারে মেক্সিকো। ঐ ম্যাচের পর নেইমারের দিকে আঙুল তুললেন ওসোরিও। ফাউলের পর নেইমারের অভিনয় দেখে ক্ষুব্ধ ওসোরিও বলেন, ‘পুরো ম্যাচে যখনই তাকে আটকানো হয়েছে, সামান্য সংঘর্ষে ব্যথা পাবার অভিনয় করেছেন নেইমার। নেইমারের এমন অভিনয় সত্যিই মানা যায় না।’
গত ২২ জুন সেন্ট পিটার্সবুর্গে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল-কোস্টা রিকা। ঐ ম্যাচের ৭৯ মিনিটে বল নিয়ে কোস্টা রিকার ডি-বক্সের ভেতর ঢুকে যান ব্রাজিলের অধিনায়ক নেইমার। এ সময় তাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেন কোস্টা রিকার ডিফেন্ডার জিয়ানকার্লো গঞ্জালেজ। তাতেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নেইমার। সাথে সাথে ফাউলের কারণে পেনাল্টির নির্দেশ দেন ঐ ম্যাচের অন-ফিল্ড রেফারি।
রেফারির ওই সিদ্বান্তের প্রতিবাদ করে কোস্টা রিকার খেলোয়াড়রা। ফলে মাঠের ভেতর থাকা টিভিতে ভিডিও রেফারির সহায়তা নিয়ে পেনাল্টি বাতিল করে দেন অন-ফিল্ড রেফারি। টিভি রিপ্লেতে দেখা গেছে, কোস্টা রিকার গঞ্জালেজ বাধা দেয়ার সময় নেইমারের গায়ে স্পর্শই করেননি। অভিনয়ের ভান করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নেইমার। যাতে পেনাল্টির পাওয়া যায়। পেনাল্টি ঠিকই পেয়েছিলেন নেইমার। কিন্তু ভিডিও রেফারির সহায়তায় সেই পেনাল্টি বাতিল হয়।
ওই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই রিও ডি জেনিরিও’তে সার্বিয়ার বিপক্ষেও ম্যাচে যতবার মাঠে লুটিয়ে পড়বেন নেইমার, ততবার সে দেশের ক্রেতাদের ফ্রি বিয়ার দেয়ার ঘোষণাও দেয় ব্রাজিলের একটি রেস্টুরেন্ট।
কেবলমাত্র কোস্টা রিকার বিপক্ষে নিজের অভিনয় সীমাবদ্ধ রাখেননি নেইমার। সার্বিয়ার বিপক্ষে ম্যাচে নিজেকে ‘সেরা অভিনেতা’ হিসেবে পরিচিত করিয়েছেন নেইমার। ম্যাচের ৩২ মিনিটে বল নিতে গিয়ে নেইমারকে ট্যাকল করেন সার্বিয়ার স্ট্রাইকার আলেক্সান্ডার প্রিজোভিচ। এরপর পড়ে গিয়ে নিজের শরীরকে ছয়বার মাটিতে ঘুড়িয়েছেন নেইমার। অবশ্য এতে প্রিজোভিচকে হলুদ কার্ডও দেখতে হয়। নেইমারের ওই কাণ্ড পুরো ম্যাচেই বারবার রিপ্লে করে দেখানো হয়েছে। এমনকি পরবর্তীতে ওই ভিডিও ক্লিপটি ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও।
শেষ ষোলোতে মেক্সিকোর বিপক্ষে ম্যাচেও বেশ কয়েকবার ফাউলের অভিনয় করেন বলে অভিযোগ করেন দলটির কোচ ওসোরিও। ম্যাচ শেষে ওসোরিও বলেন, ‘দূর্ভাগ্য ও লজ্জার বিষয় হলো- একজন খেলোয়াড়ের জন্য আমাদের প্রচুর সময় নষ্ট হয়েছে। নেইমারের অভিনয়ে ম্যাচের অনেক সময় খেলা বন্ধ ছিল এবং সময় নষ্ট হয়। এই খেলাটা শক্তিশালী মানুষদের খেলা। ব্যক্তির খেলা। এই খেলায় নিজেকে শক্ত রাখতে হয়।কিন্তু এখানে এত অভিনয় অবাক করার মত বিষয়।’
নেইমারের প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়ার পাশাপাশি ম্যাচের রেফারিদেরও এক হাত নিলেন ওসোরিও। তিনি বলেন, ‘ম্যাচে অন-ফিল্ড রেফারি ভিডিও রেফারি থাকার পর একজন খেলোয়াড় কিভাবে এত সময় নষ্ট করতে পারে? তারা কি এসব দেখেনি, না-কি তারা দেখেও না দেখার ভান করেছে। এগুলো আমার বোধগম্য নয়।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘রেফারি পুরোপুরি ব্রাজিলের হয়ে খেললো। আমার তো খেলা দেখে মনে হচ্ছিল, ব্রাজিলের ফরোয়ার্ডরা সারাক্ষণ অপেক্ষা করেছে যে কখন আমাদের ফুটবলারের সঙ্গে সামান্য সংঘর্ষ হবে। আর রেফারি মুহূর্তে মুহূর্তে ফাউল ডাকবে।’