কয়েক মৌসুম ধরেই কিলিয়ান এমবাপেকে নিজেদের দলে ভেড়াতে উঠে পড়ে লেগেছিল স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। তাকে পেতে বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করতেও রাজি ছিল দলটি। রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দিবেন দিবেন করেও শেষ পর্যন্ত পিএসজির ডেরাতেই নিজেকে স্থায়ী করেছেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার। প্যারিসেই নিজেকে স্থায়ী করার আগে তৈরি করেছেন হাজারও নাটক।
২০১৭ সালে ফরাসি ক্লাব মোনাকো থেকে পিএসজিতে নাম লেখান কিলিয়ান এমবাপে। সেখানে থাকাকালীন বেশ কয়েকবারই জানিয়েছিলেন তার স্বপ্নের ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদ। সুযোগ পেলে মাদ্রিদের জার্সি নিজের গায়ে জড়াতে চান। সেই সুযোগ তার কাছে ধরা দিলেও, স্প্যানিশ ক্লাবটিকে ‘না’ বলেছেন তিনি। উল্টো কথা দিয়ে, তা না রাখার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
মোনাকো থেকে পিএসজিতে যোগ দেওয়ার পর এমবাপের চুক্তি ছিল ২০২১-২২ পর্যন্ত। চুক্তির মেয়াদ শেষদিকে আসলেও কোনোভাবেই পিএসজির সাথে নতুন করে চুক্তি আগ্রহী ছিলেন না এমবাপে। ধারণা ছিল, হয়তো রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার জন্যই চুক্তি করতে অনাগ্রহী।
কিন্তু পিএসজির হয়ে মৌসুমের শেষ ম্যাচে নামার আগেই জানিয়ে দেন, আরো তিন বছর প্যারিসেই থাকবেন। অথচ, এর আগে রিয়ালের সাথেও চুক্তি প্রায় চূড়ান্ত করেই ফেলেছিলেন তিনি।
ইউরোপিয়ান ফুটবলের দল-বদল বিশেষজ্ঞদের মত, নিজের বেতন বাড়ানোর জন্যই রিয়াল এবং পিএসজি দু’দলের সাথেই সমানতালে কথা এগিয়ে নিচ্ছিলেন এমবাপে। শেষ পর্যন্ত তার ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে, নতুন চুক্তি অনুযায়ী পিএসজির পকেট থেকে তিন বছরে খসাবেন প্রায় ৭৫ কোটি ইউরো। এছাড়াও থাকছে ট্রফি জয়ের জন্য বিভিন্ন অঙ্কের বোনাস।
এমবাপের সাথে পিএসজির চুক্তির ঘোষণা আসার দিন কয়েক আগে তার মা জানিয়েছিলেন, রিয়াল এবং পিএসজি দুই ক্লাবের সাথেই আলোচনা চূড়ান্ত। এখন শুধু এমবাপের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষা। শেষ পর্যন্ত এমবাপে পিএসজিতেই থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বারবার আলোচনা করেও রিয়াল মাদ্রিদের যোগ না দেওয়া এমবাপেকে দলে ভেড়াতে কতটা আগ্রহী ছিল লস ব্ল্যাঙ্কোসরা, তা জানতে একটু পিছনে ফিরে তাকালেই হবে। দল-বদলে হাত খুলে খরচ করতে অভ্যস্ত রিয়াল এমবাপেকে দলে ভেড়াতে ১৭২ মিলিয়ন ইউরোর প্রস্তাব দিয়েছিল। ২০২১-২২ মৌসুমের আগে রিয়ালের দেওয়া সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয় পিএসজি।
তখন ধারণা করা হচ্ছিলো, মৌসুম শেষে ফ্রি এজেন্ট হিসেবে লস ব্ল্যাঙ্কোসদের ডেরায় যোগ দিবেন তিনি। এমনকি মৌসুমের মাঝপথেই রিয়ালের সাথে চুক্তির বিষয়ে কথা-বার্তাও শুরু করে দিয়েছিলেন তিনি। প্রি কন্টাক্ট অ্যাগ্রিমেন্টও করেছিলেন বলে ধারণা করা হয়। কিন্তু এই তথ্যের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিদায়ের পর ইডেন হ্যাজার্ডকে দলে ভিড়িয়ে নিজেদের স্ট্রাইকার সংকট কাটাতে চেয়েছিল রিয়াল মাদ্রিদ। স্প্যানিশ ক্লাবটির ডেরায় যোগ দিয়েই ইনজুরির সাথে সখ্যতা গড়ে তুলেছেন এই বেলজিয়ান। বেশিরভাগ সময়ই তাকে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে।
মূলত এ কারণে এমবাপেকে দলে ভেড়াতে সর্বোচ্চ চেষ্টাই করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। এখানে অবশ্য একটি অতিরিক্ত সুবিধা ছিল রিয়াল মাদ্রিদের জন্য। তা হলো, ব্যক্তিগতভাবে রিয়ালের অন্ধ ভক্ত ছিলেন এমবাপে। কিন্তু অন্ধ ভক্ত হয়েও পিএসজিতেই নিজের ক্যারিয়ার এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রিয়াল মাদ্রিদের সাথে কথা-বার্তা চূড়ান্ত করে পিএসজির সাথে চুক্তি মেয়াদ বাড়ানোয় নিজের প্রিয় ক্লাবে কখনোই খেলতে পারবেন না এমবাপে, এমনটাই গুঞ্জন ইউরোপিয়ান গণমাধ্যমের। ২০২৪-২৫ মৌসুমের পর রিয়াল মাদ্রিদের আসার চিন্তা ভাবনা থাকলেও তাকে আর দলে ভেড়াবে না স্প্যানিশ ক্লাবটি। এমনকি প্রতিপক্ষ হিসেবে রিয়ালে মাঠে খেলতে আসলে হয়তো তীব্র বুয়ের শিকার হতে পারেন।
রিয়ালকে মাঝে একবার সবুজ সংকেতও দিয়ে রেখেছিলেন এমবাপে। সেই সময়, চুক্তির বিষয়ে কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিলেও পিএসজির নতুন প্রস্তাবের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। এমনকি পিএসজির সামনে নানা ধরনের শর্ত জুড়ে দিয়েছিলেন।
এমবাপেকে ধরে রাখতে মরিয়া পিএসজি ফরাসি স্ট্রাইকারের সেইসব অদ্ভুত শর্তগুলোও মেনে নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেই শর্তগুলো যদি সত্যি হয়, তাহলে পিএসজিতে আর থাকছেন না ক্লাবটির কোচ মারিসিও পচেত্তিনো এবং ক্রীড়া পরিচালক লিওনার্দো। এমনকি, প্যারিসের ক্লাবটির স্পোর্টিং প্রজেক্টের মালিকানাতেও থাকছেন এমবাপে। ফরাসি এই স্ট্রাইকারকে ধরে রাখতে তার ইমেজ স্বত্বও তাকে দিয়ে দিয়েছে।
মাদ্রিদ যেমন রিয়ালকে পেতে মরিয়া ছিল, সেই রকম মরিয়া ছিল পিএসজিও। পাশাপাশি এমবাপেকে প্যারিস না ছাড়তে অনুরোধও করেছিলেন দেশটির রাষ্ট্রপতি ইম্যানুয়েল ম্যাকরন। শেষ পর্যন্ত তাদের কথা মেনে পিএসজিতেই থাকলেন।
পিএসজির হয়ে এখন পর্যন্ত ২১৭ ম্যাচে ১৭১ গোল করেছেন কিলিয়ান এমবাপে। এছাড়াও সতীর্থদের করিয়েছেন ৮৭ গোল।
স্পোর্টসমেইল২৪/পিপিআর