পাঁচবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিলের বিপক্ষে শেষ ষোলোর লড়াইয়ে সোমবার মাঠে নামবে মেক্সিকো। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানী ও রানার্স-আপ আর্জেন্টিনার বিদায়ে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট ব্রাজিলকে পরাজিত করে নকআউট পর্বের খরা কাটানোর ভালো সুযোগ মেক্সিকোর। এমনটাই মনে করেন মেক্সিকান অধিনায়ক ও মিডফিল্ডার আন্দ্রেস গুয়ারড্রাডো।
ব্রাজিলের বিপক্ষে জিততে পারলে অন্তত ২৪ বছর পরে মেক্সিকানরা নিজেদের কিছুটা হলেও এগিয়ে নিয়ে যাবার আত্মবিশ্বাস পাবে। আগের ৬টি বিশ্বকাপেই এল ত্রিরা দ্বিতীয় রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল। বিশেষ করে চার বছর আগে নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ শেষের দুই মিনিট আগ পর্যন্ত এগিয়ে থেকেও ইনজুরি টাইমে ২-১ গোলের পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়ার স্মৃতি মেক্সিকো এখনো ভুলতে পারেনি।
এর আগে ১৯৭০ ও ১৯৮৬ সালে ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার সুযোগ পেয়েছিল মেক্সিকো, যা এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের তাদের সেরা পারফরমেন্স। তবে ১৯৭০-এর আসরে ইতালির কাছে ৪-১ ও ৮৬’ সালে পশ্চিম জার্মানীর সাথে নির্ধারিত সময় গোলশূন্য ড্র করেই পেনাল্টি শ্যুট আউটে ৪-১ গোলের ব্যবধানে পরাজিত হয়ে শেষ আট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল।
বিপরীতে ব্রাজিল শেষ ছয় আসরে অন্তত শেষ আট পর্যন্ত খেলেছে। এর মধ্যে তিনটির ফাইনালে পৌঁছে দুটির শিরোপা জয় করেছে। রাশিয়ায় ষষ্ঠবারের মত শিরোপা জয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর আগে থেকেই তিতের দলকে সুস্পষ্ট ফেবারিট হিসেবে মানা হচ্ছে। কিন্তু সেলেসাওদের বিপক্ষে নিজেদের প্রত্যাশাকে প্রাপ্তিতে রূপ দেবার স্বপ্নে বিভোর মেক্সিকানরা।
জয় ভিন্ন অন্য কোন কিছুই ভাবছে না পুরো দল, এমন আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়ে গুয়ারড্রাডো বলেছেন, এখানে আমরা কোন ধরনের কারণ এখানে দেখাতে চাচ্ছি না। আমরা যদি জিততে পারি তবে সবকিছুই আমাদের পক্ষে আসবে। আমরা যদি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ১৬’তে সুইজারল্যান্ডের মোকাবেলা করতাম, (সুইসদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি) তাদেরকে হারালে মানুষ ততটা উচ্ছসিত হতো না, যতটা ব্রাজিলকে হারালে হবে। সে কারণেই ব্রাজিলের বিপক্ষে একেবারে সঠিক সময়ে আমরা মাঠে নামছি।
তিনি আরও বলেন, তারা পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন, ম্যাচটা দারুন উপভোগ্য হবে। ফুটবল আমাদের সামনে যে সুযোগ এনে দিয়েছে তা নিয়ে আমরা দারুন উত্তেজিত। এর থেকে ভালো সুযোগ আর হতে পারে না।
ম্যাচ পূবর্বতী সংবাদ সম্মেলনে গুয়ারড্রাডো বিশেষ করে ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার নেইমারকে সামনে নিয়ে এসেছেন। তার মতে নেইমার নিজের থেকেই ফাউলকে কাছে টেনে আনে ও মাঠে পড়ে যান। তবে ব্রাজিলের রিয়াল মাদ্রিদ তারকা কাসেমিরো বলেছেন সব ধরনের চাপ ও সমালোচনাকে উপেক্ষা করেই নেইমার মাঠে নামেন।
তারকা এ মিডফিল্ডার বলেন, ‘নেইমারই ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দেন। প্রথম ম্যাচে সবাই যেখানে নিয়মমাফিক ম্যাচ খেলেছে সেখানে নেইমার বারবার নিজেদের প্রমাণ করেছেন। সার্বিয়ার বিপক্ষেও সে দারুন পারফর্ম করেছে। সে জানে কিভাবে চাপের মধ্যেও স্বাভাবিক ভাবে খেলতে হয়। সে কারণেই সে নেইমার, ব্রাজিলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। দীর্ঘ সময় ধরে সে সুপারস্টার থাকবে।
এর আগে ব্রাজিল ও মেক্সিকো একে অপরের বিপক্ষে ৪০ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে ব্রাজিল জিতেছে ২৩ বার ও মেক্সিকো ১০ বার। এর আগে বিশ্বকাপে ব্রাজিলের বিপক্ষে চারটি ম্যাচের একটিতেও জিততে পারেনি মেক্সিকো। ঐ চার ম্যাচে মেক্সিকানরা একটি গোলও করতে পারেনি। সর্বশেষ ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে যেতে পারেনি ব্রাজিল।
এ পর্যন্ত গত ১৪টি ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে সেলেসাওরা। ২০১৭ সালের জুনে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে তারা সর্বশেষ পরাজিত হয়েছিল (১-০)। বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ (৫৬) খেলার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও এখনো শিরোপা জিততে পারেনি মেক্সিকো।