আনিসুর রহমান জিকো; বাংলাদেশ ফুটবল দলের গোলরক্ষক। জিকো না থাকলে কী হতো, বাংলাদেশকে কয়টা গোল হজম করতে হতো? এমন প্রশ্ন প্রায়ই শোনা যায়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুটবল দলের খেলা হলেই ত্রাতা হয়ে দাঁড়ান তিনি। সর্বশেষ শক্তিশালী বাহরাইনের বিপক্ষেও সেটির প্রমাণ দিলেন জিকো।
বাংলাদেশ যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই মাঠে নামুক না কেন, ম্যাচ শেষে সবার আলোচনার কেন্দ্র হয়ে দাঁড়ান জিকো। এবারও তার ব্যতিক্রম হলো না। শক্তিশালী বাহরাইনের বিপক্ষে জিকোর বিরত্বেই মাত্র ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরে গেছে বাংলাদেশ।
এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে বাহরাইনের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে ইন্দোনেশিয়ার বিপক্ষে ফিফা প্রীতি ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। ড্র হওয়া ওই ম্যাচে বাংলাদেশ অন্তত ২/৩ গোলের ব্যবধানে হেরে যেত। তবে যথারীতি ত্রাতা হয়ে গোল পোস্টে দাঁড়িয়ে ছিলেন জিকো।
মালয়েশিয়ায় এশিয়ান কাপ-২০২৩ বাছাইপর্বের প্রথম ম্যাচে বাহরাইনের বিপক্ষে ২-০ গোলের ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ড দেখে বাংলাদেশ খুব ভালো লড়াই করেছে বিষয়টি তা নয়। মাঠে লড়াই করতে না পারা বাংলাদেশের হয়ে একাই লড়েছেন গোলরক্ষক জিকো।
র্যাংকিং কিংবা শারীরিক গঠন; মাঠের ফুটবল সবকিছুতেই বাংলাদেশের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে বাহরাইন। শক্তিশালী ফুটবল দলের বিপক্ষে বাংলাদেশকে রক্ষণভাগকে বাড়তি পরীক্ষা দিতে হবে তা জানাই ছিল।
পরীক্ষায় লেটার মার্কস পেয়ে পাশ করেছেন জিকো। ম্যাচের বয়স তখন সবে দশ মিনিট, বাহরাইনের কর্নার কিক থেকে উড়ে আসা ক্রসে ডিফেন্ডার মোহাম্মদ বেনাদির দুর্দান্ত হেড ফিরিয়ে দিয়ে যাত্রা শুরু করেন গোলরক্ষক জিকো।
১০ থেকে ২২, -এ ১৪ মিনিটে অন্তত তিনবার বাংলাদেশকে গোল হজম করার থেকে বাঁচান ২৫ বছর বয়সী গোলরক্ষক জিকো। ২১ মিনিটে দারুণ দক্ষতায় আরও একবার বাহরাইনকে হতাশ করেন জিকো।
ডি বক্সের সামনে ফ্রি কিক পায় বাহরাইন। কামাইল হাসানের দারুণ ফ্রি কিক গ্লাভস বন্দি করেন জিকো। কিছুক্ষণ পর ডি বক্সের বাইরে থেকে আবারও জোড়ালো শট নেন বাহরাইন ফুটবলার আব্দুল্লাহ হারাম। এবারও লাল-সবুজের ত্রাতা সেই জিকো।
ম্যাচের ৩৪তম মিনিটে প্রথমবার পরাস্ত হন জিকো। আলি হারামের দারুণ হেডে এগিয়ে যায় বাহরাইন। এবার আর জিকোর কিছুই করার ছিল না। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার তিন মিনিট আগে আবারও গোল হজম করে বাংলাদেশ।
বাম পাস থেকে আসা ক্রস ক্লিয়ার করতে গিয়ে প্রতিপক্ষের সামনে বল ফেলেন বাংলাদেশের ডিফেন্ডাররা। জটলার মধ্য থেকে কোনা দিয়ে বল জালে পাঠান কোমাইল আল আসাদ। তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছু করার ছিল না জিকোর।
৯০ মিনিটে জিকো মাত্র দু’বারই পরাস্ত হয়েছেন। নির্ধারিত সময়ের মাঝে ৯বার গোল থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশর গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো। সময়গুলোতে জিকো না থাকলে গোলের সংখ্যা ঠিক কতগুলো তা বলা মশকিল।
দ্বিতীয়ার্ধে তুলনামূলক বলের দখল রাখতে পারায় বাংলাদেশ শিবিরে আক্রমণ একটু কমই হয়েছে। তবে সুযোগ পেলেই বাংলাদেশের গোলপোস্টে হামলে পড়েছেন বাহরাইন ফুটবলাররা। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে বাংলাদেশকে আরেকবার বাঁচান জিকো।
বাহরাইনের বিপক্ষে দুই গোলে হারলো বাংলাদেশ
বাংলাদেশের পাতা অফসাইড ফাঁদ ভেঙে জিকোকে একা পেয়ে যান বাহরাইনের আব্দুল্লাহ ইউসুফ হেলাল। তবে জিকোকে টপকাতে পারেননি তিনি। তার নেওয়া শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ঠেকিয়ে দেন লাল-সবুজের গোলপোস্টের অতন্দ্র প্রহরী জিকো।
নির্ধারিত সময় শেষে অতিরিক্ত সময়েও প্রতিপক্ষের আক্রমণ সামলিয়েছেন জিকো। সতীর্থর ব্যাক পাসে প্রায় বল পেয়ে গেছিল বাহরাইনের ফুটবলার। সময় মতো স্লাইড করে আরও একবার বাংলাদেশকে বিপদমুক্ত করেন ২৫ বছর বয়সী এ গোলরক্ষক।
পুরো ম্যাচেই এমন অসাধারণ গোলকিপিংয়ের পরও মুখ কালো করেই মাঠ ছাড়তে হয়েছে জিকোকে। নিজে ভালো খেললেও দল হেরেছে দুই গোলের ব্যবধানে। অবশ্য আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেকের পর থেকে এমন দৃশ্য দেখেই অভ্যস্ত হয়ে গেছেনে জিকো।
ক্যারিয়ারে এমন একাধিক ম্যাচ খেলেছেন, যেখানে নিজে সবার প্রশংসা কুড়ালেও দল মাঠ ছেড়েছে পরাজয় নিয়েই। ফলে বাকিদের তুলনায় জিকোর একটু কমই অবাক হওয়ার কথা!
১৯৯৭ সালে কক্সবাজারে জন্ম নেওয়া জিকো বাংলাদেশের হয়ে প্রথম মাঠে নেমেছেন ২০২০ সালের নভেম্বরে। অভিষেক ম্যাচে নেপালের বিপক্ষে তার পারফর্মেন্স ছিল চোখে পড়ার মতো। এখন পর্যন্ত লাল-সবুজ জার্সি গায়ে ১৮টি ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই গোলপোস্টে জিকোতেই দলের আস্থা।
এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের দ্বিতীয় ম্যাচে ১১ জুন (শনিবার) তুর্কেমিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। তুর্কিদের বিপক্ষেও এমন জিকোকেই প্রত্যাশা করবে বাংলাদেশ সমর্থকরা।
স্পোর্টসমেইল২৪/এসকেডি/আরএস