ম্যাচের পুরোটা সময়জুড়েই শুধুই লিভারপুলের আধিপত্য। লক্ষ্যে ৯বার শট নিয়ে জালে বল জড়াতে না পারার ব্যর্থতায় আরো একবার রিয়াল মাদ্রিদের কাছে হেরে শিরোপা বঞ্চিত লিভারপুল। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে রেকর্ড ১৪তম বারের মতো শিরোপা জিতলো রিয়াল মাদ্রিদ।
এর আগে নির্ধারিত সময়ে শুরু হয়নি রিয়াল মাদ্রিদ-লিভারপুল মহারণ। লিভারপুল সমর্থকদের অনেকেই মাঠে পৌঁছাতে না পারায় নির্ধারিত সময়ের ৩৬ মিনিট পর মাঠে গড়ায় ম্যাচটি।
শনিবার (২৮ মে) প্যারিসে ফাইনালের প্রথমার্ধটা ছিল শুধুই লিভারপুলময়। ম্যাচের প্রথম ২৭ মিনিটে গোলবারে পাঁচটি শট লক্ষ্যে রেখে রিয়াল মাদ্রিদকে চেপে ধরে অলরেডরা। এরপরেই নিজেদের গুছিয়ে নিয়ে খেলায় ফেরে রিয়াল মাদ্রিদ। এমনকি প্রথমার্ধে বিতর্কিত অফসাইডের কারণে গোল বাতিল না হলে এগিয়েও যেতে পারতো।
ম্যাচের ১৫তম মিনিটে বড় বাঁচা বেঁচে যায় রিয়াল মাদ্রিদ। অ্যালেকজান্ডার অ্যারনল্ডের কাছ থেকে পাওয়া বল রিয়ালের জালে প্রায় ঢুকিয়েই দিয়েছিলেন সালাহ। ঢাল হয়ে থাকা গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়ার দারুণ ডাইভে বেঁচে যায় রিয়াল। এর দুই মিনিট পর সালাহ’র নেওয়া আরেকটি শট আটকিয়ে আবারো ত্রাণকর্তা কোর্তোয়া।
২১তম মিনিটে লিভারপুলকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন স্ট্রাইকার সাদিও মানে। তার নেওয়া জোরালো শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে আটকে দেন থিবো কোর্তোয়া। ফিরতি শট থেকে অলরেডদের গোল করার সুযোগ থাকলেও এর আগেই বল নিজের কব্জায় নিয়ে নেন কোর্তোয়া। ম্যাচের ৩৫তম মিনিটে আবারো লিভারপুলে চেষ্টা, এবারও রক্ষণদূর্গ ভাঙতে পারেননি মানে।
টানা পাঁচ আক্রমণ হজমের পর ম্যাচে ফেরে রিয়াল মাদ্রিদ। ৪২তম মিনিটে লিভারপুলের ডি বক্সে তৈরি হওয়া জটলা থেকে গোল করেন করিম বেনজেমা। তবে অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। তিন মিনিট সময় পর্যবেক্ষণের পর ভিএআর রেফারিও জানিয়ে দেন অফসাইড। যদিও এই নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা বিতর্ক। শেষ পর্যন্ত ম্যাচে গোলশূন্য সমতায় বিরতিতে যায় দু’দল।
বিরতি শেষে ফিরে রিয়াল মাদ্রিদ পুরোনো ছন্দে নিজেদের খুঁজে নেয়। বিরতির আগে মাত্র এক শট নেওয়া লস ব্ল্যাঙ্কোসরা মাঠে ফিরেই অলরেডদের উপর ছড়ি ঘোরাতে শুরু করে। ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে গোল করে রিয়াল মাদ্রিদকে এগিয়ে নেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র। এরপরেই আবারও শুরু হয় লিভারপুলের আধিপত্য।
গোল হজম করেই কলম্বিয়ান তারকা লুইস দিয়াজকে বদলি করে ডিয়েগো জোতাকে মাঠে নামান লিভারপুল বস ইয়ুর্গেন ক্লপ। ম্যাচের ১৫ মিনিট দারুণ খেলার পর থেকেই যেন হয়ে উঠেছিলেন নিজের ছায়া। তাই তাকে মাঠ থেকে তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কোচ ক্লপ।
খেলোয়াড় বদলের করেই রিয়ালের রক্ষণে একের পর এক আধিপত্যের ইঙ্গিত দিচ্ছিলো লিভারপুল। ম্যাচের ৮২তম মিনিটে সুযোগও এসেছি। রিয়াল গোলরক্ষক কোর্তোয়াকে একা পেয়েও গোল করতে ব্যর্থ হয়েছিলেন সালাহ।
এরপর কার্যত আর কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারেনি লিভারপুল। পুরো ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করার পরও ফিনিশিংয়ের অভাবে ভুগেছে অলরেডরা। এতেই হাতছাড়া হলো ইউরোপ সেরার মুকুট।
পুরো ম্যাচে ৫৪শতাংশ সময় বল নিজেদের দখলে রেখেছিল লিভারপুল। এই সময়ে তারা ২৪বার শট নিয়েও থিবো কোর্তোয়াকে পরাস্ত করতে পারেননি। অপরদিকে ৪৬ শতাংশ বল নিজেদের দখলে রেখে মাত্র ৪ টি শট নিয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। ৪ শটের দুইটি থেকেই গোল করেছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। বিতর্কিত ভিএআরে গোল বাতিল না হলে হয়তো জয়ের ব্যবধান হতে পারতো ২-০।
১৭বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে খেলতে নেমে রেকর্ড ১৪বার এই টুর্নামেন্ট জিতলো রিয়াল মাদ্রিদ। যে সময় টুর্নামেন্টের নাম ইউরোপিয়ান কাপ ছিল সেই সময়ে ৯ বার ফাইনাল খেলে ছয়বার শিরোপা জিতেছিল দলটি। চ্যাম্পিয়নস লিগ নামকরণের পর থেকে ৮ বার ফাইনাল খেলে প্রত্যেকবারই শিরোপা নিজেদের ডেরায় তুলে নিলো রিয়াল মাদ্রিদ।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর