পারলো না মেসি বাহিনী, কোটি ভক্তদের মন ভাঙলো আর্জেন্টিনা। নক আউট পর্বে প্রথম ম্যাচেই ফ্রান্সের কাছে ৪-৩ গোলে হেরে গিয়ে রাশিয় বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিলো আর্জেন্টিনা।
আর্জেন্টিনাকে বিদায় করে দিয়ে রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে উঠলো ১৯৯৮ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স। একই সঙ্গে বিশ্বকাপ আসরে এই প্রথমবারের মতো আর্জেন্টিনাকে হারালো ফ্রান্স।
ধুঁকতে ধুঁকতে শেষ ষোলো নিশ্চিত করে আর্জেন্টিনা। পক্ষান্তরে অনেকটা হাসতে হাসতে শেষ ষোলোতে ওঠে ফ্রান্স। তাই ফেভারিটের তকমাটা গায়ে মেখেছিল ফরাসিরাই। তবে বিশ্বকাপের অতীত রেকর্ড সাহস যোগাচ্ছিল লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনাকে। কারণ, বিশ্বকাপের আগের দুই দেখাতে জয় পেয়েছিল আর্জেন্টিনাই।
এসব সমীকারণ নিয়ে কাজানে মুখোমুখি হয় ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা। বল দখলের মাঝে ৮ মিনিটে ফ্রি-কিক পেয়ে যায় ফ্রান্স। স্ট্রাইকার আঁতোয়োন গ্রিজম্যানের ফ্রি-কিকটি আর্জেন্টিনার গোলবারের উপরের অংশে গিয়ে স্পর্শ করে।
স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপেকে নিজেদের বিপদ সীমানায় ফাউল করেন আর্জেন্টিনার ডিফেন্ডার মার্কোস রোহো। পেনাল্টি পেয়ে ম্যাচের ১৩ মিনিটে গ্রিজম্যান গোল করে দলকে (১-০) এগিয়ে দেন। কিন্তু লিড বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি ফরাসিরা। এরপর ২২ মিনিটে বল নিয়ে একক প্রচেষ্টায় ফ্রান্সের সীমানায় ঢুকে পড়েন মিডফিল্ডার এভার বানেগা। বলকে গোলমুখে শট নেন বানেগা। তার শট ফ্রান্সের এক ডিফেন্ডারের হাতে লাগলে নিশ্চিত পেনাল্টি পায় আর্জেন্টিনা। কিন্তু সেটি এড়িয়ে যান রেফারি।
এরপর বল দখলে নিয়ে আক্রমণ করার চেষ্টা করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু যথাযথ সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। তবে ৪১ মিনিটে প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে দুর্দান্ত এক শটে বলকে ফ্রান্সের জালে আশ্রয় দেন আর্জেন্টিনার মিডফিল্ডার এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া। তার দুর্দান্ত গোলে ম্যাচে ১-১ সমতা ফিরিয়ে আনে আর্জেন্টিনা।
প্রথমার্ধের শেষদিকে ম্যাচে সমতা আনতে পেরে আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে আর্জেন্টিনা। তাই প্রথমার্ধে ৬৪ শতাংশ বল দখলে রাখা আর্জেন্টিনা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই গোল আদায় করে নেয়। ৪৮ মিনিটে কর্নার থেকে বল পেয়ে ফ্রান্সের গোলমুখে দুর্বল শট নিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার অধিনায়ক মেসি। তার শট সতীর্থ ডিফেন্ডার গ্যাব্রিয়েল মার্সাডোর পায়ে লেগে ফ্রান্সের জালে প্রবেশ করে। ফলে ২-১ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
অবশ্য লিডটা বেশিক্ষণ ধরে রাখতে পারেনি আর্জেন্টিনা। ৫৭ মিনিটে প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে দূরপাল্লার শটে গোল করে ২-২ ব্যবধানে সমতা ফিরিয়ে আনেন ফ্রান্সের ডিফেন্ডার বেঞ্জামিন মেন্ডি। সমতা এনেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠে ফ্রান্স। ৪ মিনিটের ব্যবধানে দু’গোল আদায় করে নেয় তারা। আর্জেন্টিনার রক্ষণভাগের ভুলে দু’টি গোল আদায় করেন ফরাসি স্ট্রাইকার এমবাপে।
৬৪ মিনিটে আর্জেন্টিনার বিপদ সীমানায় জটলার মধ্যে বল পেয়ে বাঁ-পায়ের শটে আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক ফ্র্যাংকো আরমানিকে বোকা বানিয়ে গোলের স্বাদ নেন এমবাপে (৩-২)। চার মিনিট পর স্ট্রাইকার অলিভার গিরুদের পাস থেকে বল পেয়ে একক প্রচেষ্টায় আর্জেন্টিনার সীমানায় গিয়ে ডান-পায়ের শটে আবারও গোল করেন এমবাপে। ফলে ৪-২ গোলে এগিয়ে যায় ফ্রান্স। এই লিড নিয়ে নিশ্চিত ম্যাচ জয়ের স্বপ্ন দেখতে থাকে ফ্রান্স।
অন্যদিকে ম্যাচে ফেরার চেষ্টায় থাকে আর্জেন্টিনা। কিন্তু নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষেও ব্যবধান কমাতে পারেনি আর্জেন্টিনা। এরপর ইনজুরি সময়ের জন্য আরও ৪ মিনিট যোগ হয় ম্যাচে।
ওই ইনজুরি সময়ের তৃতীয় মিনিটে প্রায় মধ্যমাঠের কাছাকাছি থেকে হাওয়ায় ভাসিয়ে ফ্রান্সের বিপদ সীমানায় বল পাঠান মেসি। সেখানে মাথা ছুইয়ে গোল আদায় করে নেন স্ট্রাইকার সার্জিও আগুয়েরো। এতে ব্যবধান ৪-৩ করে আর্জেন্টিনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হারের স্বাদ নিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে মহয় দু’বারের চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে। পক্ষান্তরে প্রথম দল হিসেবে চলতি বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে ১৯৯৮ বিশ্বকাপ জয়ী ফ্রান্স।