লড়াইটা ছিল দুই মহাদেশের দুই শিরোপধারীর। তাতে কোনো দলকেই পিছিয়ে রাখার কারণ ছিল না। কোপা আমেরিকা জয়ী আর্জেন্টিনা ছুটছে অদম্য গতিতে। অন্যদিকে, লন্ডনের ওয়েম্বলিতেই সর্বশেষ শিরোপা জিতেছিল ইতালি। জমজমাট এক ম্যাচের প্রত্যাশা করেছিল সবাই। তবে তা হলো না। এক চেটিয়া খেলে ইতালিকে ৩-০ গোলে উড়িয়ে আলোচিত ফাইনালিসিমার ট্রফি জিতে নিলো আর্জেন্টিনা।
বাংলাদেশ সময় বুধবার (১ জুন) দিবাগত রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ম্যাচের শুরু থেকেই দাপট দেখাতে থাকে আর্জেন্টিনা। তবে ইতালিও থেমে থাকেনি। খানিক বাদেই গতি, আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ জমিয়ে তুলে তারা। ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগটি পায় আর্জেন্টিনা।
ম্যাচের ২৫তম মিনিটে লিওনেল মেসির গোলবার লক্ষ্য করে শট নিলেও হতাশ হতে হয়। তবে ২৮তম মিনিটেই নিজের আসল ঝলকটা দেখান মেসি। এক সতীর্থের পাস ধরে বাঁ দিক দিয়ে বক্সে ঢুকে খানিকটা এগিয়ে গোলমুখে বল বাড়ান তিনি। পা ছুঁইয়ে দলকে এগিয়ে নেন লাউতারো মার্টিনেজ।
এরপর কয়েকবার আক্রমণ করে গেলেও গোলমুখে বল রাখতে পারেনি কোনো দলই। তখন মনে হচ্ছিলো এক গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যাবে আর্জেন্টিনা। কিন্তু প্রথমার্ধের যোগ করা সময়েই আরেকবার খেল দেখায় তারা। এবার গোলদাতা কোপার শিরোপা জয়ের নায়ক অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া।
মাঝমাঠ থেকে বল নিয়ে খানিক এগিয়ে গিয়ে কোনাকুনি থ্রু বল বাড়ান লাউতারো মার্টিনেস। সেই বল ধরে ক্ষিপ্র গতিতে বক্সে ঢুকে যান ডি মারিয়া। বাকিটা কাজটা সারেন কোপা আমেরিকার ফাইনালের স্টাইলে। চিপ শটে গোলরক্ষকের ওপর দিয়ে জাল খুঁজে নেন আর্জেন্টিনার অন্যতম ভরসা এই মিডফিল্ডার।
বিরতির পর আর্জেন্টিনার জন্য দেয়াল হয়ে দাঁড়ান জানলুইজি দোন্নারুম্মা। ডি মারিয়া কিংবা মেসির একের পর এক আক্রমণ প্রতিহত করতে থাকেন ইতালিয়ান গোলরক্ষক। এর মধ্যে ৬৯ মিনিটে মেসিকে নিশ্চিত গোল থেকে বঞ্চিত করেন দোন্নারুম্মা। সাতবারের ব্যালন ডি’অর জয়ীর জোরালো শট ডানদিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক।
নির্ধারিত সময শেষে যোগ করা সময়ের চতুর্থ মিনিটে গিয়ে অবশেষে তৃতীয় গোলের দেখা পায় আর্জেন্টিনা। মাঝমাঠ থেকে দারুণ গতিতে আক্রমণে উঠে ডি-বক্সের ঠিক বাইরে বলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেও পরক্ষণে উঠেই দিবালাকে বল বাড়ান মেসি। কোনাকুনি শটে বল জালে পাঠান দিবালা।
নির্ধারিত সময়ের বাশি বাজতেই আনন্দ উল্লাসে ফেটে পড়ে আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়রা। এ নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালিসিমার ট্রফি জিতলো আলবিসেলেস্তারা। সবশেষ ১৯৯৩ সালে ডিয়েগো ম্যারাডোনার হাত ধরে এই শিরোপা ঘরে তুলেছিল আকাশী-সাদারা।
এই জয়ে টানা ৩২ ম্যাচ অপরাজিত রইলো আর্জেন্টিনা। ২০১৯ সালের জুলাই থেকে আর কোনো ম্যাচ হারেনি লিওনেল স্কোলানির দল। এ নিয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ অপরাজেয় থাকার রেকর্ড গড়লো আর্জেন্টিনা। ১৯৯১-৯৩ সালে সর্বোচ্চ ৩১ ম্যাচ অপরাজিত ছিল তারা।
ঐদিকে এই নিয়ে ১৬ বার মুখোমুখি হলো ইতালি ও আর্জেন্টিনা। দুই দলেরই জয় ৬ বার করে, বাকি ৪ ম্যাচ ড্র। প্রতিযোগিতামূলক ফুটবলে তাদের সবশেষ দেখা হয়েছিল ১৯৯০ বিশ্বকাপ সেমি-ফাইনালে। সেবার ১-১ ড্রয়ের পর টাইব্রেকারে জিতেছিল আর্জেন্টিনা।
স্পোর্টসমেইল২৪/এএইচবি