রাশিয়া বিশ্বকাপ সময় যতই এগিয়ে আসছে টুর্নামেন্ট ঘিড়ে উত্তেজনা ততই বাড়ছে। বিশ্বের গণমাধ্যমগুলোও এখন বিশ্বকাপের সংবাদ প্রচারে একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতায় মত্ত হয়ে উঠেছে। তারই ধারাবাহিকতায় গোলডটকম বিশ্বকাপের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড়ের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে।
নিজ নিজ দেশের হয়ে বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত অংশ নেয়া সবচেয়ে কম বয়সী কয়েকজন খেলোয়াড়ের তথ্য এখানে উপস্থাপন করা হলো :
১. ক্রিস উড (নিউজিল্যান্ড, ১৮ বছর ৬ মাস ৮ দিন) :
ক্রিস উডকে নিয়ে নিউজিল্যান্ড ফুটবল দীর্ঘদিন ধরেই বেশ আশাবাদী ছিল। ২০০৭ সালে ফিফা অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দেবার পরে উডের সিনিয়র দলে খেলাটা সময়ের ব্যপার ছিল। অবশেষে ২০০৯ সালে কনফেডারেশন্স কাপকে সামনে রেখে প্রথমবারের মত জাতীয় দলে ডাক পান। ২০১০ সালে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পান। এছাড়া ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে উড বার্নালির হয়ে খেলেন তিনি।
২. মাইকেল ওয়েন (ইংল্যান্ড, ১৮ বছর ৬ মাস ১ দিন) :
ইংলিশ ফুটবলের এক সময়ের গোল্ডেন বয় মাইকেল ওয়েন দেশের হয়ে তিনটি বিশ্বকাপে প্রতিনিধিত্ব করেছেন। আর প্রতিটি আসরেই গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ১৯৯৭ সালে ফিফা ইয়ুথ চ্যাম্পিয়নশীপে ইংল্যান্ডের অনুর্ধ্ব-১৭ দলের হয়ে ওয়েন চার ম্যাচে তিন গোল করেছেন। আর এ পারফরমেন্সের পরেই লিভারপুলে এই তরুণের মাত্র ১৮ বছর বয়সে ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের জার্সি গায়ে পড়ার সুযোগ হয়।
ইংল্যান্ডের হয়ে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের দলে জায়গা করে নেন। তিউনিশিয়ার বিপক্ষে থ্রি লায়ন্সদের হয়ে ২-০ গোলের জয়ের ম্যাচটিতে টেডি শেরিংহ্যামের স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন ওয়েন।
৩. আসিমিও তোরে (টোগো, ১৮ বছর ৫ মাস ১২ দিন) :
বায়ার লিভারকুসেন থেকে ডিগ্রীপ্রাপ্ত তোরে ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে টোগোর জাতীয় দলের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করার আগে দুইবার জার্মানী অনুর্ধ্ব-১৮ দলের হয়ে খেলেছেন। বিশ্বকাপের ঐ আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেবার আগে টোগোর হয়ে তিনটি গ্রুপ ম্যাচের দুটিতেই খেলেছেন তোরে।
৪. ভিনসেন্ট আবুবাকার (ক্যামেরুন, ১৮ বছর ৪ মাস ২৮ দিন) :
ক্যামেরুনের হয়ে ৬৫টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন এই পোর্তো ফরোয়ার্ড। কিন্তু ২০১০ সালের বিশ্বকাপে মাত্র ১৮ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার প্রথম সাফল্য সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ডেনমার্কের বিপক্ষে পিয়েরে ওয়েবোর বদলী হিসেবে ঐ আসরে তার অভিষেক হয়।
৫. বারটাস ডি হার্ডার (নেদারল্যান্ড, ১৮ বছর ৪ মাস ২ দিন) :
নেদারল্যান্ডের জাতীয় দলের হয়ে বারটাস ডি হার্ডার মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন। ১৯৩৮ সালে ফ্রান্সের বিপক্ষে তিনি ক্যারিয়ারে বিশ্বকাপের একমাত্র ম্যাচটি খেলেছেন। চেকোস্লোভাকিয়ার বিপক্ষে মাত্র ১৮ বছর বয়সে ডি হার্ডারের বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল। ঐ আসরে নেদারল্যান্ড শেষ ১৬ থেকে বিদায় নেয়।
৬. ক্রিস্টিয়ান এরিকসেন (ডেনমার্ক, ১৮ বছর ৪ মাস) :
২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপ ক্রিস্টিয়ান এরিকসেনের অভিষেক হয়। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ডেনমার্কের ২-০ গোলের গ্রুপ পর্বের পরাজিত ম্যাচটিতে থমাস কাহলেনবার্গের বদলি হিসেবে ম্যাচের শেষ দিকে মাঠে নেমেছিলেন এরিকসেন। ৮ বছর পরে দেশের হয়ে ১০০টি ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এরিকসেন ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপে ডেনমার্কের অন্যতম নির্ভরযোগ্য খেলোয়াড় হিসেবে পেরু, অস্ট্রেলিয়া ও ফ্রান্সের বিপক্ষে নিজেকে প্রমানের অপেক্ষায় রয়েছেন।
৭. ম্যানুয়েল রোসাস (মেক্সিকো, ১৮ বছর ২ মাস ২৬ দিন) :
বিশ্বকাপের ইতিহাসে পেনাল্টি থেকে সর্বপ্রথম গোল করার রেকর্ড রয়েছে ম্যানুয়েল রোসাসের। ১৯৩০ সালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে মেক্সিকান এ স্ট্রাইকার স্পট কিক থেকে ঐ গোল করেছিলেন। একইসাথে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপে গোল করার কৃতিত্বও রোসাসের। ১৮ বছর ২ মাস ২৬ দিন বয়সে ফ্রান্সের বিপক্ষে টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে তার অভিষেক হয়েছিল।
৮. কারভালহো লিয়েটে (ব্রাজিল, ১৮ বছর ২৫ দিন) :
১৯৩০ সালের বিশ্বকাপে বলিভিয়া ও ইগোস্লোভিয়ার সাথে গ্রুপ পর্বে লড়াইয়ে নেমেছিল ব্রাজিল। গ্রুপের শীর্ষ দল হিসেবে তাদেরকে বিবেচনা করা হলেও শেষ পর্যন্ত মাত্র দুই ম্যাচ খেলেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়। বলিভিয়ার বিপক্ষে কারভালহো লিয়েটের টিনএজ বয়সে অভিষেক হয়। ২০০৪ সালে ৯২ বছর বয়সে ১৯৩০ সালের বিশ্বকাপ দলের একমাত্র সদস্য হিসেবে তিনি বেঁচে ছিলেন।
৯. রিগোবার্ট সং (ক্যামেরুন, ১৭ বছর ১১ মাস ১৮ দিন) :
আন্তর্জাতিক ফুটবলের সাথে রিগোবার্ট সংয়ের সম্পর্কটা বেশ দীর্ঘ। ১৯৯৪, ১৯৯৮, ২০০২ ও ২০১০ সালে চারটি বিশ্বকাপে তিনি ক্যামেরুনের প্রতিনিধিত্ব করেছেন। সর্বপ্রথম মাত্র ১৭ বছর বয়সে তার বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল। ১৯৯৪ সালের ১৯ জুন সুইডেনের সাথে ২-২ গোলের ড্র ম্যাচটিতে সংয়ের বিশ্বকাপ অভিষেক হয়। পরের ম্যাচেই অবশ্য ব্রাজিলের বিপক্ষে তাকে লাল কার্ড পেয়ে মাঠ ত্যাগ করতে হয়েছিল।
১০. বার্থোলোমেও ওগবেচে (নাইজেরিয়া, ১৭ বছর ৮ মাস ১ দিন) :
২০০২ সালের জাপান ও কোরিয়া বিশ্বকাপ নাইজেরিয়ার জন্য হতাশাজনক হলেও বার্থোলোমে ওবেচের জন্য সারা জীবন স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে প্যারিস সেইন্ট-জার্মেইর এই তরুণ তুর্কি গ্রুপ পর্বে সুপার ঈগলসের দুটি ম্যাচে খেলেছিলেন। জাতীয় দলের হয়ে ১১টি ম্যাচ খেলার পর মাত্র বিশ্বকাপের মাত্র দুই বছররেই তিনি আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন।
১১. পেলে (ব্রাজিল, ১৭ বছর ৭ মাস ২৩ দিন) :
ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তী পেলে প্রথম বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ১৯৫৮ সালের সুইডেনে যখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৭ বছর ৭ মাস ২৩ দিন। সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে ২-০ গোলের জয়ের ম্যাচে তার বিশ্বকাপ অভিষেক হয়। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ঐ সময় সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন পেলে। একই আসরে ফ্রান্সের বিপক্ষে ৫-২ গোলের জয়ের ম্যাচে পেলে হ্যাটট্রিক করেছিলেন। সেলেসাওদের হয়ে ফাইনালে শিরোপা জয়ের পথে পেলে দুই গোল করেছিলেন।
১২. সালোমোস ওলেম্বে (ক্যামেরুন, ১৭ বছর ৬ মাস ৩ তিন) :
লিডস ও উইগানের সাবেক মিডফিল্ডার সালোমোন ওলেম্বের ১৮তম জন্মদিনের ৬ মাস আগে বিশ্বকাপ অভিষেক হয়েছিল। ১৯৯৮ সালে অস্ট্রিয়ার বিপক্ষে তিনি বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন, ম্যাচটিতে ক্যামেরুন ১-১ গোলে ড্র করে। ২০০৭ সালের অবসরের আগ পর্যন্ত ক্যামেরুনের জার্সি গায়ে ৬৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন ওলেম্বে।
১৩. ফেমি ওপাবুনমি (নাইজেরিয়া, ১৭ বছর ৩ মাস ৯ দিন) :
নাইজেরিয়ার হয়ে ফেমি ওপাবুনমির আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার খুব বেশি দীর্ঘ ছিল না। কিন্তু ২০০২ সালে এশিয়া বিশ্বকাপে তিনি দলের সাথে ছিলেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচে তিনি নাইজেরিয়ার হয়ে মাঠে নেমেছিলেন। ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়। ইনজুরির কারণে ২০০৬ সালে সব ধরনের ফুটবল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন এ উইঙ্গার। সুপার ঈগলসদের হয়ে তিনি মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছেন।
১৪. স্যামুয়েল ইতো (ক্যামেরুন, ১৭ বছর ৩ মাস ৭ দিন) :
১৯৯৭ সালে ১৬তম জন্মদিনের মাত্র একদিন আগে ক্যামেরুনের জার্সি গায়ে স্যামুয়েল ইতোর আন্তর্জাতিক অভিষেক হয়েছিল। আর এর ঠিক এক বছর পরে ১৯৯৮ সালে ফ্রান্স বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। মাত্র ১৭ বছর বয়সে ইতো ইতালির বিপক্ষে বিশ্বকাপের ম্যাচ খেলতে মাঠে নামেন। ম্যাচটিতে ক্যামেরুন ৩-০ গোলে পরাজিত হয়েছিল।
বার্সেলোনা, ইন্টার মিলান ও চেলসির সাবেক এই ফরোয়ার্ড ক্যামেরুনের হয়ে ১১৮টি ম্যাচ খেলে অবসর নিয়েছেন। দেশের হয়ে এটি আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে কোন খেলোয়াড়ের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ম্যাচ। এ তালিকায় সর্বাগ্রে রয়েছে রিগোবার্ট সং।
১৫. নরমান হোয়াইটসাইড (নর্দান আয়ারল্যান্ড, ১৭ বছর ১ মাস ১০ দিন) :
১৯৮২ সালে স্পেনের মাটিতে ইয়োগোস্লোভিয়ার বিপক্ষে খেলতে নেমে বিশ্বকাপে সবচেয়ে কম বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণে পেলের রেকর্ড ভাঙেন নরমান হোয়াইটসাইড। ম্যাচটি গোলশূণ্য ড্র হয়েছিল। নর্দান আয়ারল্যান্ড এরপর হন্ডুরাসের সাথে ড্র করার পরে স্বাগতিক স্পেনকে পরাজিত করে। কিন্তু এরপর নক আউপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই পরাজিত হয়ে বিদায় নেয়। যদিও হোয়াইটসাইড জাতীয় দলের হয়ে পাঁচটি ম্যাচেই অংশ নিয়েছিলেন।